Read Time:6 Minute, 20 Second

মিয়ানমারে এক সামরিক অভ্যুত্থানে দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী। দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ও আরও কয়েকজন মন্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।

জরুরি অবস্থা জারি করে রাজধানী নেইপিদো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। প্রধান প্রধান শহরগুলোতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং কিছু টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এই ঘটনা এমন সময় ঘটছে, যখন মিয়ানমারে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নির্বাচনে সামরিক বাহিনী সমর্থিত দলের ভরাডুবি, সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের মেয়াদ ফুরিয়ে আসা, রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে নানা দর-কষাকষি ও দ্বন্দ্ব চলছিল সেনাবাহিনীর।

গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে।

সোমবার নবনির্বাচিত সংসদের প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী অধিবেশন স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। এই অধিবেশনে পরবর্তী সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে মূলত নির্বাচনের ফলকেই অনুমোদন দিত। তবে অভ্যুত্থানের কারণে সেটিও আর হচ্ছে না।

এর মধ্যে সাবেক এক জেনারেলকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। সাবেক জেনারেল উ মিন্ট শোয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি-এনএলডি নেতৃত্বাধীন সরকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

গতবারও এনএলডি ভূমিধস জয় পেলেও মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সু চি। সেনাবাহিনীর করা এক আইনে, স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় দেশটির শীর্ষ পদে বসতে পারেননি তিনি। ফলে তার জন্য আলাদা করে স্টেট কাউন্সিলর নামে একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল।

এটা অজানা নয় যে, সু চির দল ক্ষমতায় থাকলেও সমান্তরাল একটা সরকার চালান মিন অং। প্রায় ১০ বছর ধরে দেশটির সেনাপ্রধান তিনি। মিয়ানমারের অতীত ইতিহাস বলে, সেনাপ্রধান চাইলে যে কোনো সময় অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকারের পুরো ক্ষমতাই নিয়ে ফেলতে পারেন।

কিন্তু সেনাবাহিনীরই করা নতুন আইন অনুযায়ী, বয়স ৬৫ বছর হলে সেনাপ্রধানের পদ ছাড়তে হবে মিন অংকে। আর কয়েক মাস পর সেই বয়স তিনি ছুঁতে চলেছেন। নির্বাচনে সেনাসমর্থিত দল জিতলে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ ছিল তার। নির্বাচনে মানুষ সাই দিয়েছে সু চিকেই। এর মধ্য দিয়ে বোঝা গেল, নিরাপত্তাসহ রোহিঙ্গা ও অন্যান্য গোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নমূলক অভিযানের জন্য সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তা থাকলেও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ চায় না মানুষ।

বর্তমান পদে থাকতে আগ্রহী হলেও এর জন্য প্রয়োজন ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের সম্মতি। সেখানে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলেও শেষ অনুমোদন আসে প্রেসিডেন্ট থেকে। এখন নতুন সরকারের প্রেসিডেন্ট হবেন ক্ষমতাসীন এনএলডি থেকে, যার পেছনে থাকবেন সু চি। ফলে সেখানেও বাধার মুখে পড়ে গেলেন মিন অং।

দর-কষাকষিতেও কোনো সমাধান আসছিল না। ফলে যে কোনোভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এই অভ্যুত্থান ছাড়া পথ খোলা ছিল না মিন অংয়ের। কারণ ক্ষমতা হারালে সেনা জেনারেলদের বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছেই। সমান্তরাল সরকার চালিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারের দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন সেনাপ্রধান।

আরও বড় বিষয় হচ্ছে, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমসহ আরও অন্যান্য গোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও নিপীড়নের জন্য আন্তর্জাতিক চাপে আছে মিয়ানমার। মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখে পড়তে পারেন মিন অং। এ ছাড়া মেয়াদ ফুরালে একই কারণে নিজের দেশেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হারানোভাবমূর্তি ফেরাতে সু চিও সে সুযোগ নিতে পারতেন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলের বিচার করে। কিন্তু সু চিকে সে সুযোগ দিলেন না সিনিয়র জেনারেল মিন অং।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সুষ্ঠু নির্বাচনের পর ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী
Next post মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দায় জাতিসংঘ-যুক্তরাষ্ট্র
Close