Read Time:5 Minute, 58 Second

প্রায় ৪০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের ‘নারী বাজারে’ বিক্রি হওয়া নরসিংদীর শোভা বিবি (সুফিয়া বিবি) নামের এক নারী এখন আফগানিস্তানে আছেন। করিমপুরের মেয়ে শোভাকে পাকিস্তান থেকে কিনে নিয়েছেন আফগানিস্তানের গজনী প্রদেশের কারাবাগ জেলার এক ব্যক্তি।

দেশ রূপান্তর প্রায় এক সপ্তাহ আগে শোভার খবর পায়। এই সময়ে তার সঙ্গে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন এই প্রতিবেদক।

বলিরেখার দিনগুলোতে শোভা অল্পস্বল্প বাংলা স্মরণ রাখতে পেরেছেন। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে কথা বলেন তিনি। এসময় একাধিকবার হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। বুক চাপড়ে বলেন, ‘তুমি আমার ভাই। তোমার জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করবো। আমাকে দেশে ফিরিয়ে নাও। আমি আমার দেশে যেতে যাই।’

শোভার বিষয়ে আফগানিস্তানের একটি গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন দেশ রূপান্তরের চোখে পড়ে কয়েক দিন আগে। কিন্তু সেখানে কিছু তথ্যের বিভ্রাট থাকায় আরও খোঁজ-খবর নেয়া হয়।যোগাযোগ করা হয় সেই পত্রিকার হেডঅফিসে।

শোভা নারী পাচার সম্পর্কে কিছু স্পর্শকাতর তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু বাংলা-পশতু মিলিয়ে কথা বলায় সে সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কথা বলে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আফগানিস্তানের গণমাধ্যমে শোভার বাড়ি ঢাকায় বলা হয়েছে। কিন্তু শোভার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নরসিংদীর করিমপুরে। বাংলাদেশের বাড়িঘরের কথা শোভার আর নির্দিষ্ট করে তেমন কিছু মনে নেই। প্রতিবেদনে তাকে শোভা বলে পরিচয় করানো হয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তানে তাকে সুফিয়া বিবি বলে ডাকা হয়।

শোভা যেভাবে আফগানিস্তানে: বাংলাদেশে তার বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে দুই সন্তান-জাকির হুসেইন এবং মুজিবুর রহমান।শোভা জানিয়েছেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দেবরদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে তার বিরোধ দেখা দেয়। জায়গা-জমি লিখে না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা।

শোভা একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে দেবর তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকের সহায়তায় শোভাকে অজ্ঞান করা হয়।

শোভা বলেন, ‘আমার বাকি ঘটনা মনে নেই। জ্ঞান ফিরে বুঝতে পারি আমি পাকিস্তানে। দেরা ইসমাইল খান নামের এক লোক জানায়, সে আমাকে নারী বাজার থেকে কিনে এনেছে।’

‘লোকটা আমাকে বলেছিল, যারা তার বাড়িতে আসে, সবাইকে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই-তিন জনকে বিক্রি করা হয়।’

এভাবে একদিন শোভাকে কিনে নেন আফগানিস্তানের আবদুল হাবিব। তার সঙ্গে গজনী প্রদেশের কারাবাগ জেলায় সংসার করছেন তিনি।

আফগান স্বামীর সংসারে শোভার কোনো সন্তান নেই। আবদুল হাবিবের আরও দুই স্ত্রী আছেন। তারাও নিঃসন্তান।

শোভা একটি দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বড়ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ভিডিওকলে মাঝেমাঝে কথা বলেন। ছোট ছেলে মারা গেছে আগেই। পানিতে পড়ে তার মৃত্যু হয়। বড় ছেলে থাকেন সৌদি আরবে।

তাকে যে বিক্রি করেছিল তার বিষয়ে জানতে চাইলে শোভা বলেন, ‘ও তো দুশমন হে, জালিম হে, চোর হে। মারগায়া (মারা গেছে)। ওর এক মেয়ে আছে।’

শোভার আফগান স্বামী বলছেন, ‘ও বাংলাদেশে গেলে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু পাঠানোর মতো অত অর্থ আমার নেই। বিত্তবানদের সাহায্য পেলে শোভা তার ছেলের কাছে ফিরতে পারবে।’

শোভা আফগানিস্তানে ‘সুখে’ থাকলেও দারুণ অর্থকষ্টে ভুগছেন, ‘এরা মিসকিন হে। জায়গা-জমি নেই। এমনিতে সুখে আছি। তবে খুব কষ্ট হয়। আমি মরার আগে একবার হলেও আমার বাংলাদেশ দেখতে চাই।’

দেশের কথা কিছু মনে আছে কি না-প্রশ্ন শুনতেই কান্না উবে যায় শোভার। বলিরেখার ওপর হাসি টেনে বলে ওঠেন, ‘সে তো কত আগের কথা। সেই পথ, সেই বাড়ির কথা তেমন কিছু মনে নেই। শুধু ভাইদের কথা, বাবা চাঁনমিয়ার কথা মনে পড়ে।’

 

(শোভা এবং তার বাড়ির লোকদের বিষয়ে কেউ আরও তথ্য দিতে চাইলে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন: ০১৯৯৫৯০৭৫৩৮)

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মালয়েশিয়ায় কংক্রিটের পিলার পড়ে বাংলাদেশির মৃত্যু
Next post বিদেশফেরতদের ‘করোনা মুক্ত’ সনদ বাধ্যতামূলক
Close