Read Time:5 Minute, 49 Second

করোনা চিকিৎসায় অ্যান্টিবডি থেরাপির দিকেই ঝুঁকছে সারা বিশ্ব। ভ্যাকসিন দিয়ে প্যাসিভ ইমিউনিটি তৈরির বদলে সরাসরি রক্তে অ্যান্টিবডি ইনজেক্ট করে ভাইরাস নির্মূল করার গবেষণা চলছে নানা দেশেই। এরই মধ্যে ক্লোনড অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণা ও ট্রায়াল করছেন বিজ্ঞানীরা। এমন অবস্থায় করোনা চিকিৎসায় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। খবর এএফপির।

করোনা আক্রান্ত হলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই থেরাপি দেয়া হয়েছিল। ক্যাসিরিভিমাব ও ইমডেভিমাব নামের দুটি অ্যান্টিবডির সমন্বয়ে এই মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রিজেনেরন ফার্মাসিউটিক্যালস ইনকরপোরেটেড।

এফডিএ জানিয়েছে, কাসিরিভিমাব ও ইমডেভিমাব নামে দুই মনোক্লানাল অ্যান্টিবডি একসঙ্গে ইনজেক্ট করা হবে শরীরে। হাল্কা থেকে মাঝারি সংক্রমণ সারাতে এই অ্যান্টিবডি থেরাপি করা হবে। ১২ বছর ও তার বেশি বয়সীদের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির ডোজ দেওয়া হবে পেশির নিচে। অ্যান্টিবডি সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

এফডিএ কমিশনার স্টিফেন এম হান বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও অ্যান্টিবডি থেরাপি দেয়া হয়েছিল। করোনার চিকিৎসার সম্ভাব্য পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অ্যান্টিবডি থেরাপিতে সাফল্য মিলেছে অনেকটাই। সহস্রাধিক কোভিড রোগীর ওপর ক্লিনিকাল ট্রায়াল করে দেখা গিয়েছে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই কমেছে।

মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি কী?

মানুষের দেহকোষে যখন কোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা প্যাথোজেন ঢুকে পড়ে তখন তার প্রতিরোধ শরীর নিজেই তৈরি করে। সাধারণত জন্মগতভাবে যে রোগ প্রতিরোধ তৈরি হয় শরীরে তাকে ইননেট ইমিউনিটি বলে। শ্বেত রক্তকণিকার নিউট্রোফিল, ম্যাক্রোফাজ ও মনোসাইট এই ধরনের ইমিউনিটি তৈরি করে। আর বাইরে থেকে প্রতিষেধক দিয়ে যে ইমিউনিটিকে জাগিয়ে তোলা হয় তাকে অ্যাডাপটিভ ইমিউনিটিবলে।

রক্তের বি-লিম্ফোসাইট কোষ ও টি-লিম্ফোসাইট কোষ বা টি-কোষ এই ধরনের ইমিউনিটি গড়ে তোলে। সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন যখন শরীরে ঢুকছে তখন তার প্রতিরোধে রক্তের বি-কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই বি-কোষ তার অনেকগুলো প্রতিলিপি তৈরি করে ফেলে যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘ক্লোনিং’।

এমন অজস্র কোষ থেকে লক্ষ লক্ষ অ্যান্টিবডি তৈরি হয় রক্তরসে। এদের সমষ্টিগতভাবে বলে পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডি। এই সমষ্টির মধ্যে থেকে যদি একটিকে ছেঁকে বের করা যায়, তাহলে তাকে বলে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। মনোক্লোনাল মানে তার একটাই এপিটোপ, অর্থাৎ যার সাহায্যে অ্যান্টিজেন বা ভাইরাল প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাকে নষ্ট করে দিতে পারে।

এই মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি নিয়ে কাজ করার সুবিধা বেশি। গবেষণাগারে এই অ্যান্টিবডি স্ক্রিনিং করে বের করে নিয়ে তার ক্ষমতা ইচ্ছামতো বাড়িয়ে নিতে পারেন বিজ্ঞানীরা, যেমন কী ধরনের অ্যান্টিজেনের সঙ্গে বাঁধা যাবে এই অ্যান্টিবডিকে, কীভাবে ভাইরাল প্রোটিন নষ্ট করবে সেটা ল্যাবরেটরিতে ডিজাইন করে নেওয়া যায়।

এফডিএ জানিয়েছে, কাসিরিভিমাব ও ইমডেভিমাব হল রিকম্বিন্যান্ট আইজিজি-১ মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। সার্স-কভ-২ ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। করোনার ভাইরাল স্ট্রেন নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এই দুই অ্যান্টিবডি। এদের কাজ হল ভাইরাসের স্পাইকের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে তার প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেওয়া। সংখ্যায় বাড়তে না পারলেই ভাইরাল স্ট্রেনের শক্তি কমবে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post করোনা ভ্যাকসিনের দাম কত হবে জানাল মডার্না
Next post আশা ভাঙল ট্রাম্পের, পেনসিলভানিয়াতেও মামলা খারিজ
Close