মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার শেষ মুহূর্তে নজিরবিহীনভাবে দখলদার ইসরায়েলের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপকে খুশী করার জন্য ইসরায়েলের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গতকাল জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও অধিকৃত গোলান মালভূমিতে সফর করেন যা ছিল নজিরবিহীন। কেননা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জবরদখল করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত সাত দশক ধরে সব মার্কিন সরকার তেল আবিবকে সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গোলান মালভূমি সফর করেননি।
মাইক পম্পেও শুধু ইসরায়েলকে খুশী করার জন্য সেই ঐতিহ্য ভেঙে গোলান মালভূমি পরিদর্শন করেন এবং পথিমধ্যে নজিরবিহীনভাবে পশ্চিম তীরের একটি অবৈধ ইহুদি বসতিতে যাত্রাবিরতি করেন। গোলান সফরে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও বলেন, ‘গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের মালিকানার প্রতি সমর্থন জানাতেই আমি এখানে এসেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই অঞ্চলের ওপর ইসরায়েলের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’
এছাড়া, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের একটি অবৈধ ইহুদি বসতিতে যাত্রাবিরতিকালে বলেছেন, মার্কিন সরকার জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রিকে ইসরায়েলের তৈরি পণ্য হিসেবে করবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর মাত্র দুই মাস ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। এ স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি যতটা সম্ভব এমনসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন যাতে ইসরায়েলের কোনো দাবীই অপূর্ণ না থাকে।
ইরানের পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হাসান হানি যাদেহ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার বিজয়ের পেছনে ইহুদিবাদী লবির কাছে তিনি ঋণী ছিলেন। এ কারণে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করতে পারলে সর্বশক্তি দিয়ে ইসরায়েলের অবস্থানকে জোরদার করবেন।
বাস্তবতা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত চার বছরের শাসনকালে এমনসব বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছেন যাতে কেবল ইসরায়েলের স্বার্থই রক্ষিত হয়। তিনি অবৈধভাবে এবং জাতিসংঘ ইশতেহার উপেক্ষা করে গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের অংশ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন যা এর আগে কোনো প্রেসিডেন্টই এতোটা দুঃসাহস দেখাননি। এমনকি অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকেও তিনি একচেটিয়াভাবে সমর্থন দিয়ে গেছেন।
ট্রাম্প সবচেয়ে বড় যে খেদমত ইসরায়েলকে করেছেন সেটা হচ্ছে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখার জন্য ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি নামে বিতর্কিত প্রস্তাব তুলে ধরেন যেখানে ফিলিস্তিনিদের সমস্ত অধিকারকে পদদলিত করা হয়েছে।
এমনকি জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের একটি বিরাট অংশকে ইসরায়েলের বলে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক সমাজ বিশেষ করে ইউরোপ, জাতিসংঘ ও রাশিয়া পশ্চিম তীরের ব্যাপারে ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরোধিতা করায় ইসরায়েল এবং তার প্রধান সমর্থক অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছে। কিন্তু তারপরও বিদায় নেয়ার আগ মুহূর্তেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
More Stories
বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে কাজ করবে ভারতীয় আমেরিকানরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দেশটির কংগ্রেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা চালাবে ভারতীয় আমেরিকানরা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে...
দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কাজ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রথম কাজ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা। শুক্রবার...
হোয়াইট হাউসে ফিরলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প...
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ট্রাম্প ২১০, কমলা ১১৩
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গণনা চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে কে জয় পেতে যাচ্ছেন, এমন পূর্বাভাসও আসছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে। অ্যাসোসিয়েটেড...
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ফ্লোরিডায় ট্রাম্প এবং ম্যাসাচুসেটসে জয়ী কমালা হ্যারিস
ফ্লোরিডায় ট্রাম্প এবং ম্যাসাচুসেটসে জয়ী কমালা হ্যারিস মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর ধীরে ধীরে ফলাফল আসতে শুরু করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো...
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দাদের
রাশিয়াসহ ‘প্রতিপক্ষ’ দেশগুলো বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের দাবি, তারা নির্বাচন নিয়ে জনগণের আস্থা...