Read Time:7 Minute, 53 Second

আন্তর্জাতিক সমঝোতার রীতিনীতি ভেঙে পড়ছে। তাই নষ্ট করার মতো সময় নেই, আমেরিকার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে খুব দ্রুত কাজে নেমে পড়া হবে এবং এটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অঙ্গীকার। কথাগুলো যদিও এখনকার নয়, চলতি বছরের শুরুর দিকে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক সাময়িকীতে কথাগুলো লিখেছিলেন বাইডেন।

ধারণা করা হচ্ছে, আমেরিকার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বাইডেন যা বলেছেন, তা সচেষ্ট করতে শুরুতেই ইরানের সঙ্গে হাত মেলাতে চাইবেন বাইডেন। দেশটির সঙ্গে ২০১৫ সালে সই করা জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তিতে পুনরায় যোগ দিতে পারেন তিনি।

বাইডেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথে থাকায় ইরানও রয়েছে প্রত্যাশায়। যেসব দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে ছিল তাদের প্রত্যাশার মাত্রা একটু বেশি। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইরান। কেননা ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই যে দেশটির প্রতি খড়্গহস্ত হয়েছিলেন সেটি হলো ইরান। এবার বাইডেন ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে দেশটির আশা বাড়ছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি ইরান সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করবে যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। জারিফ বলেন, তার (বাইডেনের) তিনটি নির্বাহী আদেশে দ্রুত কার্যকর হতে পারে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি ইরানে গতকাল বুধবার এক সাক্ষাৎকারে জারিফ এসব কথা বলেন।

জারিফ বলেন, ‘বাইডেন যদি চুক্তির শর্ত পূর্ণ করতে চান তা হলে আমরা শিগগিরই আমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব।… আমরা আলোচনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত যে কীভাবে চুক্তিতে ফেরা যায়।’

এদিকে, কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তিতে ফেরা খুব একটা সহজ হবে না। কেননা দুই পক্ষই পরস্পরের কাছে অতিরিক্ত কিছু আশা করতে পারে। এর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বাইডেনের প্রতি পারমাণবিক চুক্তিতে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। চুক্তির লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করা। এতে সই করেছিল ইরান, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ- চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জার্মানি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।

এদিকে বাইডেন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বলেছেন তিনি ইরানের সঙ্গে যৌক্তিক পন্থা অনুসরণ করবেন। জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থায় ইরানের সাবেক দূত আসগর সুলতানিয়েহ এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা তো পেছনে যেতে পারব না। এখন আমরা একটা পয়েন্ট থেকে আরেকটা পয়েন্টে পৌঁছে যাচ্ছি এবং আমরা এখন এই জায়গাতেই আছি।’

হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামার শাসনামলের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখা হয় এই সমঝোতাকে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পরপরই এই চুক্তিটি বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বাকি পক্ষগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের মে মাসে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটুকু করেই থেমে থাকেন নি, পুরো চুক্তিটি ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যেও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। কিন্তু বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর নতুন প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাতে জো বাইডেনকে ফোন করেন মোদি। এ সময় দুই দেশের দীর্ঘ সম্পর্ক ও পারস্পারিক সহযোগিতা অক্ষুণ্ন রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন দুই নেতা।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বাইডেনের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি টুইটারে মোদি নিজেই জানিয়েছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মোদি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাতে মাত্র ফোনে কথা বললাম। আমরা ইন্দো-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রাখার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছি এবং করোনা মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার মতো অগ্রাধিকারমূলক বিষয়ে আলোচনা করেছি। আরেকটি টুইটে তিনি বলেন, নবনির্বাচিত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জন্যও উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছি। তার এ সাফল্য ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়, যারা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের প্রবল শক্তির উৎস, তাদের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও অনুপ্রেরণার বিষয়।

অন্যদিকে বাইডেনের ‘ক্ষমতা হস্তান্তরবিষয়ক দল’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তারা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ এবং ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সংকট প্রতিরোধের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চান। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি, বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, দেশ-বিদেশে গণতান্ত্রিক শক্তি বৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নতি ধরে রাখার বিষয়েও কথা হয়েছে তাদের।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা
Next post চীনকে বাইডেনের আগাম বার্তা, বেআইনি কার্যকলাপ বরদাস্ত নয়
Close