Read Time:8 Minute, 37 Second

মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট গণনায় ‘জালিয়াতির’ যে অভিযোগ তুলেছেন সেটি নিয়ে তার দল রিপাবলিকান পার্টিতে স্পষ্টতই চরম মতভেদ দেখা দিয়েছে। রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ কিছু নেতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভিত্তিহীন অভিযোগের পক্ষে সাফাই গাইলেও দলের অনেক নেতা সেটি সমর্থন করছেন না।

রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের মধ্যে যখন এই মতভেদ দেখা দিয়েছে, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দুই ছেলে দলের কিছু নেতাকে উদ্দেশ্য করে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন।

ট্রাম্পপুত্রদের ক্ষোভ

বিবিসি নিউজ বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়াই করছেন, তখন তার দুই ছেলে রিপাবলিকান নেতাদের তীব্র আক্রমণ করে বলেন, তারা ট্রাম্পকে যথেষ্ট সমর্থন দেননি।

ট্রাম্পের বড় ছেলে ডন জুনিয়র বলেছেন, তার বাবার প্রতি রিপাবলিকান নেতাদের সমর্থন ছিল ‘দুর্বল’।

রিপাবলিকান নেতাদের সতর্ক করে ছোট ছেলে এরিক বলেছেন, ‘আমাদের ভোটাররা তোমাদের কখনো ক্ষমা করবে না।’

ট্রাম্পের দুই ছেলের বক্তব্যের মাধ্যমে রিপাবলিকান দলের ভেতরে ট্রাম্পের অনুসারী এবং অন্যদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বড় ছেলে ডন জুনিয়র-এর রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা আছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা রেখেছিলেন ডন জুনিয়র।

তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘২০১৪ সালের জন্য যারা আশা করছেন, তাদের সবার দিক থেকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তা খুবই অবাক করার মতো।’

‘তাদের যদি কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা থাকতো তাহলে এটি ছিল তাদের জন্য যথার্থ মঞ্চ। কিন্তু তারা মিডিয়ার ভয়ে নতি স্বীকার করেছে। চিন্তা করো না। আসল ট্রাম্প লড়াই করবে এবং তারা যথারীতি দেখবে।’ লিখেছেন ডন জুনিয়র।

আমেরিকার চরম ডানপন্থী লেখক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং ট্রাম্পের অন্যতম সমর্থক মাইক কার্নোভিচ-এর একটি টুইট বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বড় ছেলে এটি লিখেছেন। কার্নোভিচ তার টুইট বার্তায় জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন দূত নিকি হেলির সমালোচনা করেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান দল থেকে নিকি হেলি মনোনয়ন চাইতে পারেন।

ট্রাম্পের বড় ছেলে লিখেছেন, ‘রিপাবলিকানরা যুগের পর যুগ দুর্বল। এজন্যই বামপন্থীরা এসব করতে পারছে।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ছোট ছেলে এরিক টুইটারে লিখেছেন, ‘রিপাবলিকানরা কোথায়? মেরুদণ্ড সোজা কর। জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই কর। আমাদের ভোটাররা তোমাদের কখনো ক্ষমা করবে না।’

রিপাবলিকানদের মধ্যে যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে সোচ্চার তাদের নাম উল্লেখ করে প্রশংসা করেছেন তার দুই ছেলে।

যারা ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন

সুপরিচিত রিপাবলিকান এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পের বক্তব্যকে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও প্রথম দিকে গ্রাহাম নীরব ছিলেন, কিন্তু তার এই নীরবতার জন্য ট্রাম্পপুত্র সমালোচনা করেন। এরপর ট্রাম্পের বক্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে আসেন গ্রাহাম।

গ্রাহাম ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন জানানোর জন্যই এখানে এসেছি।’

এছাড়া গ্রাহাম তার টুইটারে বেশ আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন ডেমোক্রেটদের উদ্দেশ্যে।

আরেকজন সিনিয়র রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেনে , ‘প্রতিটি আমেরিকানের উচিত এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। তারা যদি অন্যায় কিছু দেখে তাহলে আমাদের বলা উচিত। এ ব্যাপারে আপনারা চুপ থাকবেন না। আমাদের চোখে সামনে এ ধরনের অনিয়ম ঘটতে দিতে পারি না।’

নির্বাচনে এখনো চূড়ান্ত ফলাফল না এলেও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন এখন জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে।

অন্যদিকে কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভোট গণনার বিরুদ্ধে আদালতে যাবার হুমকি দিয়েছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্য যারা সমর্থন করছেন না

বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, সিনিয়র রিপাবলিকান মিট রমনি এবং মেরিল্যান্ড গভর্নর ল্যারি হগান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খাটো করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।

রমনিকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, প্রতিটি ভোট গণনা করা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

‘ভোট গণনা করা হবে। যদি কোনো অনিয়মের অভিযোগ থাকে তাহলে সেটির তদন্ত হবে এবং শেষ বিচারে আদালতে নিষ্পত্তি হবে। গণতন্ত্রের ওপর আস্থা রাখুন, আমাদের সংবিধান এবং আমেরিকার জনগণের ওপর আস্থা রাখুন,’ বলেন রমনি।

সিএনএন বলছে, টেক্সাসের রিপাবলিকান নেতা উইল হার্ড প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্যক্রমকে ‘বিপদজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

হার্ড-এর টুইট বার্তাকে উদ্ধৃত করে সিএনএন লিখেছে, ‘প্রেসিডেন্ট আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে অবজ্ঞা করছেন এবং কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই আমেরিকানদের বৈধ মতামত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এটা শুধু বিপদজনক এবং ভুলই নয়, যে ভিত্তির ওপর আমাদের জাতি দাঁড়িয়ে আছে সেটিকেও অবজ্ঞা করা হচ্ছে।’

বিবিসি নিউজ বলছে, গত চার বছরের রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টিকে তাদের ইচ্ছে মতো চালিয়েছেন। তার নিজের মনোনীত রিপাবলিকানদের কাছ থেকে তিনি ৯০ শতাংশের বেশি সমর্থন পেয়েছেন।

রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অন্যদের মধ্যে যে বিবাদ শুরু হয়েছে, ট্রাম্পের বিদায়ের পরে সেটি দলকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা এক বড় প্রশ্ন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মালয়েশিয়ায় নবনিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
Next post পায়ে পায়ে হোয়াইট হাউসের পথে বাইডেন
Close