Read Time:11 Minute, 58 Second

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৮৭ লাখ ২ হাজার ৬০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর মধ্যে মারা গেছেন ২ লাখ ২৭ হাজার। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এ তথ্য জানিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৪১ হাজার ৭৫৩ রোগী ভর্তি রয়েছেন, যার মধ্যে ৮ হাজার ৪৮৮ জন রয়েছেন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।

ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে উত্তরাঞ্চলে তথা নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ম্যারিল্যান্ড, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড, নিউ হ্যাম্পশয়ার, মেইন ও ভারমন্ট এলাকায় শীতকালের আবহাওয়ায় সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এই সময় আর্দ্রতা, সূর্যের তাপ, ভিটামিন ডিয়ের অভাব এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ শীতকালে অন্যান্য ভাইরাস ও ফ্লু জাতীয় শ্বাসকষ্টের রোগের লক্ষণ দেখা দেয় বলে মানুষ করোনা ভাইরাস নিয়ে আরো বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। এদিকে শুরুর দিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভয়ভীতি ছিল, এখন তা আর নেই বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন। মানুষ অনেকটা বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করছেন। এই ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ সংক্রমণ বাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, সামনে শীতকাল। শীতে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বলা যাচ্ছে না। শীতকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা জরুরি। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। নইলে সামনে বিপদ চলে আসতে পারে। চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন, করোনা সংক্রমণ এখন কিছুটা কমেছে। কিন্তু এখন কম-বেশি বলা মুশকিল। এক মাস পরিস্থিতি দেখে বলা যাবে, কোন দিকে যাচ্ছে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৪ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যা ১১ লাখ ৫৪ হাজার অতিক্রম করেছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ব্রাজিলের অবস্থান তৃতীয় হলেও মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয়। এখন পর্যন্ত ব্রাজিলে কনোরাভাইরাস আক্রান্ত ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৪ রোগী মারা গেছেন এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ লাখ। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিতীয় বৃহত্তম, যেখানে ৭৯ লাখ লোক আক্রান্ত এবং এবং মারা গেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ১৪ জন। মেক্সিকোতে গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৯১ হাজার ১৬০ জন এবং এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ৮৮ হাজার ৯২৪ জনের। ইউরোপে সর্বাধিক সংখ্যক মৃত্যু ঘটেছে যুক্তরাজ্যে, যেখানে মারা গেছে ৪৪ হাজার ৯৮৬ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪০ জন রোগী।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ফলে বিশ্বের অনেক দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী যার দৈনিক গড় হার ২ লাখের অধিক। তবে অনেক দেশে ভাইরাসের সংক্রমণ স্থিতাবস্থায় রয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে। গত মার্চের শেষ দিকে নিউইয়র্ক সিটিতে করোনাভাইরাসের বিস্তার বিস্ফোরণের মতো দাঁড়িয়েছিল এবং মৃতের সংখ্যাও ছিল অধিক। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে আসে। কিন্তু এখন তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে তা বেশি বাড়ছে। গত ২৬ অক্টোবর আক্রান্ত হয়েছে ৭৪ হাজার ৩০০ জন, যা পূর্ববর্তী এক সপ্তাহের দৈনিক গড় ৭১ হাজারের অধিক। ২০টির বেশি স্টেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে পৌছার কারণে এর আগে বার ও রেষ্টুরেন্টগুলোতে লোক সংখ্যা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছিল তার ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশ ক’টি স্থানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে এবং রোগীর চাপ সামলাতে ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে।

কীভাবে কোভিড ১৯ আবারো বিস্তার শুরু করেছে নিয়ে গবেষণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা চারটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো: কেউ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর কত কাছে গেছেন বা যাবেন, রোগীর কাছে কতটা সময় কাটিয়েছেন, রোগী আপনার কাছে কফ, থুথু ফেলেছে কিনা এবং রোগীর কাছ থেকে আসার পর কীভাবে বা কতবার নিজের মুখ স্পর্শ করেছেন।

কোভিড ১৯ এর সংক্রমণের ঝুুঁকি এড়ানোর উপায়ও বাতলে দিয়েছেন তারা। বাড়ির বাইরে অন্যদের থেকে অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, বাড়ির বাইরে সবসময় মাস্ক ব্যবহার করা। যত বেশি সংখ্যক লোক মাস্ক ব্যবহার করবে তত বেশি নিরাপদ থাকা যাবে। বাড়ির বাইরে কোনো কিছুর স্পর্শ লাগলে সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন তোয়ালে দিয়ে মোছা, মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, কারণ আমরা নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করলে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। অতএব হাত না ধুয়ে চোখ মুখ স্পর্শ করা ঠিক নয়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে এবং নভেম্বরের প্রথম দিক থেকে সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সংক্রামক ব্যধি বিশেষজ্ঞরা। আট মাস আগে যখন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা হানা দিয়েছিল, তখন কেউ হয়তো ভাবতেই পারেননি কোভিড-১৯ এতটা ভয়ঙ্করভাবে দেশটিকে আক্রান্ত করবে। এত উচ্চমানের ল্যাবরেটরি, গবেষক এবং ওষুধ মজুদ থাকার পরও মৃতের সংখ্যা গত ২৭ অক্টোবর ২ লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য গবেষক জেনিফার নুজো বলেন, ‘আমরা এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা কখনো ভাবতেও পারিনি।’ জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ লাখ অতিক্রম করেছে । দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা জনবহুল রাজ্য উটাহর রাজধানী সল্টলেক সিটির জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলছে।

আগামী ১ জানুয়ারীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভালো অবস্থা বিরাজ করলে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজারে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। কিন্তু অবস্থা যদি শোচনীয় পর্যায়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে ৬ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হতে পারে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ ভারতে এখন প্রতিদিন গড়ে ৯০ হাজার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হচ্ছে। শীতল আবহাওয়া এগিয়ে আসার সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি নির্ধারকরা তাদের হতাশা ব্যক্ত করছেন যে, কী ঘটবে তা কেউ জানে না। যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টারা দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন। প্রস্তুতি নিতে বলেছেন আগামী ছয় মাসের জন্য ভাইরাস মোকাবিলার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যুর দ্বিতীয় পর্যায়ের আশঙ্কা বহুদিন থেকেই করা হচ্ছে। এখন তারা অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলছেন যে, এটি সম্ভবত আরো বিপর্যয়কর হবে। বিশেষজ্ঞরা আশংঙ্কা করছেন, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ভয়াবহ রূপ নেবে কয়েক সপ্তাহ পর। যখন শীত জাঁকিয়ে বসবে। শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত অন্যান্য ভাইরাসের প্যাটার্নের কারণে কোভিড-১৯ এর শীতকালীন প্রকোপের শোচনীয় অবস্থার কথা বলা হচ্ছে।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের একজন এপিডেমিওলজিস্ট এলি ক্লেইন বলেছেন, ‘আমার মনে হয় করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ আসছে। শীতের সাথে আসছে এটা বড় ব্যাপার নয়, বরং কতটা ভয়াবহভাবে আঘাত হানতে পারে সেটি উদ্বেগের বিষয়।’ গবেষকরা এমন এক সময়ে তাদের সতর্কতা ব্যক্ত করছেন যখন মিডওয়েস্টে সংক্রমণ হার বৃদ্ধির ঘটনা সত্বেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জাতীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ইতালী প্রবাসীকে গুলি করে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিনতাই
Next post মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র : প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশ
Close