গত ৭ মাসে দেশে ফিরে এসেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৮২ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। গত ১ এপ্রিল থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বিশ্বের ২৯টি দেশ থেকে এসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা কর্মী দেশে ফিরেছেন। তাদের পুনর্বাসনে সরকার ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানায়। খবর বাসসের।
মন্ত্রণালয়ের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল আলম জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে যারা ফেরত এসেছে তাদের মধ্যে ২ লাখ ১৪৬ জন পুরুষ এবং ২৫ হাজার ৪৩৬ জন নারী রয়েছেন।
তিনি জানান, বিদেশ ফেরত কর্মীদের মধ্যে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৯৪ জন পাসপোর্টধারী বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কাজ না থাকা, কাজের বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, আকামা বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। আবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে ৩৪ হাজার ৩৮৮ জন কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।
ফেরত আসা কর্মীদের অনেকে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সংশ্লিষ্ট দেশে ফিরে যেতে পারবেন বলে সূত্র জানায়। দেশে ফেরা কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন সৌদি আরব থেকে। এই সময়ে সৌদি থেকে এসেছেন ৬০ হাজার ৯৬৯ জন প্রবাসী কর্মী। এর মধ্যে পুরুষ ৫০ হাজার ৪৬৬ জন, আর নারী কর্মী রয়েছেন ১০ হাজার ৪০৩ জন। সৌদি ফেরত কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে এবং কাজ না থাকায় ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ৫৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ৫৫ হাজার ৮২ জন। আর নারী কর্মী ফিরেছেন ৪ হাজার ৮৩৮ জন। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবার ওই দেশে ফেরত যেতে পারবেন।
বিভিন্ন মেয়াদে কারা ভোগ করে আউটপাস নিয়ে ওমান থেকে দেশে ফেরত আসেন ১৩ হাজার ৪৮৬ জন। করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে কাজ না থাকায় টুরিস্ট নির্ভর দেশ মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন ১২ হাজার ১৫৯ জন প্রবাসী কর্মী। আকামা বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন ১০ হাজার ৮৯৩ জন। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেছেন ৪ হাজার ৬৪ জন। বাহরাইন থেকে ফিরেছেন ১ হাজার ৪১১ জন।
কাজ না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এসেছেন ৭১ জন প্রবাসী। কাতার থেকে ফিরেছেন ২৩ হাজার ১১৮ জন। মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন ১০ হাজার ৮২১ জন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরেছেন ১৩৬ জন। কাজ না থাকায় থাইল্যান্ড থেকে ফিরেছেন ৮৯ জন, মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন, জর্ডান থেকে ২ হাজার ২০৪ জন এবং ইরাক থেকে ফিরেছেন ৮ হাজার ৮৯২ জন। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে ফিরেছেন ১২১ জন এবং শ্রীলংকা থেকে ৫৪৮ জন।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ইতালি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৫১ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে। এই ১৫১ জন প্রবাসী গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে ইতালি গেলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। পরে দেশে ফিরলে সবাইকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল।
এছাড়া লেবানন থেকে ৬ হাজার ৬৯৯ জন, রাশিয়া থেকে ১০০ জন, মরিশাস থেকে ৪৫২ জন, তুরস্ক থেকে ৮ হাজার ৫৫৮ জন, নেপাল থেকে ৫৫ জন, হংকং থেকে ১৬ জন, কম্বোডিয়া থেকে ১০৬ জন, জাপান থেকে ৮ জন, লন্ডন থেকে ৫৩ জন, লিবিয়া থেকে ৩১৫ জন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ১২৮ জন প্রবাসীকর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।
বিদেশ প্রত্যাগত এসব কর্মীদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের পুনর্বাসনে সরকার ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন এবং তাদেরকে পুনঃপ্রশিক্ষণের মাধ্যমে আবারো বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের পুনর্বাসন ও প্রবাসে কর্মরতদের নিরাপদ অভিবাসনসহ তাদের সার্বিক কল্যাণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
মন্ত্রণালয় গৃহীত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বিপদগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জরুরি খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার জন্য প্রায় ১০ (দশ) কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান, কোভিড-১৯ এ মৃত প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশির পরিবারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান; করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিদেশ ফেরৎ কর্মীদেরকে কোয়ারেন্টাইন পালন শেষে নগদ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা; বিদেশ প্রত্যাগত অভিজ্ঞ কর্মীদের যথাযথ স্বীকৃতি ও সনদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদেশ ফেরত অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত, দরিদ্র কর্মী ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীর পরিবারের সদস্যদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ দেশে চলমান সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনসহ বিভিন্ন ধরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর আওতায় কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত কর্মীদের ৪ শতাংশ সরল সুদে বিনিয়োগ ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এ জন্য ২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনে সহজ শর্তে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ঋণ প্রদানের বিষয়ে গত ১২ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সাথে ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মীরা অভিজ্ঞতার বিবেচনায় দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমরা প্রবাসী কর্মীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। তাদের সামগ্রিক সুরক্ষায় সরকারের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।’
More Stories
আজারবাইজান পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) যোগ দিতে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্থানীয় সময় সোমবার (১১ নভেম্বর)...
বাংলাদেশিসহ ৮ অভিবাসীকে এবার আলবেনিয়ায় পাঠালো ইতালি
নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে অনিয়মিত অভিবাসীদের দ্বিতীয় একটি দলকে আলবেনিয়া পাঠিয়েছে ইতালি। দলটিতে বাংলাদেশ ও মিশরীয় আট অভিবাসী রয়েছেন। শুক্রবার...
ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপি’র উদ্যোগে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালন
ক্যালিফোর্নিয়ায় জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর উদ্যোগে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে স্হানীয় ক্যালিফোর্নিয়া...
সুইজারল্যান্ডে আ. লীগ কর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সামাজিক...
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা
ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ তার...
‘বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্রেটিক পার্টি অব ক্যালিফোর্নিয়া’র নির্বাচনী ক্যাম্পেইন ২০২৪
শামসুল আরিফীন বাবলু: প্রবাস ডেস্ক, লসএঞ্জেলেস, যুক্তরাস্ট্র। যুক্তরাস্ট্রে প্রতি চার বছর পর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বা সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।...