প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসিড সন্ত্রাসের মত ধর্ষণ নামের পাশবিকতা নিয়ন্ত্রণেই সরকার আইন সংশোধন করে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযুক্ত করেছে। ধর্ষণ একটা পাশবিকতা, মানুষ পশু হয়ে যায়। যার ফলে, আমাদের মেয়েরা আজকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেইজন্য আমরা এই আইনটি সংশোধন করে ধর্ষণ করলে যাবজ্জীবনের সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে কেবিনেটে সেই আইন পাশ করেছি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,এসিড নিক্ষেপকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কারণ সেখানে আমরা আইন সংশোধন করেছিলাম। যেহেতু পার্লামেন্ট সেশনে নাই, তাই, আমরা এক্ষেত্রে অধ্যাদেশ জারি করে দিচ্ছি।
যে কোন একটা সমস্যা দেখা দিলে সেটাকে মোকাবেলা করা এবং দূর করাই আমাদের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ আজকে সমগ্র বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে আমরা মনে করি যে কোন অবস্থাতেই যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে আমরা পারবো এবং বাঙালি পারে। বাংলাদেশের মানুষ যে পারে সেটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি। জাতির পিতা আমাদের যে পথ দেখিয়ে গেছেন সেই পথেই বাংলাদেশের মানুষকে আমরা দুর্যোগ থেকে মুক্ত করবো। কোভিড-১৯কে আরেকটি দুর্যোগ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তাদেরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে অনেক সময় মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবেলা করতে হয়। এর আগে আপনারা দেখেছেন বিএনপি-জামায়াতের সেই অগ্নি সন্ত্রাস। জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সেটাও কিন্তু আমরা মোকাবেলা করেছি। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জিজিটাল পদ্ধতিতে বিনামূল্যে ১৭ হাজার ৫টি দুর্যোগ সহনীয় গৃহ প্রদান এবং ১৮ হাজার ৫০৫ জন নারী কর্মী সম্বলিত ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ এর নতুন একটি মহিলা ইউনিটও উদ্বোধন করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে বন্যা হবে, খরা হবে, ঘূর্ণিঝড় হবে, জলোচ্ছ্বাস হবে, অগ্নিকা-, সেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমাদের বাঁচতে হবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন করা এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- সেটাই আমাদের লক্ষ্য। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় স্থাপনা র্নির্মাণের সময় জলাধার সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমরা রাস্তাঘাট যা কিছু তৈরি করি না কেন সকলকে আমি এটাই অনুরোধ করবো, আমাদের জলাধার, নদীনালা, খালবিল-এগুলো যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে দুর্যোগকালীন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সারাদেশে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ফলে দেশের মানুষ অনাহারে থাকেনি। তিনি বলেন, বন্যার্ত মানুষের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছে সরকার। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা পৃথিবীর প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম উল্ল্যেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত কয়েক বছরে আমরা প্রথাগত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে এসে দুর্যোগ ঝুঁঁকি-হ্রাস এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ঝুঁঁকি সহনশীলতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে আসছি। আমরা সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছি। শেখ হাসিনা বলেন,আমাদের ছোট্ট ভূখ-। এর মধ্য দিয়ে ৭ শ’র বেশি নদী প্রবাহিত। এই জায়গায় দুর্যোগ মোকাবেলা করে জান-মাল বাঁচানো, মানুষকে সতর্ক রাখাটাই বড় কাজ। আমাদের ৫৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করছেন। এর মধ্যে মহিলা স্বেচ্ছাসেবকরাও যথেষ্ট ভূমিকা রাখছেন। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’-এর সভায় জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন দুর্যোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বিশ্ব অভিযোজন কেন্দ্র- ঢাকা অফিস’ স্থাপনের ঘোষণা দেন। এ প্রেক্ষিতে গত মাসে গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন সেন্টারের কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এবার বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরাম-সিভিএফ-এর নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,একটা সময় দেশে অনেক অবহেলিত, অনগ্রসর মানুষ ছিল। সমাজে যাদের কোনো স্থান ছিল না। বলতে গেলে তারা ছিল অপাঙক্তেয়। আমরা কিন্তু তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি। তাদের ঠিকানা হয়েছে। আমরা হিজড়া থেকে শুরু করে সবাইকে স্বীকৃতি দিয়েছি। সমাজে এখন তাদের একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে। চা শ্রমিকদের অন্য দেশ থেকে আনা হয়েছিল। তাদের কোনো দেশ ছিল না, ঠিকানা ছিল না জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন। কোভিড কালীন খাদ্য উৎপাদনে অধিক গুরুত্বারোপ করাতেই দেশে কোন খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,আমরা সব সময়ই ভেবেছি কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়। কারণ ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সবচেয়ে জরুরি। তিনি গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন,আমরা লবণাক্ততা সহনশীল ধান উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন সারা বছরই নানা ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এটাও কিন্তু গবেষণার ফসল। সেইভাবে বিদেশি অনেক ফলও বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারছি। প্রচুর মাছ, বিশেষ করে মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে আমরা বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় কোভিডের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ২৪ লাখ মানুষকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাই। কীভাবে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়, বাংলাদেশ সে পথ দেখাচ্ছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে টেকসই করা ও সম্পদের ঝুঁকি কমানোর জন্য দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসের বিষয়টি সকল উন্নয়ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ‘২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার’ দৃঢ় প্রত্যয়ও পুনর্ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে তার পক্ষে প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ৪২ জন পুরুষ এবং ৪২ জন নারীর মাঝে পদক ও বিতরণ করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রাপ্ত উপকারভোগীদের পক্ষে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার বেদেনি নুরুন্নাহার এবং গাইবান্দার মো. রিয়াজুল হক এবং মহিলা সিপিপি কাশফিয়া তালুকদারও নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
More Stories
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...
বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস
ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে সেগুলোর বিচার শেষে দলটিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে বলে...
সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া
ছয় বছর পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল হাস্যাজ্জ্বল খালেদা জিয়াকে। সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে...
শেখ হাসিনাকে ফেরানোর নির্দেশনা নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে দুই দেশের বৈঠকে আলোচনার সুযোগ...
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বললেন উপদেষ্টা মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ...