Read Time:6 Minute, 51 Second

নেই রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স, নেই ডিমান্ড লেটার (বিদেশি কোম্পানিতে কাজের জন্য অনুমতি)। এমন কী মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেই। শুধু ভিসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হলেও অনুমোদন না নিয়ে কানাডা, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে গত দুই বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ‘ভিসা গাইড সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

চলতি বছরই প্রায় আড়াই হাজার লোকের কাছ থেকে কয়েক ধাপে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল পরীক্ষার নামেও জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়।

এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর শাহআলী মার্কেটে নবম তলায় ভিসা গাইড সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-৩ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান শেষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি, পরামর্শক, কাউন্সিলর এবং আইটি স্পেশালিস্টকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়।

অভিযানকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। তিনি বলেন, ভিসা গাইড সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠানটি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজ মূলত বিদেশে যেতে ইচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেয়া। কিন্তু সেই জায়গা থেকে প্রতিষ্ঠানটি সরে এসে অনুমোদন না নিয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ গমনেচ্ছুদের কানাডা, জাপান, ফিজি, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনের চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়। এরপর সারাদেশে তাদের দালালদের মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছুদের যোগাযোগ করতে বলেন।

২০১৩ সালের অভিবাসী আইন অনুযায়ী তাদের কোনো রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স নেই, যেসব দেশে পাঠানোর কথা বলছে সেসব দেশের যেসব কোম্পানিতে কাজের জন্য পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে তার ডিমান্ড লেটার লাগে সেসব নেই। নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন। এরপরও তারা অসদুপায়ে বিভিন্ন কোম্পানির নামে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরি করে বিদেশ গমনেচ্ছুদের হাতে দেয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কোর টাকা হাতিয়ে নেয়। আজও কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের অনেকে ভুয়া ভিসা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে তারা ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি, কখনো অস্ত্রের মুখে অথবা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন প্রতিষ্ঠানটির মালিকসহ কর্মকর্তারা। অভিযানের এই স্বল্প সময়ে আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি তার ভিত্তিতে জানতে পারি, ২০২০ সালেই আড়াই হাজার লোকের কাছ থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। প্রতিদিনই বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি।

ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সত্যিকার অর্থে ভিসা করা, ওয়ার্ক পারমিটের বিপরীতে ডিমান্ড লেটার সংগ্রহ করতে পারেনি। কারণ প্রতিষ্ঠানটির রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স নেই, সরকারি অনুমোদন নেই। এসব কারণে অভিযান শেষে দায় স্বীকার করায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সিএস হাফিজ এবং এমডি মোশাররফ হোসেনকে অভিবাসী আইন ২০১৩ এর ৩২ ধারায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কাউন্সেলিংয়ের সঙ্গে জড়িত আরিফুল ইসলাম ও আইটি স্পেশালিস্ট সুজন রনিকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়।

পলাশ বসু বলেন, অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন। আমরা অভিযানকালেই তাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছি। আরও যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক মাসের মধ্যে তাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post অস্ত্র মামলায় পাপিয়া দম্পতির ২০ বছরের কারাদণ্ড
Next post করোনায় আক্রান্ত রোনালদো
Close