সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যেই ধর্ষক-দুস্কৃতিকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনে ঘটনার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বক্তব্যের সমালোচনা করে আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আজকের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
রিজভী বলেন, ‘দেশে আজ কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। রাষ্ট্র যেখানে মদদ দেয় নিপীড়নকারীকে সেই দেশে বসবাস করা আসলেই খুব মুশকিল। আজকে এগুলোকে মদদ দিচ্ছে, এটাকে আশ্র্রয় দিচ্ছে, এটাকে উতসাহিত করছে মন্ত্রীরা। আইনমন্ত্রী কী বড় বড় কথা বলেন। আরে বাপরে বাপ। মনে হচ্ছে, আইনের অবদান। আজকে তিনি (আইনমন্ত্রী) যদি এই টাইপের কথা বলেন যে, এটা (নোয়াখালীর ঘটনা) একটা ষড়যন্ত্র। মর্মমূলে না গিয়ে তিনি আগেই বলে দিলেন। অর্থাৎ ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়িয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি আর চলতে পারে না।’
গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এমন বিভৎসতা স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। বিবস্ত্র করার পর ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে আপলোড করা ভয়ঙ্কর এবং কুরুচিপূর্ণ ঘটনা। এর পেছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তদন্ত করে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
নোয়াখালীর নারী নির্যাতনের ঘটনা বর্বরোচিত ও নজিরবিহীন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘যে দেশে একটি ইউনিয়নের মধ্য, একটি ওয়ার্ডে এই ধরনের ঘটনা হয়-জেলা প্রশাসন ৩২ দিন জানে না। যে ধর্ষিত হয়েছে যার সম্ভ্রমহানি ঘটানো হয়েছে সে ভয়ে প্রশাসনের কাছে যায় না। নিপীড়নে ক্ষত-বিক্ষত নারী থানায় গিয়ে অভিযোগ করতেও ভয় পায়। তাহলে যে দেশে সুসভ্য মানুষ-নাগরিকরা কিভাবে বেঁছে থাকবে? কারণ জানে এই সমস্ত অপরাধে যারা অপরাধী রাষ্ট্র আশ্রয় দেয়, তাদেরকে সরকার আশ্রয় দেয়। তাদের আশ্রয়দাতা হচ্ছে রাষ্ট্র। এভাবে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গে্লে এটা যদি দুস্কৃতিকারীরা জানে তাহলে তাদের পরিণতি আরও খারাপ হবে, তাদের আরও হয়ত ইজ্জতহানির শিকার অথবা ভয়ভীতি দেখিয়ে হত্যা করা হবে।’
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আর প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানু্ষের পাশে কেউ থাকে না, আওয়ামী লীগ থাকে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ থাকার দৃষ্টান্ত। এমন প্রশাসন তৈরি করা হয়েছে, যে প্রশাসনের কাছে ভিকটিম মানুষ, অপরাধীদের দ্বারা নির্যাতিত মানুষ সেখানে (থানা) গিয়ে তার অভিযোগ করতে পারছে না। অথচ কাল আমরা একটা মি্ছিল করি-পুলিশ দেখবেন সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। পেছন থেকে টপাটপ বিএনপির নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করবে। আর যদি বেশি কথা, বেশি আন্দোলনের দিকে যাই তাহলে আপনার গোয়েন্দা বাহিনী থেকে শুরু করে সবাই এসে তাকে তুলে নিয়ে যাবে এবং তাকে হয়তো পাওয়া যাবে না। এখানে তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, দক্ষতা দেখিয়েন। বিরোধী দলকে দমন করার জন্য, নিপীড়ন-নির্যাতন করার জন্য, ক্রসফায়ার দেওয়ার জন্য এরা এতো দক্ষ ও তৎপর যে এদের তুলনা পাওয়া খুব মুশকিল।’
রিজভী বলেন, ‘আজকে কেন দুস্কৃতিকারীরা এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, আজকে কেন প্রশাসন নির্বিকার। এটাতে রাষ্ট্রের মদদ আছে। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পত্তি হত্যার ব্যাপারে। আমি কি বেডরুমে পাহারা বসাবো। এই কথা বলার মধ্য দিয়ে কিন্তু দুস্কৃতিকারীরা প্রশ্রয় পেয়ে গেলেন, উদ্ধুদ্ধ হয়ে গেলেন যে, ধুর প্রধানমন্ত্রী তো আমাদেরকে শেল্টার দেন। এই প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে বেরিয়েছে না –একটা মারলে ১০টা মারো, তোমরা কী চুরি পড়ে থাকো..। যিনি অপরাধীদেরকে অপরাধ করতে বলছেন বেআইনিভাবে। সেজন্য আজকে বেপরোয়া তারা। আজকে যদি মন্ত্রীরা বলেন, আরে এরকম পৃথিবীর সব দেশেই হয়। যখন মন্ত্রীরা এরকম কথা বলেছেন তখন এমসি কলেজের সেই নারীর ওপর হামলাকারী দুস্কৃতিকারীরা আরও আশকারা পেয়ে গেছে, যখন তথ্য মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত এসমস্ত ইয়ের জন্য দায়ী, তখন ওরা আশকারা পেয়ে গেছে-আমাদের আর কিছুই হবে না।”
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব বলেন, ‘সরকারের পায়ের নিচের মাটি একবারে টলমল করে উঠেছে, মাটি কাঁপছে। অতএব দৃষ্টিটাকে অন্য দিকে ফেরাতে হবে। সারা দেশে নারী নির্যাতন ও নারীর সম্ভ্রমহানির যে কলঙ্কিত রূপ এই আওয়ামী লীগের আমলে বিস্তার লাভ করেছে এই থেকে মুক্তি পেতে আজকে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। এ ব্যাপারে ওলামা দলকে এগিয়ে আসতে হবে।’
সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা অধ্যক্ষ শাহ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদারের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ওলামা দলের মাওলানা সেলিম রেজা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
More Stories
উগ্রবাদীদের সাথে সরকারের একটি অংশ মিলে হিন্দুদের উচ্ছেদে চেষ্টা চালাচ্ছে: চিন্ময় কৃষ্ণ দাস
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী অভিযোগ করেছেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে যেখানেই আন্দোলন হয়েছে, সেখানেই...
আ.লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: নুর
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে...
গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গে জড়িতরা...
আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেন জামায়াত আমির
সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আমির...
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...