Read Time:7 Minute, 12 Second

‘বাঙালি জাতিসত্তার কবি’ হিসেবে পরিচিত একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা’র জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন।
তার পিতা মরহুম হাজী মোহাম্মদ সেকান্দর সওদাগর, মাতা আঞ্জুমান আরা বেগম। তিনি ১৯৫৯ সালে পূর্ব পোকখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে মেধা-বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে ঈদগাঁও হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে ঈদগাঁও হাইস্কুল থেকে এসএসসি (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় (কলা বিভাগে) কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি। তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অনার্স ও পরের বছর মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
এরপর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তালশহর কলেজের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে থাকেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি রাজধানী ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। সোহরাওয়ার্দী কলেজে অধ্যাপনার সময়ে তার প্রথম কাব্য ‘শোণিতে সমুদ্রপাত’ (১৯৭২) প্রকাশিত হয়।
১৯৭৩ সালে মুহম্মদ নূরুল হুদা বাংলা একাডেমিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি একাডেমিতে একটানা বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমিতে একটানা বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের আগস্টে নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক পদে যোগদান করেন এবং ২০০২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে আবার বাংলা একাডেমিতে ফিরে যান। পরে তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
বাংলা একাডেমিতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৮৫ সালে আমেরিকার হাওয়াইস্থ ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের সংস্কৃতি ও যোগাযোগ বিষয়ক ইন্সটিটিউটে গবেষক হিসেবে যোগ দেন এবং সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে ফিরে আসেন।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন গদ্য, করেছেন অনুবাদ, লিখেছেন চিকিৎসা শাস্ত্র (হোমিওপ্যাথিক) নিয়ে। বাংলাভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতেও লিখেছেন তিনি। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।
মুহম্মদ নূরুল হুদা’র প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য সম্মাননা ও পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), যশোর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩), আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী সংবর্ধনা (১৯৮৬), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কক্সবাজার পদক (১৯৮৮), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৪), উপন্যাসের জন্য), যুক্তরাষ্ট্রের আইএসপি ঘোষিত পোয়েট অব ইন্টারন্যাশনাল মেরিট ও পোয়েট অব দ্য ইয়ার সম্মানে ভূষিত (১৯৯৫), কবি আহসান হাবিব কবিতা পুরস্কার (১৯৯৫), তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সুলেমান ডেমিরিল কর্তৃক বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত (১৯৯৭), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত নজরুল জন্মশতবর্ষ সম্মাননা (১৯৯৯), কলকাতাস্থ ‘নজরুল ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক সম্মাননা (২০০০), জীবনানন্দ পুরস্কার (২০০১), কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (২০০১), সুকান্ত পুরস্কার (২০০৪), মহাদিগন্ত পুরস্কার (কলকাতা ২০০৭), চয়ন সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮), দেশব্যাপী ষাটবর্ষপূর্তি সম্মাননা (২০০৯), নগরচাবি কক্সবাজার (২০০৯), ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি পুরস্কার (২০১০), রূপসী বাংলা পুরস্কার- কলকাতা (২০১০), উতল হাওয়া পুরস্কার- কলকাতা (২০১০), একুশ-উনিশের ভাষাগৌরব সম্মাননা, ত্রিপুরা সরকার, ভারত (২০১২), নগরপ্রতীক কক্সবাজার (২০১২), সিটি-আনন্দ আলো কবিতা পুরস্কার (২০১৩), বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক-২০১৫, চর গড়গড়ি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।
তিনি বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব ও বাংলাদেশ রাইটার্স কপিরাইট সোসাইটির সভাপতি। তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ কপিরাইট বিশেষজ্ঞ হুদা জেনেভাস্থ আন্তর্জাতিক ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ওয়াইপো) কনসালট্যান্ট ও বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডের সদস্য।
সাংবাদিক হিসাবেও নূরুল হুদার রয়েছে চার দশকের অভিজ্ঞতা। সত্তরের দশকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বঙ্গকণ্ঠ-এ তার সাংবাদিকতার শুরু। তারপর দীর্ঘদিন তিনি ‘অধোরেখ’, ‘বিশ্বাস, ‘বহুবচন’, ‘বাংলা একাডেমি পত্রিকা’, ‘বাংলা একাডেমি জার্নাল’, ‘নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা’, ‘নজরুল ইন্সটিটিউট জার্নাল (ইংরেজি), ইত্যাদি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার সব আসামি খালাস
Next post ৪০০ সৌদি প্রবাসী আজ পাচ্ছেন ফিরতি টিকিট
Close