Read Time:6 Minute, 12 Second

জীবিকার সন্ধানে প্রতি বছর লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসে পাড়ি জমান। যারা বিদেশে যান তাদের বেশিরভাগই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন। একটু আর্থিক সচ্ছলতার জন্য ও দেশে অবস্থানরত বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেন না।

কেউ দু-চার বছর পর ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন সবার সঙ্গে কাটিয়ে আবার ফিরে যেতে হয় প্রবাসে। কিন্তু কারও কারও ভাগ্যে দেশে আর জীবিত ফিরে আসা সম্ভব হয় না। কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় কিংবা জটিল রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন। আত্মীয়-স্বজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় সরকারি খরচে তাদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। বিমানবন্দর থেকে লাশ পরিবহন ও দাফনসহ আর্থিক ক্ষতিপূরণও প্রদান করে সরকার।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৩৮ হাজার ২৪ জনের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আর চলতি বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজার ৬৯৮ জন প্রবাসীকর্মীর লাশ দেশে ফেরত আসে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীকর্মীর লাশের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি লাশ মাত্র দুটি দেশ-সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া থেকে এসেছে।

জানা গেছে, দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে যেকোনো প্রবাসীকর্মীর মৃতদেহ দেশে আসলে তাদের লাশ পরিবহন ও দাফন সম্পন্ন করার জন্য ৩৫ হাজার এবং আর্থিক সাহায্য হিসেবে তিন লাখ টাকা করে দেয়া হয়।

বছরওয়ারি (১৯৯৩ থেকে জুলাই ২০২০) পরিসংখ্যানে ফেরত আসা প্রবাসীকর্মীদের মৃত দেহের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৩ জন, ১২৮ জন, ২৪১ জন, ১৯৯ জন, ২৭৪ জন, ২৪৮ জন, ২৮৮ জন, ৪১২ জন, ৩৮৫ জন, ৫৯৭ জন, ৫১৯ জন, ৭১৬ জন, ৬৯১ জন, ৭১৮ জন, ৯৬৬ জন, এক হাজার ১৩৩ জন, এক হাজার ৩৬৪ জন, দুই হাজার ২১২ জন, এক হাজার ৮৬৯ জন, দুই হাজার ২০১ জন, দুই হাজার ৪১৯ জন, দুই হাজার ৭১৮ জন, দুই হাজার ৬৯৫ জন, দুই হাজার ৯৫১ জন, তিন হাজার ২৬৩ জন, তিন হাজার ৬৭৬ জন, তিন হাজার ৬৫৮ জন এবং এক হাজার ৪৩০ জন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট এক হাজার ৬৯৮ জন প্রবাসীকর্মীর লাশ ফেরত আসে। মোট লাশের মধ্যে জানুয়ারিতে ২৯৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৯ জন, মার্চে ১৪০ জন, এপ্রিলে ১৬ জন, মে-তে ১১৬ জন, জুনে ২৮২ জন, জুলাইয়ে ৩১০ জন এবং আগস্টে ২৮০ জন প্রবাসীকর্মীর লাশ দেশে ফেরত আসে।

বিভিন্ন দেশের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৪৫৪ জন, মালয়েশিয়া ৪২৯ জন, কুয়েত ১৬৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৬৯ জন, বাহরাইন ৪৭ জন, কাতার ১০০ জন, ওমান ১৭০ জন, সিঙ্গাপুর ১৯ জন, জর্দান ১৫ জন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুইজন, দক্ষিণ আফ্রিকা ১১ জন, ইতালি ১৭ জন, লেবানন ২৯ জন, গ্রিস চারজন, অস্ট্রেলিয়া একজন, মালদ্বীপ ১৫ জন, মরিশাস পাঁচজন, স্পেন চারজন, ইরাক ১৬ জন, তুরস্ক একজন, ব্রাজিল তিনজন, ব্রুনাই একজন, বেলজিয়াম দুইজন, মিশর তিনজন, লিবিয়া চারজন, দক্ষিণ কোরিয়া দুইজন, জাপান একজন ও অন্যান্য দেশ থেকে পাঁচজন প্রবাসীকর্মীর লাশ ফেরত এসেছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপ-পরিচালক (গবেষণা, পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ) জাহিদ আনোয়ার বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ মারা গেলে তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। লাশ ফিরে এলে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে লাশটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাশ দাফনের জন্য ৩৫ হাজার ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে তিন লাখ টাকার চেক দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় প্রবাসী শ্রমিকদের লাশ বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম এসেছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বিমান টিকিটের দাবিতে আজও রাস্তায় সৌদিপ্রবাসীরা
Next post বাংলাদেশিদের আকামার মেয়াদ আরও বাড়াল সৌদি
Close