Read Time:6 Minute, 23 Second

শতাধিক বাংলাদেশিকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের পর নিউইয়র্ক সিটি থেকে বাংলাদেশিসহ আরও ৮৩ অভিবাসীকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। একইসাথে সারা আমেরিকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও দুই হাজার অভিবাসীকে। এরা সকলেই গুরুতর অপরাধে লিপ্ত ছিল বলেও কর্তৃপক্ষ জানায়।

আইসের পরিচালক টনি এইচ ফ্যাম এ সংবাদদাতদাকে জানান, ‘এনফোর্সমেন্ট এ্যান্ড রিমুভাল অপারেশন্স’ তথা ইআরও কর্মকর্তারা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের অভিপ্রায়ে গুরুতর অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। এরা আদালতে দোষী সাব্যস্ত অথবা সাজাভোগের পর পুনরায় অপরাধে লিপ্ত কিংবা গুরুতর অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের পর পুনরায় ভিন্ননামে অথবা বেআইনী পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও আইসের মুখপাত্র এ সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন।

তারা উল্লেখ করেছেন, মেক্সিকো হয়ে সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়াদের মধ্য থেকে ১০১ জনকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আরও ৫ শতাধিক বাংলাদেশি টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, ফ্লোরিডা, আলাবামা, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, নিউজার্সি প্রভৃতি ডিটেনশন সেন্টারে রয়েছে। তাদেরকেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
জানা গেছে, নোয়াখালী, সিলেট, বৃহত্তর ঢাকা এবং রাজশাহী অঞ্চলের এসব যুবক দালালকে ২৫ লক্ষাধিক টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশে হয়ে ব্রাজিল এবং এরপর সেন্ট্রাল আমেরিকার দুর্গম পথ পাড়িয়ে দিয়ে মেক্সিকোতে অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করেন। এরপরই দালালেরা জীবনের ঝুঁকিতে ফেলে এসব বাংলাদেশিকে সীমান্তের ভেতরে ঠেলে দেয়ার পর তারা কেটে পড়ে। এরা সকলেই বিএনপির কর্মী দাবি করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হয়েছে। তবে তারা এমন দাবির সমর্থনে যথাযথ ডক্যুমেন্ট প্রদর্শন কিংবা দেশে ফিরিয়ে দিলে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হবে-এমন বিবরণীতে অভিবাসন দফতরকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি।
নিউইয়র্ক থেকে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে আলবেনিয়া, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, বেলারুশ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ডমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, এলসালভেদর, গুয়াতেমালা, গায়ানা, হন্ডুরাস, ভারত, ইসরাইল, ইটালি, জ্যামাইকা, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পেরু, পোল্যান্ড, রাশিয়া, ত্রিনিদাদ এবং উজবেকিস্তানের নাগরিকেরা। কর্মকর্তারা আরো জানান, অন্তত: ৫০ জনকে ইতিপূর্বে নিউইয়র্কের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তবে তাদেরকে আইসের কাছে সোপর্দ না করে জামিনে মুক্তি দেয়। অন্তত: ১৮ জনকে ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তিনজন নিজ দেশে গুরুতর অপরাধ করে পালিয়ে নিউইয়র্কে এসেছিল। ঐসব দেশের অনুরোধে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আইস আরো জানায়, ২০১৯ অর্থ বছরে দুই লাখ ৬৭ হাজার অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ৮৬% ছিলেন গুরুতর অপরাধী।
৪ সেপ্টেম্বর প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গতমাসে সাউদার্ন সীমান্ত অতিক্রমের সময় ৫০ হাজার বিদেশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলাকালে এভাবে সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার প্রবণতা কমলেও জুলাইয়ের পর পুনরায় ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

কাস্টমস এ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন চীফ মার্ক মরগ্যান জানান, বৈশ্বিক এ মহামারি সত্বেও লোকজনের আগমণের হার ঠেকানো যায়নি। দুর্গম পথে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সবচেয়ে বেশী মানুষ আসার চেষ্টা করছে টেক্সাস সীমান্ত দিয়ে।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, করোনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন’ তথা সিডিসির নির্দেশ অনুযায়ী সীমান্ত বেআইনীভাবে অতিক্রমের সময় গ্রেফতার হওয়াদের সাথে সাথে সীমান্তের ওপাড়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা জেনেও দালালরা মোটা ডলারের লোভে অসহায় লোকজনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মরগ্যান জানান, করোনায় তার ডিপার্টমেন্টের ১১ অফিসার মারা গেছেন এবং এখনও আক্রান্ত রয়েছেন ১০০০ জনের মত।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিসংঘের অনেক উদ্যোগ ছিল শান্তির সংস্কৃতির অনুরণন’
Next post মার্কিন অর্থনীতিকে জাহান্নামে পরিণত করছেন ট্রাম্প
Close