Read Time:5 Minute, 44 Second

রাজধানীর পল্লবী থানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অর্থের বিনিময়ে প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপকে ফাঁসাতে গিয়ে অসাবধানতার কারণে থানাতে বিস্ফোরিত হয় ওই বোমা। এরপরই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।

সম্প্রতি এ ঘটনায় মিরপুর বিভাগের পুলিশের ৬ শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলিও করা হয়। এ ঘটনায় আটকৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের দাবি, ওই বোমা বিস্ফোরণের দু’দিন আগে স্বজনদের বাসা থেকে তাদেরকে তুলে নেয়া হয়। এর মধ্যে একজনের নাম রফিকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে রফিকুলের স্ত্রী শিল্পী আক্তার ও মা জানান, রফিকুল ইট ও বালুর ঠিকাদারি কাজ করেন। ২৯ জুলাই থানায় বিস্ফোরণের দুদিন আগে (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় তাদের বাসার সামনে কালো মাইক্রোবাসে করে সাদা পোশাকে ৫ অস্ত্রধারী ব্যক্তি আসেন। এ সময় তারা ঘরে ঢুকে রফিকুলের মুখ চেপে ধরে এবং অস্ত্রের মুখে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।

তারা আরো জানান, এ ঘটনার পরপরই রফিকুলের স্ত্রী ও বোন পল্লবী থানায় যান। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাদের কোন সহযোগিতা তো করেইনি, এমনকি কথা পর্যন্ত বলেনি। উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এছাড়াও জিডি করতে গিয়েও ফিরে আসতে বাধ্য হন তারা। তবে রফিকুল প্রায় দেড় যুগ আগে একটি হত্যা মামলার আসামি। বর্তমানে ওই মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি।

সূত্র মতে, পল্লবী এলাকার যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল তাইজুল ইসলাম বাপ্পীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আর রফিকুল, শহিদুল ও মোশারফ হলেন রানা গ্রুপের সদস্য। তাই রানাকে শায়েস্তা করার জন্যই ওয়ার্ড কাউন্সিলের পরামর্শে থানার কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য এই বোমা নাটকটি তৈরি করেন। আর এই কাজের জন্য আড়াই কোটি টাকার লেনদেন হয় বলেও জানা গেছে।

আরো জানা গেছে, পরিকল্পনা মতো বাপ্পীর কাছে থেকে নেয়া এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক আটক দেখিয়ে তিনজনকে আদালতে পাঠানোর কথা ছিলো। প্রথমে শুধু অস্ত্র ও বোমাসদৃশ্য বস্তু দেখিয়ে জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়। বোমাসদৃশ্য বস্তু পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে। এর ভেতর বালু দেখে ফিরে যান বিশেষজ্ঞদল। তাই মামলাকে জোরালো করতে দ্বিতীয় দফায় আসল আইইডি ঢোকানো হয়। কিন্তু অদক্ষতার কারণে ওই সময়ই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। এতে ৪ পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন আহত হন।

এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ডিএমডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। কিন্তু জড়িত পুলিশ সদস্যরা তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একেকজন একেকরকম তথ্য দেন। আর এতে করেই সন্দেহ তৈরি হলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মনির হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে সিটিটিসির উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনো চলছে। এর সঙ্গে আরো বেশ কিছু ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে পারলে পুরো ঘটনা আরো পরিষ্কার হবে।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, পুলিশের ৬ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে তার মানে এই নয় যে তারাও এই ঘটনায় জড়িত। তবে এমন বিস্ফোরক উদ্ধারের পর যেসব দায়িত্ব পালন করার কথা ছিলো, তারা হয়তো তা যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি। সে কারণেও বদলির সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা পল্লবী থানার সদস্য।

এর আগে পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছিল, গত ২৯ জুলাই তিন ব্যক্তিকে আটক করার পর পল্লবী থানায় নেয়া হয়। এরপর ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা। ওই ৩ জন আসামি এখনো রিমান্ডে আছেন।

তবে এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাপ্পীর সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post পুতিনের কাছে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন চান দুতার্তে
Next post ভাগ্যই যেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় সহায়ক শক্তি
Close