১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে মুক্ত হলেন বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে আসা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস খন্দকার। করোনাভাইরাসের সংকটকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে মানুষের সেবা দিতে এসে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য হন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। অবশেষে ১৪ দিন পর কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
তিনি সেখানে লিখেছেন,
‘অবশেষে কোয়ারেন্টিনমুক্ত হলাম আমি। কেটে গেল ১৪টি দিন। সময় তো কাটবেই। থেকে যাবে কেবল স্মৃতি। এ মুহূর্তে কোনো অভিযোগ নয়, কেবল ধন্যবাদই দিতে চাই সবাইকে। যারা গত ১৪টি দিন আমার সঙ্গে ছিলেন। বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছেন, মানসিকভাবে শক্ত থাকতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তবে এ কথা আমাকে বলতেই হবে যে, শুরুটা বেশ কঠিনই ছিল আমার জন্য। আমার বিরুদ্ধে ‘‘অহেতুক’’ এবং ‘‘মিথ্যা অভিযোগে’’ বিরাট ঝড় উঠেছিল। সব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঝড়ও হয়তো থেমে গেছে।
যা বলছিলাম– দেশে আসার পর আমাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে দেওয়া হয়েছে; এ বিষয়টি আমি প্রথম পাঁচ দিন মানতেই পারছিলাম না। কেননা আমার অ্যান্টিবডির সনদ ছিল। তখন মানসিকভাবে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু, সুধীজন, সহযোদ্ধা, সাংবাদিক এবং দেশের মানুষের সহায়তা ও সমর্থন আমাকে সাহস জুগিয়েছে।
দেশে এসেছিলাম কয়েক সপ্তাহ দেশবাসীর জন্য কাজ করব বলে। সঙ্গে ছোট্ট একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তুলে যাব, এমন আশা ছিল। সে লক্ষ্যেই দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্য এসেছিলাম। যদিও সময় কিছুটা ক্ষেপণ হয়ে গেছে। এর পরও আমি মনে করি, কোনো আক্ষেপ নেই আমার। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিছুটা কাজ করে যাব। তবে সঙ্গে নিয়ে যাব গত দুটি সপ্তাহে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু ও অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে যেসব সৈনিক ভাইয়েরা আমার সঙ্গে ছিলেন, তারা অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। অনেক সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের মমতা কোনো দিন ভুলবার নয়। সেই সঙ্গে কুয়েতপ্রবাসী কিছু ভাই শেষের দিকে কোয়ারেন্টিনে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের ভালোবাসায় ভরা স্মৃতিগুলোও বাকি জীবন আমার সঙ্গে থাকবে। কখনও যদি দেখা হয়, নিশ্চয়ই ভালো লাগবে; বুকে জড়িয়ে ধরব আপনাদের। দেখা না হলেও আপনাদের আমার সবসময় মনে থাকবে।
দেখুন, আমি অতিসাধারণ একজন চিকিৎসক। তবে দেশকে, দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসি। এসেছিলাম, দুর্যোগের এ সময়টায় কেবলই দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ বা ইচ্ছা আমার ছিল না, নেইও। ফলে যারা তেমনটি ভেবেছিলেন, আশা করছি আপনাদের ভুলটা ভেঙেছে। বাংলাদেশের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারির যোদ্ধারা করোনার এ সময়টায় রীতিমতো জীবনবাজি রেখে লড়াই করছেন। তাদের আত্মত্যাগ এ জাতি সব সময়ই মনে রাখবে। সামনের দিনগুলোতেও তারা এমনিভাবে লড়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি এ মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিষয়ক ছোট্ট একটি সেটআপ করে দ্রুতই নিউইয়র্কে ফিরে যাব। কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মায়ের বিরুদ্ধে সন্তানের কোনো অভিযোগ থাকে না। আমারও নেই। আবারও দেখা হবে। ভালোবাসা বাংলাদেশ। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন। আপনাদের মঙ্গল হোক।’
More Stories
‘মার্চ ফর গাজা’য় বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ পুনর্বহালের দাবি
গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের কর্মসূচি ‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ (ইসরাইল ব্যতীত) লেখাটি...
সরকারের একমাত্র কাজ শেখ হাসিনার বিচার করা: মৎস্য উপদেষ্টা
শেখ হাসিনার বিচার এই মাটিতে এই সরকারের আমলেই হতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র কাজ যদি কিছু থাকে, সেটা হবে শেখ...
‘প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন’
দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক...
ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য...
পুরোপুরি পুড়ে ছাই ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৈরি হওয়া দুটি প্রতীকী মোটিফে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকালে...
‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’তে আগুন
চারুকলায় নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ভাস্কর্যে আগুন দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তা এখনো শনাক্ত করতে...