Read Time:6 Minute, 52 Second

কুয়ালালামপুরের বৃহত্তম পাইকারি মাছ, মাংস ও কাঁচাবাজার সেলায়াং (পাসার বোরং)। যেখানে কাজ করতেন বাংলাদেশি, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের কয়েকশ অভিবাসী শ্রমিক। কোভিড- ১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে সেখানে এখন কপাল পোড়ার দশা তাদের। সম্প্রতি বাজার এর আশেপাশের ভবনগুলোতে অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বাজারে বিদেশি শ্রমিকদের কাজ করতে দেয়া হবে না। তাদের পরিবর্তে অগ্রাধিকার ভিওিতে স্থানীয়দের দ্বারা কাজের মাধ্যমে বাজার চালানোর প্রক্রিয়ায় চলছে বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ার সবজি বাজারে বিদেশি কর্মী নয়, চাকরি দেয়া হবে স্থানীয়দের। এমন উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি বাজারে বহু বিদেশী কর্মীর উপস্থিতি সম্পর্কেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আবার কেউ কেউ সরকারের এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বলছেন, বিদেশি শ্রমিকদের বাদ দিয়ে স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ করা হলে পুরো বাজার ব্যবস্থায় এক বিপর্যয় পরিবেশের সৃষ্টি হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে বৈধভাবে ২.২ মিলিয়ন এর সাথে আরও আনুমানিক ৩ মিলিয়ন অবৈধ কর্মী কাজ করছে। মহামারি করোনা ভাইরাস রোধে গত দু’মাসে অনেকে চাকরি হারিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচাবাজারে কাজ করতে হলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সাথে অভ্যস্ত হতে হবে। যেমন দুর্গন্ধ, নোংরা পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাজ করে যাওয়া। স্বল্প বেতনে মাসিক বা সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াই টানা কাজ করা। স্থানীয় মালয়েশিয়ান নাগরিকরা বেশিদিন এ কাজ করতে পারবে না। কারণ তারা এমন পরিবেশে কাজ করতে অভ্যস্ত নন।

ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, স্থানীয় কিছু কর্মচারী ভাল ও অনুগত থাকলেও কাজের প্রকৃতি এবং উচ্চ প্রত্যাশার কারণে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ এক মাস স্থায়ী হয়নি।

সরকারের পর্যবেক্ষনে বলছে, বাজারে বেশিরভাগ বিদেশীদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়ে থাকে। স্থানীয় মালিকগণ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে এসে ভাড়া সংগ্রহ এবং অন্যান্য তদারকি করতেন।

এ ক্ষেত্রে আবার কিছু সংখ্যক স্থানীয়রা বলছেন, বাজার পরিচালনায় স্থানীয়রা উপযুক্ত। তবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য কিছু সংখ্যক স্থানীয় মায়েশিয়ান নাগরিকই দায়ী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে দীর্ঘদিন কাজ করা কয়েক প্রবাসী জানান, এই সবজি বাজারে যদি মালয়েশিয়ানদের কাজ দেয়া হয় তাহলে তারা খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না বা তারা এই কাজে বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। ওই প্রবাসী তার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, মালয়েশিয়ানদের জীবন আমাদের মত সংগ্রামের নয়। তারা এই ধরনের পরিস্থিতিতে কাজে অভ্যস্ত নয়।

আমরা বছরে মাত্র ১০ দিনের মত ছুটি পাই। আবার কোন কোন মাসে একদিনও ছুটি পাই না। আর যদি একদিন ছুটি পাই তবে ঐদিন আমাদের মালিক বলবে দোকান পরিষ্কার করে দিতে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায় দোকান পরিষ্কার করতে আমাদের ঐ একদিন ছুটির অর্ধেক দিন কেটে যায়। কিন্তু এই পরিমাণ শ্রম যদি স্থানীয়রা দিতে আসে তাহলে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করবে। যা দোকান মালিকদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।

কুয়ালালামপুর ভেজিটেবল হোলসিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওং কেনং ফ্যাট বলেছেন, সবজিগুলি আনলোড এবং আনতে চার স্থানীয় লোকের ভাড়া নেওয়া দরকার। যেখানে মালয়েশিয়ানসহ প্রায় ১০,০০০ বিদেশী কর্মী, যারা বেশিরভাগ পাইকারি বাজারে কাজ করেছিলেন।

বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে, যখন প্রতিদিন বাজার আবার খোলা হবে। তবে এখন ফলমূল, শাকসবজি এবং সীফুড বিক্রির জন্য প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী এখন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।

কুয়ালালামপুর হোই সিওং ফিশ পাইকার সমিতি, বাজারে বিদেশী কর্মীদের বৈধতায় একটি উপযুক্ত চ্যানেল তৈরি করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছে।

সমিতির চেয়ারম্যান সিং কিয়ান হক বলেছেন, তাঁর মতো ব্যবসায়ীরা বিদেশি শ্রমিকদের কাজের পারমিট পাওয়া মুশকিল। “তবে, বিদেশি কর্মীদের উপর নির্ভরতা অনিবার্য কারণ তারা কাজ করতে আরও আগ্রহী।” আমরা দু’বছর আগে বিভিন্ন বিভাগে এই সমস্যাগুলি তুলে ধরেছি।

মি. সিং বলেছেন, বিদেশি শ্রমিকদের পরিচালনা করার একমাত্র উপায় ছিল বৈধ করার জন্য একটি সিস্টেম তৈরি করা এবং বাজারে তাদের সংখ্যার সীমা নির্ধারণ করা।

তবে বাজারে দেশী এবং বিদেশী কর্মীদের একটি সহাবস্থান থাকা উচিত বলে মনে করছেন মি. সিং।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত
Next post ডিএসসিসির আরেক কর্মকর্তাকে অপসারণ করলেন তাপস
Close