Read Time:4 Minute, 3 Second

‘দেশে অনেক সময়, অনেক দুর্যোগ দেখেছি। আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল দুর্যোগে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। করোনার মহামারি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। জুতা সেলাই করে কিছু টাকা জমিয়েছি। কিন্তু করোনার দুর্যোগে না খেয়ে থাকা মানুষের কষ্ট দেখে ঘর করার ইচ্ছা মরে গেল। দীর্ঘদিনের জমানো ২০ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়ে দিলাম আমি। আশা করি, এতে একটু হলেও দরিদ্র মানুষের উপকার হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দেওয়ার পর এমনটাই বললেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার দরিদ্র হরিজন রবি দাস।

আজ সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন ভূঁইয়ার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন রবিদাস।

করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে কার্যত লকডাউন সারা দেশ। এক মাস ধরে ঘরবন্দী মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। কবে নাগাদ শেষ হবে করোনা দুর্যোগ তা জানা নেই কারও। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন অনেকেই। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে দিচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী। আবার কেউ কেউ করছেন ত্রাণ চুরি। ত্রাণ চুরিতে অনেক জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। ত্রাণ চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইতিমধ্যে ৩৫ জন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জাতীয় এই দুর্যোগে যখন জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ চুরিতে ব্যস্ত তখন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিরল দৃষ্টান্ত দেখালেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের দলিত সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। তার নাম মিলন রবিদাস (৩৭)। তিনি মূলত একজন হরিজন (মুচি)। জুতা সেলাই করে সংসার চলে তার।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন ভূঁইয়া বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার কাছে এটা অবাক করার মতো ঘটনা। একজন হরিজন সারাদিন জুতা রং করে, সেলাই করে। সেই ঘাম ঝরানো টাকা করোনার সময় অসহায় মানুষের জন্য সরকারি তহবিলে দেওয়াটা নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভাবের কারণে পঞ্চম শ্রেণিতেই পড়ালেখার পাঠ চুকে যায় রবিদাসের। প্রায় ২০ বছর আগে মারা যান বাবা মতিলাল। এরপর বাবার পেশাকে আঁকড়ে ধরে সংসারের ঘানি টানতে শুরু করেন রবিদাস। মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের পাশে জুতা সেলাইয়ের দোকান দিয়ে বসেন তিনি। যেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে জেঠার জমিতে বসবাস করছেন। মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে এবং ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। অভাব-অনটনের মাঝেও দুই শতাংশ জমি কিনেছেন রবিদাস। কিন্তু বাড়ি-ঘর বানানো হয়নি এখনও তার।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ইতালিতে উঠছে লকডাউন, খুলছে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ-বার
Next post নিউইয়র্ক নগরীর ২৫ শতাংশ বাসিন্দাই করোনায় আক্রান্ত
Close