চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ধাওয়া করে আটক করা হয়েছিল লি জেহুয়াকে। দুই মাস পর তার সন্ধান পাওয়া গেল।
করোনাভাইরাস মহামারির বিষয়ে বিশ্বকে প্রথম যে কজন মানুষ সতর্ক করেছিলেন, তাদের মধ্যে একজন লি জেহুয়া। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে ধাওয়া করা হয় বলে নিজেই জানান তিনি। পরে তাকে আটক করা হলে আর দেখা সন্ধান মেলেনি।
সম্প্রতি বুধবার এক ভিডিওবার্তায় আবার প্রকাশ্যে আসেন ২৫ বছর বয়সী লি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয় লি জেহুয়া জানান, অন্যদের মতো তিনিও উহানে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল যে ‘সংবেদনশীল অঞ্চলে’ থাকায় তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
কে এই লি জেহুয়া
লি জেহুয়া একজন নাগরিক সাংবাদিক। চেন কিউশি নামের এক সাংবাদিক নিঁখোজ হয়েছেন জেনে গত ফেব্রুয়ারি মাসে উহানে যান লি। নিজের প্রথম ভিডিওতে উহানে কেন গিয়েছিলেন সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি উহানে যাওয়ার আগে মূলধারার সাংবাদিক আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিলেন, মহামারি সম্পর্কে সব খারাপ খবর কেন্দ্রীয় সরকার সংগ্রহ করছে। স্থানীয় মিডিয়া কেবল রোগীদের সুস্থ হওয়ার খবর জানাতে পারছিল। তবে এই তথ্য সত্য কি না, তা জানতাম না। কারণ, এগুলো কেবল বন্ধুদের মুখে শুনেছিলাম।’
লি জেহুয়া সংক্রমণের বিষয়ে নানা অভিযোগ তুলে খবর তৈরি করেন। একটি লাশ পোড়ানোর জায়গার ভিডিও ছিল, যেখানে হরদম কাজ হচ্ছিল। তার এই ভিডিও চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব ও টুইটারে কোটি মানুষ দেখে।
২৬ ফেব্রুয়ারি কী হয়েছিল?
নতুন ভিডিওতে ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনা সম্পর্কে লি জানান, সেদিন তিনি উহানে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাকে আরেকটি গাড়ি ধাওয়া করে এবং থামতে বললে তিনি গাড়ি না থামিয়ে বরং গতি বাড়িয়ে দেন। ওই গাড়িটি তাকে ১৯ মাইল ধাওয়া করে। পুরোটা সময় ভিডিওতে থেকে তিনি এসওএস বার্তা দেন।
লি জেহুয়া বাসায় পৌঁছার পর পুলিশের পোশাক পরা বেশ কয়েকজন ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। তিনি ঘরের আলো বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকেন। এ সময় বাইরে কড়া নাড়তে থাকে পুলিশ। তিনি সাড়া দেননি। তিন ঘণ্টা পর আবার আসে কড়া নাড়ে তারা। এবার দরজা খুললে তাকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে ‘জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে’ তোলার আগে আঙুলের ছাপ এবং রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। তাকে বলা হয়, জনসাধারণের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করছেন, এমন সন্দেহে তাকে আটক করা হয়। তবে কোনো শাস্তি হবে না। পরে যেহেতু তিনি মহামারি এলাকায় ছিলেন তাই তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়।
এর পর কী হয়েছিল
লি জেহুয়া পুলিশ প্রধানের তত্ত্বাবধায়নে উহানে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। সেখানে তার ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে নেওয়া হয়। দুই সপ্তাহ সেখানে ছিলেন তিনি। জেহুয়া জানান, তিনি নিরাপদে ছিলেন এবং চীনা টিভি সম্প্রচার দেখতে পারতেন। পরে তাকে সেখান থেকে তার শহরে এনে আরও দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। পরে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।
তবে পুরো সময় পুলিশ তার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করেছে বলে নতুন ভিডিওতে বলেন তিনি। খাবার, বিশ্রামসহ সবকিছুর সুব্যবস্থা ছিল। পুলিশ খুব যত্ন নেয় তার।
তবে লি জেহুয়ার বন্ধু চেন কোয়েশি এখনো নিঁখোজ। টানা ৭৫ দিন ধরে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফ্যাং বিং নামের আরেক সাংবাদিকেরও কোনো খোঁজ মেলেনি এখনো।
More Stories
পেন্টাগন থেকে ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনার নথি ফাঁস
ইসরায়েলে ১ অক্টোবর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনার নথির সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও...
হামাসপ্রধান সিনওয়ার নিহতের গুঞ্জন, খতিয়ে দেখছে ইসরায়েল
হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় নিহত হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে...
বাংলাদেশিসহ সব শান্তিরক্ষীকে সরিয়ে নিতে বললেন নেতানিয়াহু
লেবাননে শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্বরত সব সেনাকে সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রোববার...
ইয়েমেনে সম্মিলিত বিমান হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
ইয়েমেনের হোদেইদাহ বিমানবন্দর, সানা এবং ধামার সিটিকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ইয়েমেনের হুথি সমর্থিত টেলিভিশন চ্যালেন...
মুসলিমদের শত্রু এক: খামেনি
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, আমরা যদি এক হতে পারি...
ইসরাইলকে আরও কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল যদি ‘সর্বনিম্ন ভুল’ করে তাহলে তেহরান নিশ্চিতভাবে আরও ‘শক্তিশালী এবং কঠোর প্রতিক্রিয়া’...