Read Time:6 Minute, 59 Second

করোনাভাইরাস কারণে সৃষ্ঠ অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার পরে বাহরাইনে নতুন করে বিদেশি শ্রমশক্তি নিয়োগ দেওয়া শুরু হবে এবং সেখানে বাংলাদেশিদেরকাজের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ইতোমধ্যে বাহরাইনে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি শ্রমিকদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। এর ফলেওই দেশে অবস্থিত আনুমানিক ৫০ হাজার বাংলাদেশি উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাহরাইনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সূত্রে এই তথ্যজানা গেছে।

শুধু তাই না, দেশটির সরকার ১১৪০ কোটি ডলার প্রনোদণা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যা ওই দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ। এর বড় অংশ পাবেবেসরকারি খাত।

এ বিষয়ে বাহরাইনে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রনোদণার ফলে এক বছর থেকে পাচঁ বছর মেয়াদী চাকরির নতুন বাজার তৈরির সম্ভাবনা দেখাদিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে ওই বাজার ধরার জন্য।’

বর্তমানে বাহরাইনে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। এদের বেশিরভাগই নির্মাণ ও সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াএকটি অংশ রয়েছেন ব্যবসায়ী, কুক, ড্রাইভার, কার্পেন্টার।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে পর্যটন, তথ্য প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সেবাসহ অন্যান্য খাতে লোক প্রয়োজন হবে এবং সেখানে বাংলাদেশিদের কাজ পাওয়ার সুযোগআছে।’
নজরুল বলেন, ‘এদেশে লোক দরকার এবং সঠিক প্রশিক্ষিত কর্মজীবী পেলে তারা লোক নিতে আগ্রহী। ওই প্রনোদণা প্যাকেজের কারণে ভবিষ্যতে আরও লোকপ্রয়োজন হবে।’

এ মাসের প্রথম সপ্তাহে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর মেয়াদ থাকবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। যাদের ওয়ার্কপারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বা চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে অবৈধ হয়েছে তারা আবেদন করতে পারবেন। তবে যারা পর্যটক ভিসা নিয়ে বাহরাইনে গেছেনতারা আবেদন করতে পারবেন না। যারা আবেদন করবেন তাদের কোনও জরিমানা দিতে হবে না। এছাড়া আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিদেশিদের মাসিক ফি মওকুফকরেছে ওই দেশের সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত নজরুল বলেন, আমাদের হিসাব মতে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশির আবাসিক কার্ড নেই এবং এর ফলে তারা উপকৃত হবেন।’

এর মধ্যে একটি বড় অংশ বাহরাইনে বৈধ হয়ে যাবে এবং আরেকটি অংশ দেশে ফেরত যাবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত।

উল্লেখ্য, শেষ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওই সময়ে ৪২ হাজারের বেশি বিদেশি এর সুবিধা নিয়েছিলেন। তখন প্রায় ৩২ হাজার বৈধহয়েছিলেন এবং ১০ হাজারের বেশি ফেরত গিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ’সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কারণে পাসপোর্ট প্রদানসহ অন্যান্য কনস্যুলার সংক্রান্ত যে বাড়তি কাজ তৈরি হবে তার জন্য ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতিনিয়ে রেখেছি।’

অবৈধভাবে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশির পাসপোর্ট নেই তারা আবেদন করা শুরু করেছে এবং তাদের জন্য বাড়তি লোকবল নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছেবলে জানান রাষ্ট্রদূত।

পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ’আমরা দ্রুততার সঙ্গে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

নজরুল বলেন, ’আমরা বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে প্রচারণা চালাচ্ছি যাতে করে তারা এই সুবিধা নেয়। অন্যদিকে এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরাযোগাযোগের চেষ্টা করছি যাতে করে তারা বাংলাদেশিদের সুযোগ দেয়।’

চলমান সংকটের কারণে বাহরাইনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ার কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বৈধভাবে অবস্থানরত প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি চাকরি হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এক লাখের ওপরেবাংলাদেশির চাকরির সমস্যা না হলেও বেতন কমে যেতে পারে বলে আমরা অনুমান করছি।’

এদের একটি অংশ দেশে ফেরত যেতে পারে এবং সামগ্রীকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

উল্লেখ্য, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা নিয়েছে যার অধীনে ফেরত আসা প্রবাসীদের সাত লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজারের মতো বাংলাদেশির সহায়তার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজারের এখনই খাদ্যসহায়তার দরকার বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

নজরুল জানান, ’খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে যেটি আগামী মাস পর্যন্ত চালু রাখা হবে এবং ইতোমধ্যে এ জন্য আমরা একটি বরাদ্দ পেয়েছি। এছাড়াএখানে স্বচ্ছল বাংলাদেশি সম্প্রদায় ও দাতব্য সংস্থার সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ রাখছি যাতে তারা দুস্থদের সহায়তা দেয়।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টায় ৪৪৯১ জনের মৃত্যুর রেকর্ড
Next post যুক্তরাষ্ট্রে ঘরে থাকার নির্দেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
Close