Read Time:7 Minute, 31 Second

দেশে দেশে করোনার ভয়াল থাবায় বিপন্ন আজ মানব সভ্যতা। সারা বিশ্বের মানুষ এক হয়ে লড়াই করছে করোনার বিরুদ্ধে। কিন্তু, এই যুদ্ধে বিজ্ঞানও যেন এখনও পথ দেখাতে পারছে না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই ভাইরাসের সঠিক প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চললেও দিশা এখনও মেলেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কোভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রুত এই টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, তার আগে এক ভাইরাসের থাবায় সারা পৃথিবীই যেন লকডাউন! দেশে দেশে শুধু মৃত্যুর মিছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। তাদের কষ্ট যন্ত্রণা, ভাবনা চিন্তার মধ্যেই রয়েছে দেশবাসী ও দেশে থাকা পরিবারের জন্য উদ্বেগ। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন এমনই কয়েকজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, করোনায় আক্রান্ত জনসংখ্যার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন সবার শীর্ষে। ডব্লিউএইচও এর হিসেব বলছে, ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন লাখ ৩৩ হাজার ৮১১ জন। আর মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৫৯ জন। তবে দেশটির মেরিল্যান্ডের জনস হকপিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেব বলছে, এই সংখ্যা এরচেয়েও খানিকটা বেশি। নিউইয়র্ক টাইমস ৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় তাদের অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বলছে ১০ হাজার ৯৩৮ জন। অর্থাৎ করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দেশটিতে প্রায় ১১ হাজার ছুয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের বাসিন্দা সেলিনা আক্তার জানান, অনেক ভয়েই আছি। নিজের চেয়ে দেশের আপনজনদের জন্যে। এইখানে সবকিছু খুব গোছানো। অকারণে বের হলেই পড়তে হচ্ছে জেল জরিমানার মুখে। তবে ভয় পাচ্ছি, আশেপাশে অঞ্চলগুলোর খবর পেয়ে। বিশেষ করে নিউইয়র্কের। সেখানে অনেক বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাচ্ছি আমরা। একই কথা বলেন মিসিসিপির বাসিন্দা সীমা ভৌমিক।

নিউইয়র্কে থাকেন হোসেইন। তিনি বলেন, পরশুদিন আমাদের পাশের বাসার একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ভয়ে দরজাও খুলছি না। এখানের অবস্থা ভালো না। আতঙ্কিত অবস্থায় সবার দোয়া প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে থাকেন রুমানা আফরীন। তিনি জানান, সেখানে সব কিছু বন্ধ করা হয়নি। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। তবে সবাই খুব সতর্ক। ফলে ভয়ের তেমন কিছু নেই। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ভালো হওয়ার কারণে আমাদের ভয় তেমন লাগছে না। তবে সাবধানে আছি।

যুক্তরাজ্যে ৫১ হাজার ৬০৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫ হাজার ৩৭৩ জন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে আইসিউতে রয়েছেন। করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া জনসনের আইসিইউতে ভর্তি ব্রিটেনের জনগণের মনোবল ভেঙে দিয়েছে।

কানাডার এডমনটন শহরে থাকেন আফরোজা সুলতানা। তিনি জানান, সবাই কাজে যাচ্ছেন না। কেউ কেউ কাজে যাচ্ছেন। যারা যেতে পারছেন না তাদের সরকার ফিন্যান্সিয়াল বেনিফিট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে । নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা খুবই ভালো এখানে। জনসংখ্যাও বড় বিষয়। কম জনসংখ্যা থাকার কারণে এইখানে আমরা ভয় কম পাচ্ছি। তবে নিজের দেশের আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে ভয় পাচ্ছি। খুব কষ্ট হচ্ছে সবার জন্য।

কানাডায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৬৭ জন। আর মারা গেছেন ৩২৩ জন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দেশের অধিবাসীদের নিরাপদে থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। শুরুতে নমনীয় থাকলেও উদার ট্রুডো কানাডার জনসাধারণকে বাঁচাতে শেষে কঠোর হয়েছেন।

উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন মেহেরীনা জামান সাইম। দুই মেয়ে নিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে সেখানেই বসবাস করছেন তারা। মেহেরীন জানান, আমরা সবাই বাসায় থাকছি। অন্য দেশ থেকে কেউ এলে তাকে ১৪ দিনের আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। ফুডকোর্ট, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, পার্ক সব বন্ধ। মল, রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে ভূতুড়ে পরিবেশ। যেখানে মানুষ গিজগিজ করতো, সেগুলো এখন জনমানবহীন। কেউ অকারণে বের হলে এক হাজার ডলার জরিমানা করা হচ্ছে। তবে সরকারের পদক্ষেপে আমরা খুশি। কারও সন্দেহ হলেই সে টেস্ট করতে পারছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ভালো এখানে।

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে ১২ হাজার ৪৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন আর ২৪৩ জন মারা গেছেন।

তবে এসবের মধ্যে ব্যতিক্রম সুইডেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সুইডেনে থাকেন মল্লিকা দত্ত। তিনি জানান, এখানে কোনও কিছুই বন্ধ নাই। সব খোলা। তবে জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে সামাজিক দূরত্ব মানা সহজ এইদেশে। আগে বাস বা ট্রেনে যেভাবে বসা হতো এখন সেভাবে না বসে চার ফিট দূরে দূরে বসতে হয়। স্টেশনেও তাই। এদেশের মানুষ এমনিতেই দূরত্ব রেখে চলে। তবে ভয় পাচ্ছি। কখন নিজে আক্রান্ত হই। কিছুই করার নাই। কাজ তো করতেই হবে। বাচ্চাদের স্কুল খোলা।

সুইডেনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ২০৬ জন আর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৭৭ জন।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post করোনায় মৃতের সংখ্যা ৮২ হাজার ছাড়িয়েছে
Next post করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড
Close