Read Time:9 Minute, 0 Second

আহমেদ ফয়সাল (যুক্তরাষ্ট্র) : প্রবাসী কমিউনিটি, আপনারা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন যে- এই মূহুর্তে চিনের পরে দক্ষিণ কোরিয়াতে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকাতে কোরিয়ানদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়াতে। আর ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেস সিটিতেই লক্ষাধিক কোরিয়ান কোরিয়ান জনতার বসবাস, যাদের সিংহভাগ-ই কোরিয়াটাউনে বসবাস করেন। লস এঞ্জেলেস সিটির ব্যাবসায় বানিজ্যের এক-পঞ্চমাংশ কোরিয়ান কমিউনিটি নিয়ন্ত্রণ করে। এসব নানা কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে লস এঞ্জেলেসের পরিবহন যোগাযোগ (ফ্লাইট+শিপ) এখনো অব্যাহত আছে। এমতাবস্থায় ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটস হেলথ্ ডিপার্টমেন্ট ক্যালিফোর্নিয়াতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পরার আশংকা ব্যাক্ত করছেন! আমেরিকার বুকে বাংলাদেশীদের’ও অন্যতম বৃহৎ কমিউনিটি রয়েছে এই লস এঞ্জেলেসে, যেখানে কোরিয়াটাউনের সাথেই রয়েছে ‘লিটল বাংলাদেশ কমিউনিটি’। শোনা যাচ্ছে, আমাদের অতি নিকটে কোরিয়াটাউনে গত কয়েকদিনে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। আপনারা আরো জানেন যে, কোনো সরকার কিম্বা প্রশাসনিক কতৃপক্ষই সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ ছাড়া এসংক্রান্ত সঠিক কোনো তথ্য দেয়না। এমতাবস্থায় আমাদের সকলকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে সতর্ক হওয়া ভীষণ জরুরী। যেভাবে সতর্ক থাকবেনঃ ইতিমধ্যেই মুসলিম কমিউনিটির পক্ষ থেকে গত জুম’আর খুৎবায় অনেক মসজিদেই কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আপাততঃ কেহ যেন পরিচিত অপরিচিত কারো সাথেই হ্যান্ডশেক ও হাগিং না করি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেহ যেন দীর্ঘক্ষণ পাব্লিক প্লেসে অবস্থান না করি। পাবলিক ট্রান্সপোর্টেসন ব্যাবহারেও যেন সতর্ক হই। কর্মস্থলে কিম্বা সম্ভব হলে সাথে করে যেন হ্যান্ড স্যানিটেজর বহন করি। বাহির থেকে ঘরে ফিরে কোথাও টাচ করার আগে যেন সোজা বাথরুমে ঢুকে হ্যান্ড ওয়াশ করে নেই। কেহ ঘনঘন হাঁচি দিলে তার নিকট থেকে যেন দূরে অবস্থান করি। নিজে হাঁচি দিলে হাত অথবা শরীরের কাপড়ের মাঝে কাভার করি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে প্রাকৃতিক ভিটামিন সি যতটা সম্ভব ব্যবহার করুন। প্রতিদিন এক কাপ গরম পানির সাথে একটা লেবুর এক-তৃতীয়াংশ লেবুর রস পান করতে পারেন। তাইওয়ান ও জাপানের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও দীর্ঘদিন তার লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তারা বলছেন, করোনভাইরাসের লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট ও জীবাণুর বৃদ্ধি ঘটাতে ২৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে এই সময়ে রোগীর জ্বর আসবে ও কফ জমবে। এই সময়ের পর রোগী হাসপাতালে আসলে দেখা যায় তাদের ফুসফুস প্রায় ৫০ শতাংশ ফাবব্রোসিস হয়ে গেছে। এর অর্থ, রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। আপনি নিজেই যেভাবে করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে পারেন : তাইওয়ানের ডাক্তাররা করোনাভাইরাস সনাক্তের একটি উপায় বের করেছেন, যা একজন রোগী নিজেই প্রতিদিন সকালে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে দীর্ঘশ্বাস টেনে যদি আপনি কোন কাশি, অস্বস্তি, গুমোটভাব ছাড়াই সফলভাবে নিঃশ্বাস ছাড়তে পারেন তবে এটি প্রমাণ করে যে আপনার ফুসফুসে কোনও ফাইব্রোসিস বা কোনও সংক্রমণ নেই। এছাড়া মারাত্মক করোনাভাইরাসের চিকিৎসা শেষে রোগটি সম্পর্কে দারুণ পরামর্শ দিয়েছেন জাপানি চিকিৎসকরাও । প্রত্যেককেই মুখ ও গলার দিকে নজর রাখতে বলেছেন জাপানি চিকিৎসকরা। মুখ ও গলা যেন না শুকায় তা নিশ্চিত করতে বলেছেন তারা। এজন্য কমপক্ষে ১৫ মিনিটের মধ্যে কয়েক চুমুক পানি পান করার ওপর জোর দিয়েছেন জাপানি চিকিৎসকরা। কেন পান পান করবেন : যদি কারোও মুখে ভাইরাস প্রবেশ করে তবে পানি বা অন্যান্য তরল পান করলে এ্যাসফ্যাগাসের মাধ্যমে খাদ্যনালী থেকে ভাইরাস নিচে পাকস্থলীতে নেমে যাবে। ফলে পেটে থাকা এসিডগুলো সব ভাইরাসকে মেরে ফেলবে। তাই সবাইকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। আপনি যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করেন তাহলে ভাইরাসটি আপনার উইন্ডোপাইপ ও ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। যা খুবই বিপজ্জনক। সর্বোপরি, জ্বর ও জ্বরের সাথে কাশি ও বুকে ব্যাথা অনুভব করলেই দ্রুত হস্পিটালে যোগাযোগ করুন। আমরা যারা বিশ্বাসী, আল্লাহ ‘তে গভীর আস্থাশীল, আমরা বিশ্বাস করি- রোগ-ব্যাধি বালা মুসিবত আপদ বিপদ সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকেই আসে। বালা মুসিবত আপিদ বিপদের জন্য আমরা সর্বদাই আল্লাহর নিকটে পানাহ চাই। আমরা যেন সকলে বেশী বেশী তওবা ইস্তেগফার(কম পক্ষে ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু ইলাইহি) পড়ি। রোগ-ব্যাধি বালা মুসিবতের সর্বাধিক পরীক্ষীত দোয়া হচ্ছে, দোয়া ইউনুস। যখনই সময় পাই, ছোট্ট এই দোয়াটি পাঠ করতে পারি। আরেকটি দোয়া কমেন্ট বক্সে দিলাম। উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন। অর্থ : আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী। -সূরা আল আম্বিয়া : ৮৭। পরিশেষে : প্রিয় বন্ধুরা, মৃত্যু থেকে কারোই নিস্তার নেই। আজ কিম্বা কাল, সকলকেই যার যার নির্ধারিত সময়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। করোনাভাইরাস ছাড়াই তো প্রতিনিয়তঃ হাজারো মানুষ দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে! এর মাঝে হঠাৎ হঠাৎ এমন কিছু মৃত্যু আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যেসব মৃত্যু আমাদের হৃদয়কে দুমড়ে মুচড়ে একাকার করে দিয়ে যায়। মৃত্যুশোকে আমরা কিছুদিনের জন্য হতোদ্যম হয়ে যাই। কিছুদিন বাদে আবার আমরা দুনিয়ার নানান কর্মব্যস্ততায় মৃত্যু নামক চিরন্তন ও শ্বাশত শব্দটিকে এমন ভাবে ভুলে যাই যে, আমাকেও যে একদিন মরতে হবে, সেই কথাটি ভুলেও স্মরণে আসেনা। পরকালে কি নিয়ে হাজির হব, তাই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যেন আমাদেরকে বেশী বেশী তাঁর স্মরণ করার তৌফিক প্রদান করেন এবং সকল প্রকার বালা মুসিবত থেকে হেফাজত করেন, আমীন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post New test post
Next post যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়ে নিহত ২৫
Close