Read Time:7 Minute, 8 Second

এশিয়া জুড়ে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে অস্বস্তি জেঁকে বসেছে। আতঙ্কে সিঙ্গাপুর ছাড়ছেন বাংলাদেশিরা। সিঙ্গাপুরে ৯০ জনকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একই নির্মাণস্থলে কর্মরত পাঁচ বাংলাদেশি শ্রমিকও আছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ফিলিপিনো ও ইন্দোনেশীয় গৃহকর্মীদের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক বাংলাদেশি গৃহকর্মীরও এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

দক্ষিণ এশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরের আসা নির্মাণ শ্রমিকরা সাধারণত ১২ শয্যার ডরমিটরিতে থাকেন, যেখানে তাদের সবার জন্য একটাই বাথরুম থাকে। এসব নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে অন্যতম ২৪ বছর বয়সি কাকন মিয়া বলেন, তার অনেক বন্ধু দেশে ফিরে গেছেন, কারণ সেখানে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কোনো ঘটনা নেই। সিঙ্গাপুরকে বিপদমুক্ত ঘোষণার পরই তারা ফিরবেন। কয়েক জন সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে মাতৃভাষায় এই তরুণ বলেন, ‘আমরা এখন আছি। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলেই দেশে ফিরে যেতে পারি।’ সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশন বলছে, তারা অনলাইনে শ্রমিকদের দেশে ফিরে যেতে বারণ করছেন। একই সঙ্গে সশরীরে ডরমিটরিতে গিয়ে তাদের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ ও বাংলায় লেখা সতর্কতামূলক প্রচারপত্র বিলি করছেন।

বাংলাদেশিরা যখন সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য পা পাড়ায় তখন অনেকের ঘাড়েই থাকে বিশাল ঋণের বোঝা। এজেন্সিগুলোকে এত টাকা দিতে হয় যে, তা সিঙ্গাপুরে তার অনেক মাসের বেতনের সমান। এ কারণেই অনেকে দেশে ফেরার চিন্তা করেও পিছিয়ে আসেন। এমনই একজন ২৫ বছর বয়সি মজিদুল হক, যিনি বাংলাদেশ এক মাসের ছুটি কাটিয়ে সোমবার ফিরেছেন। বাবা-মা তাকে আসতে দিতে না চাইলেও পরিবারের অর্থনৈতিক চাহিদা তাকে ফিরতে বাধ্য করেছে।

জ্বর নিয়ে বাংলাদেশে আসার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাসায় ফিরে গেছেন। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবিনা ফ্লোরা মঙ্গলবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে যে কোরিয়ান নাগরিক ভর্তি হয়েছিলেন, তার জ্বর ছিল। আমরা তাকে দুটো পরামর্শ দিই। তিনি হাসপাতালে থাকতে পারেন, অথবা বাসায় হোম আইসোলেশনে থাকতে পারেন। তিনি বাসায় চলে গেছেন।

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, দেশে এ পর্যন্ত ৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারও মধ্যেই করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। সুতরাং বাংলাদেশে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু এখনো ঘটেনি। বাংলাদেশে কর্মরত চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের নাগরিকদের বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, তারা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছেন। আমরা তাদের সার্বিক নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখছি। তাদের প্রতি সবাই সহনশীল সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করব।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোর সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মঙ্গলবার সচিবালয়ে করোনা ভাইরাস শনাক্তে চীন সরকারের দেওয়া ৫০০ টেস্টিং কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা জানান তিনি। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আক্রান্ত দেশগুলোর সঙ্গে বিমানের ফ্লাইট বাতিলের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা নেই।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ফ্লাইটের সংখ্যা সব দেশেই কমে গেছে। লোকজন চলাফেরা কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে পর্যটন শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর অর্থ হলো—লোকজন নিজেরাই চলাচল কমিয়ে দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে ৫০০ট টেস্টিং কিট তুলে দেন। বর্তমানে দেশে কিট প্রায় ২ হাজারের মতো রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীন আরো ৫০০ কিটস আমাদের দিচ্ছে। ইনশাআল্লাহ কিটসের কোনো অভাব হবে না। একটি কিট দিয়ে একজনকেই পরীক্ষা করা যায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখনকার জন্য এই কিটসই যথেষ্ট, এছাড়া আরো কিট পাইপলাইনে আছে।

এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটেছে চীনে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি এবং ইরানেও এখন যেভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তাতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চীনে নতুন করে আরো ৭১ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক হিসেবে দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বনিম্ন। এতে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৬৩ জন। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫০৮ জন, এই সংখ্যা সোমবারের চেয়ে বেশি, ঐ দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০৯ জন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post শোকাহত আনন্দ মেলা পরিবার
Next post ফেনীতে প্রবাস থেকে ফিরে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা
Close