Read Time:6 Minute, 35 Second

নিউইয়র্কে ৩ শতাধিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-আঞ্চলিক সংগঠন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন ও বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের পক্ষ থেকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। 

এ উপলক্ষে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট ভবন, জ্যাকসন হাইটস বিজনেস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ডাইভার্সিটি প্লাজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে কুইন্স প্যালেস, বাংলাদেশ সোসাইটির উদ্যোগে উডসাইডে গুলশান টেরেস, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের উদ্যোগে এস্টোরিয়ায় সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে এবং ব্রঙ্কস, ব্রুকলীন, জ্যামাইকায় বেশ কটি স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। 

একুশের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের মতোই এসব শহীদ মিনারে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কি ভুলিতে পারি’ গানে গানে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন সর্বস্তরের প্রবাসীরা। মধ্যরাতে জাতিসংঘের শহর নিউইয়র্ক সিটি এবং আশপাশের এলাকা পরিণত হয় মায়ের ভাষার দাবিতে বাঙালিদের অকাতরে প্রাণ বিসর্জণের অবিস্মরণীয় একটি ঘটনা প্রবাহে। দিবসটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় রাজনৈতিক সচেতন ভিনদেশীরাও শরিক হয়েছিলেন কোন কোন শহীদ মিনারে। 

জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালি চেতনামঞ্চের উদ্যোগেও অস্থায়ী একটি শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল এবং সেখানে বাংলাদেশের সময়ের সাথে মিলিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা একটা এক মিনিটে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। 

জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন এবং এলাকাবাসীর নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। ডাইভার্সিটি প্লাজায় খোলা ময়দানের এ কর্মসূচির প্রতি ভিনদেশীদের কৌতূহলী দৃষ্টি ছিল প্রবল। 

গুলশান টেরেসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ পরিক্রমার সমন্বয় করেছেন বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দ। এখানে শতাধিক সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এসেছিলেন। প্রবাস প্রজন্মের অংশগ্রহণে সম্পন্ন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে এ সময় পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। 

কুইন্স পেলেসের শহীদ মিনারের কর্মসূচির সমন্বয় করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। মধ্যরাতে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদর্শনের আগে প্রবাস প্রজন্মের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত শহীদ দিবসভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য আলোকে অনেকে বক্তব্যও রেখেছেন। 

অপরদিকে, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর যৌথ উদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কনস্যুলেট জেনারেল মিলনায়তনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে বায়ান্ন’র ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের এই আয়োজন শুরু হয় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অতপর দিবসটি উপলক্ষে দেয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। 

“আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” গানের সাথে সাথে নিউইয়র্ক সময় ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর অর্থাৎ রাত ১২টা ১ মিনিটে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো পর্ব শুরু হয়। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা’র নেতৃত্বে স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ। এরপর কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসার নেতৃত্বে কনস্যুলেট জেনারেলের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। একে একে শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাঙালি। 

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post পর্তুগালের বন্দর নগরী পোর্তোয় একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত
Next post লস এঞ্জেলেসে যথাযোগ্য মর্যদায় একুশ উদযাপন
Close