Read Time:7 Minute, 17 Second

ফিরোজ আলম : বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিরুদ্ধে অনেকে অবস্থান নিয়েছে। তাদের যুক্তি রাজনীতি বন্ধের সুযোগে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মৌলবাদের ঘাঁটি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এই যুক্তির সাথে আমি শতভাগ একমত। কিন্তু বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট ও জনমত বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে। অভিবাবকদের অধিকাংশ দাবি তুলেছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণরত একটি মেধাবী ছেলেকে নিয়ে শুধু অভিভাবক নয়, এলাকার মানুষও স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজনীতিকে বাধা মনে করে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। আবরাব হত্যায় হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে বুয়েটে অধ্যনরত কমপক্ষে বিশটি পরিবার। আবরাব মৃত্যুর ঘটনা জীবিত মৃতলাশ করেছে আরো ১৯ টি মেধাবী তরুণকে। প্রতিটা ছেলেই একেকটা মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন! স্বপ্নগুলো আজ মরীচিকা হয়ে দাড়িয়েছে পরিবারের কাছে। এ জন্য রাজনীতিকেই তারা দায়ী করছে। রাজনীতির সুবিশাল পরিধি এখন তাদের চিন্তাতে আসছেনা, রাজনীতির মানেই তাদের কাছে খারাপ কিছু। এটাই হলো এ সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশে। এই বাস্তবতা মেনেই আগামী দিনের রাজনীতি নির্ধারণ করতে হবে। ধর্মভীরু অর্ধ শিক্ষিত সমাজে আওয়ামীলীগের রাজনীতির প্রধান বাধা ভারত ও ধর্ম। আওয়ামীলীগের বিরোধীরা সুকৌশলে দীর্ঘদিন ধরে অসচেতন মহলে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ ধর্মবিরোধী এবং ভারত আমাদের শত্রু রাষ্ট্র! এই বাস্তবতা মেনেই আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারিত হওয়া উচিত। বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক ধারা উপমহাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে পাক অথবা ভারতপন্থী হিসাবে পরিচিত। পাকপন্থীরা উপমহাদেশের রাজনীতিতে কোনো বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই শুধু ধর্মীয় কারণে পাকিস্তানপন্থী ভাবতে ভালোবাসে। বাংলাদেশের প্রোপাকিস্তান রাজনীতির প্রধান নেতা খালেদা জিয়া। যিনি বক্তব্য বিবৃতিতে দুটো-চারটা মুসলমানি শব্দ ব্যবহার ছাড়া ইসলামিক জীবন বিধানে শেখ হাসিনার চেয়ে যোজন মাইল দূরে অথচ এই প্রোপাকিরা পারলে শেখ হাসিনাকে হিন্দু বানিয়ে ফেলে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উদার বিশ্ব বাণিজ্যে বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান ভারতকে পাশে চাইতেন কিন্তু তথাকথিত ভারত বিরোধী মুসলিম জাতীয়তাবাদী প্রোপাকিস্তানি রাজনীতিবিদের জন্য তিনি পারেননি। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি। খুদা দারিদ্রতা মুক্ত একটি স্থিতিশীল সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। শেখ হাসীনার রাজনীতি দেশের নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা কোনো প্রকার ধর্মীয় বৈষম্য ছাড়া। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবেশী ভারতকে আমাদের প্রয়োজন। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ইতিবাচক নেতিবাচক যেকোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম ভারত। ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় পাকিস্তানের ভূমিকা একদমই গুরুত্বহীন। তারা পারে ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরী করতে। বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতকে অস্থিতিশীল করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে। বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস ও অর্জন দুটোই সমৃদ্ধ। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সেই ইমেজ আর নেই। ছাত্ররাজনীতির রূপ ও কর্ম পরিধি পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। আমাদের মত ধর্মভীরু সমাজে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা সবচেয়ে সহজ। ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসে ধর্মীয় দাওয়াতের নামে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শিকড় শক্ত হবে সন্দেহ নেই। এই ধর্মীয় দাওয়াতের আড়ালে ছদ্মবেশী ধর্মীয় রাজনীতি একসময় ক্যান্টনমেন্টেও পৌঁছে গিয়েছিল। ধর্মীয় দাওয়াতের আড়ালে এই যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার, এটাকে মোকাবেলা করার জন্য গোয়েন্দা নির্ভরতা কোনো সমাধান নয়,রাজনৈতিকভাবে এই রাজনীতি মোকাবেলা করতে হবে। তরুণ সমাজকে ক্রীড়া সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তা ও চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার কাজে গতি আনতে হবে। প্রতিপক্ষের সাথে সুন্দরের প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। প্রগতিশীল চিন্তার ধারকদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে প্রমান করতে হবে তারা মৌলবাদী চিন্তাধারীদের চেয়ে উত্তম। পেশী শক্তি নয়,ভালবাসা দিয়ে সাধারণের মন জয় করতে হবে। গেলো গেলো দেশ মৌলবাদীদের দখলে গেলো বলে চিৎকার আর সরকারি গোয়েন্দাবাহিনীর উপর নির্ভর করে তাদের থামানো যাবেনা। আদর্শিক চর্চা ও সাধারণের প্রয়োজনে কাজ করেই জয় করতে হবে সবাইকে। ভাল ভালো কথা আর লুটপাট জবরদস্তি জিন্দাবাদ বলে রাজনীতি করলে, গণ মানুসের হৃদয় থেকে হারিয়ে যেতে হবে একদিন। যে আশংকায় আজ আতংকিত তা একদিন সত্য হবে, পরিকল্পিত বাস্তব ভিত্তিক অগ্রসর না হলে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ইতালিতে বাবার মৃত্যুর ৭ মিনিটের মাথায় শিশুর জন্ম
Next post নিউইয়র্কে নারায়ণগঞ্জ সমিতির ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন
Close