Read Time:6 Minute, 52 Second

সরকারী অফিসে বিশ্রামকক্ষ থাকা অনুচিত

আহমেদ ফয়সাল (ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র) :

সম্প্রতি জামালপুর জেলার ডিসি আহমেদ কবির সাহেবের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনার ঝর তুলেছে। কিছু মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন, ডিসি সাহেব দায়িত্বশীল পদে থেকে নিজ দপ্তরের খাস কামরায় বসে এমন অপকর্ম কেন করলেন। মনে হতে পারে, নিজ দপ্তরে করাটা অন্যয় হয়েছে, বাহিরে করলে ঠিক ছিলো। অনেকে বলেছেন, তিনি চৌকস নন, তাই ধরা খেয়েছেন। অর্থাৎ চৌকস হলে বোধহয় ধরা না খেয়ে অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারতেন। প্রিয় পাঠক- ডিসি সাহেব বলুন আর ভিসি সাহেব বলুন, জজ সাহেব বলুন কিম্বা এসপি সাহেব বলুন, কার অফিস কক্ষের সাথে নিরাপদে শুয়ে কিম্বা বসে বিশ্রামের ব্যবস্থা নাই, এমন কেহ আছেন? ঐসব সাহেবদের অফিসের অভ্যন্তরে যদি কোথাও এমন বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে আপনি রীতিমতো আশ্চর্য হইতে পারেন। কিছু অনেস্ট ডিসি ভিসি আছেন, কিছুসংখ্যক ভালো এসপি ও জজ সাহেব আছেন এমন কয়েকজনের খবর আমি জানি। কিন্তু এমন কোনো ডিসি, এসপি ও জজ সাহেবের খবর জানিনা, যার দাপ্তরিক অফিসের সাথে ব্যাক-ডোরে বিশ্রাম কক্ষ বা খাসকামরা নেই। বাদদেন ডিসি ভিসি এসপি সাহেবদের কথা। একটু খোঁজখবর নিয়ে দেখুন, অনেক ইউএনও ওসি সাহেবদের অফিসের অভ্যন্তরেও নিরাপদে শুয়ে বসে রেস্ট নেয়ার ব্যাবস্থা আছে। সরকারী অফিসে কোনো বিশ্রামকক্ষই তো থাকা উচিৎ না। সরকারী দপ্তরে এমন সুযোগ সুবিধা যেখানে আছে, সেখানে অপকর্মও কিছু থাকবে, থাকাটাই বর্তমানে স্বাভাবিক। সেইসব অপকর্মের খোঁজখবর, অপকর্মের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া, রসদ যোগান দেয়া বসের অধীনস্হ কর্মচারী তোষামোদকারীরাই করে থাকে। জামালপুরের ডিসি সাহেব কি ঐ বিশ্রামাগার কি নিজে বানিয়ে নিয়েছেন? যদি তিনি বিশ্রামের ঐ ব্যবস্থা করে থাকেন, তাহলে ঐ কেলেঙ্কারির সব দায় দায়িত্ব তার। আর যদি বিশ্রামকক্ষ আগে থেকেই থেকে থাকে, আগের ডিসি সাহেবও সেখানে বিশ্রাম নিয়ে থাকেন, অপরাপর ডিসি অফিসেও একই প্রকার ব্যবস্থা থেকে থাকে, তাহলে এর সিংহভাগ দায় আমাদের অসাধু সিস্টেমের। ভাইরে, তাই বলে ঐ ডিসি সাহেবকে আমি ধোয়া তুলসীপাতা বলছিনা। আমি জামালপুরের ডিসি’র পক্ষ নেইনি। অবশ্যই তার পানিশমেন্ট হওয়া উচিৎ। আসলে, সিস্টেমের ফাঁকফোকর হচ্ছে অসৎ তৈরীর কারখানা। কিছুদিন আগে এক বন্ধু তার এক স্ট্যাটাসে বলছিলেন, ”আলুর দোষ কমবেশি সকলেরই আছে। আমারও আছে। মানুষ হিসেবে সেটা কিছুটা থাকাই স্বাভাবিক। বরং অস্বাভাবিক হইছে না থাকা। ফলে কিছুটা আলুর দোষ থাকা তেমন কিছু দোষের না। দোষের হইছে ভর্তা মন্থনকালে হুঁশ না থাকা। আলু বেশি সেদ্ধ কিংবা কম সেদ্ধ কিংবা মরিচ কম হওয়া বা লবণ বেশি হওয়ায় পুরো আয়োজনটা ভেস্তে যেতে পারে। পরিমিতিবোধ (বৈধতা, স্থান-কাল-পাত্র) জরুরী আর কী!” ডিসি আহমেদ কবির সাহেবের খাস কামরায় কি বাহির থেকে কেউ গিয়া ক্যামেরা বসিয়েছে? ক্যামেরা বসিয়েছে তো তারই অধীনস্হ নিকটজন, তাই না? যদি তাই হয়, তার মানে তিনি নিকটস্থ লোকগুলার গোপন ষড়যন্ত্রেই ফেঁসে গেছেন। স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে অধীনস্হ কেহ ক্ষিপ্ত হয়েই ফাঁসিয়ে দিছে তাকে। সুপ্রিয় পাঠক, যেই মহান সত্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি ভালোই জানেন যে, তার বান্দাদের কোথায় কি দূর্বলতা ও দোষ ত্রুটি আছে। তাই কঠিন ভাবে লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে বলেছেন তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে। লজ্জাস্থানের হেফাজতের জন্য জান্নতের গ্যারান্টি দিয়েছেন। জেনা ও শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচিয়ে বান্দাকে জান্নাত লাভের সুযোগ দিতে সক্ষমতা থাকলে থেকে এক, দুই, কিম্বা চারের (স্ত্রী গ্রহনে) বৈধতা দিয়েছেন। (আরো জানতে সুরা নিসা পড়ুন)। যখন সমাজে বৈধ প্রক্রিয়া সংকুচিত হয়ে যায়, তখন অবৈধতা কাজকারবার আপসে-আপ বেড়ে যায়। সমাজে তখন জামালপুরের ডিসির মত মানুষ বেড়ে যায়। কাউকে ফাঁসিয়ে দিয়ে কিম্বা কারোটা ধরা খেয়ে দুর্গন্ধ বেড়িয়ে পরে, কারোটা গোপন থেকে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন’ও তার বান্দার গোপন ত্রুটিগুলো পোপন রাখতে বলেছেন, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন না করে গোপনেই শুধরিয়ে দিতে বলেছেন। বান্দার গোপন ত্রুটিগুলো থেকে বাঁচার জন্য তিনি দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন, ‘আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতি, ওয়া’আমিন রাওয়াতি …’।

অর্থাৎ- ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার গোপন ত্রুটিগুলো গোপন রাখুন। পাশাপাশি তওবায় ইস্তেগফার পড়তে বলেছেন।

(আরো দেখুন সুরা ফালাক ও সূরা নাস।)

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post কাতারে ভালোবাসায় সিক্ত ক্বারী আব্দুল হক
Next post যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
Close