Read Time:10 Minute, 40 Second

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখা প্রবাসী কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা উদ্ভূত সমস্যার সমাধান কল্পে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ গঠিত হয়। প্রবাসীরা সেসব সুযোগ সুবিধা পেতে হলে দূতাবাসের মাধ্যমে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে হবে। কিন্তু সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া না জানার কারণে স্পেনে অধিকাংশ প্রবাসীরাই বোর্ডটির সদস্য হননি এখনো। এজন্য দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রচারণার অভাবকেই দায়ী করছেন স্থানীয় প্রবাসীরা।

বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া, তাদের আস্থা অর্জন, মৃত কর্মীদের মরদেহ দেশে আনা, ব্যয় নির্বাহ এবং এ সংক্রান্ত কাজে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গত বছরের ৯ জুলাই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিল ২০১৮’ আইন পাস হয়। আইনে আরো রয়েছে, বিদেশে কর্মরত কোনো নারী অভিবাসী কর্মী নির্যাতনের শিকার, দুর্ঘটনায় আহত, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বিপদগ্রস্ত হলে তাকে উদ্ধার ও দেশে আনা, আইনগত ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া, ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশে দেশে-বিদেশে হেল্প ডেস্ক ও সেফ হোম পরিচালনা করবে বোর্ড। 

স্পেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে (বয়সসীমা ১৮ থেকে ৫৯ বছর) ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ এর সদস্যপদ গ্রহণের জন্য অনলাইনে পূরণকৃত আবেদন (ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এর ওয়েবসাইট www.wewb.gov.bd এ আবেদন পূরণ করা যাবে) প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা প্রদান করতে হয়।

কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে ২ কপি ছবি, পাসপোর্টের কপি, রেসিডেন্ট কার্ড বা এমপাদ্রনামিয়েন্ত (স্পেনে বসবাস করছেন এ মর্মে  একটি পত্র, যা স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন প্রদান করে থাকে)। ফি হিসেবে এককালীন ৪০ ইউরো দিয়ে আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় যাচাই ও প্রক্রিয়া শেষে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য সনদ প্রদান করে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার জন্য স্পেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আগ্রহ বাড়াতে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করে। প্রচারপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সদস্যপদ গ্রহণকারী প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের জন্য প্রতিবছর বোর্ড হতে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়, প্রবাসীদের সন্তানদের বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবাসী কোটায় ভর্তির সুযোগ প্রদান করা হয়, প্রবাসে মৃত্যু হলে মৃতদেহ দেশে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হয়, মৃতদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তরের সময় বিমানবন্দরে স্থাপিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক হতে দেশের অভ্যন্তরে লাশ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়, প্রবাসে মৃত্যু হলে মৃত কর্মীর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করাসহ আরো নানা কল্যাণমূলক সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ গ্রহণকারী প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নানা সেবার সুযোগ থাকলেও বোর্ডটির সদস্য হওয়ার সুবিধা কিংবা প্রক্রিয়া স্পেনে বসবাসরত অধিকাংশ প্রবাসীরাই জানেন না। স্পেনে প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করলেও বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র ২৯ জন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হয়েছেন। সদস্য বাড়ানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসের আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ স্পেন শাখার সিনিয়র নেতা শেখ আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকার যে আন্তরিক, তা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য কার্যক্রম অন্যতম উদ্যোগ। কিন্তু সে কার্যক্রমে স্পেনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সম্পৃক্ত হচ্ছেন না কেবল সুষ্ঠু প্রচারের অভাবে। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচার করা হলে দূতাবাসে গিয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার আবেদন আরো বাড়বে।

আওয়ামী যুবলীগ কাতালোনিয়া শাখার সভাপতি কাজী আমির হোসেন আমু বলেন, স্পেনে অধিকাংশ প্রবাসীরাই এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তথ্য জানেন না। দূতাবাস আরো সক্রিয়ভাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুবিধাগুলো প্রচার করলে এখানকার প্রবাসীরা সদস্য হতে উদ্বুদ্ধ হবেন।

স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফাজ জনি বলেন, আমরা যারা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার বিষয়টি জানি, আমাদের অনেকেই আজ/কাল, আজ/কাল করে সদস্য হচ্ছেন না। বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুবিধা ও প্রক্রিয়া নিয়ে যদি মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে পৃথক সভা করা যায়, তবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার জন্য প্রবাসীরা আরো আগ্রহী হবেন।

বার্সেলোনায় স্পেনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বসবাস করেন। কিন্তু ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার জন্য ফরম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পোস্ট অফিস বা অন্য কোনো মাধ্যমে মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠাতে হয়। বার্সেলোনায় কনসুলেট অফিসে জমা গ্রহণের ব্যবস্থা নিলে সদস্য হওয়ার সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করেন বার্সেলোনায় বসবাসরত প্রবাসী জসিম উদ্দিন।

তিনি আরো বলেন, কেবল একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করে মাদ্রিদস্থ দূতাবাসে সেবা গ্রহণ করতে যাওয়াদের মধ্যে বিলি করলে তো সদস্য বাড়বে না। কারণ পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে বা অন্য কোনো বিশেষ  প্রয়োজন ছাড়া দূতাবাসে প্রবাসীদের যাতায়াত খুবই কম।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েন ইন স্পেনের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক বলেন, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে, প্রবাসী হিসেবে সেগুলো তো আমাদেরই অধিকার। আমরা বাংলাদেশ অ্যসোসিয়েনের মাধ্যমে অবশ্যই প্রচার করবো; পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাস চাইলে আমরা যৌথভাবেও প্রচারণার জন্য সভার আয়োজন করতে পারি, যেখানে মাদ্র্রিদে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ জানানো হবে। এতে এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা সদস্য হওয়ার জন্য আরো বেশি আগ্রহী হবেন।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. শরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দূতাবাসে যারা সেবা নিতে আসেন, তাদেরকে আমরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার জন্য বলি। পাশাপাশি আমরা যখন বার্সেলোনায় যাই কনসুলেট সেবা প্রদানের জন্য, সেখানেও আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়মিত বলে থাকি। এমনকি মাদ্রিদে বাংলাদেশি কমিউনিটির কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে, সেখানেও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হলে বোর্ড হতে প্রদেয় সার্বিক সুবিধাদি পাবেন উল্লেখ  করে প্রবাসীদের সদস্য হওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post চীনকে মুসলিম বন্দিশিবির বন্ধ করতে বলল তুরস্ক
Next post অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের আনিশা
Close