Read Time:8 Minute, 57 Second

কোরিয়া টাউনের মধ্যেই লিটল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত। যেমন- লিটল আরমেনিয়ার মধ্যে থাই টাউন। থাই টাউন হলিউড বুলেবার্ডের উপর ৬টি ব্লক জুড়ে নামকরণ হয়েছে, ঠিক তেমনি ভাবে থার্ড স্ট্রীটের উপর ১০ ব্লক জুড়ে লিটল বাংলাদেশের নামকরণ। কোরিয়া টাউন সেন্ট্রাল লস এঞ্জেলেসের নেভারহুড। ১৯৬০ সালের দিকে প্রচুর কোরিয়ান ইমিগ্রেন্ট মানুষ মিউ ইউলশ্যায়ার এলাকায় বসতী শুরু করে। স্বল্প আয়ের মানুষের বসবাস। বর্তমানে লস এঞ্জেলেস কাউন্টির হিসাবে এলাকার জনসংখ্যা ১,২০,০০০ (২.৬ বর্গ মাইলের মধ্যে)। অত্যান্ত ঘন বসতি এলাকা। তারমধ্যে প্রায় ৩০,০০০ বাংলাদেশীর বসবাস। জাতিগতভাবে কোরিয়া টাউনে অর্ধেক ল্যাটিনো এবং তৃতীয় হিসেবে এশিয়ান। দুই তৃতীয়াংশ মানুষের জন্ম আমেরিকার বাইরের দেশ সমূহে। কোরিয়া টাউনের ঐতিহাসিক ঘটনা হলো ১৯৬৮ সালে তৎকালীন হোটেল এ্যাম্বাসেডরে সিনেটর রর্বাট এফ, ক্যানেডি গুপ্ত হত্যার স্বীকার হয়েছিলেন (বর্তমানে হোটেল ভেঙ্গে উক্ত স্থানে রবার্ট এফ, ক্যানেডি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ২০০৯ সালে যখন লিটল বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।) ১৯৬৫ সালে ইমিগ্রেশন এবং ন্যাশনালিটি একট এর ফল স্বরূপ আমেরিকায় ইমিগ্রেশন মানুষের আগমন ঘটতে শুরু করে। তখন সাউথ কোরিয়ার ইমিগ্রেন্ট স্বল্প ভাড়ায় বাসা হিসেবে এই এলাকায় থাকতে শুরু করে এবং কমিউনিটির ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। কোরিয়া টাউনের ডাক নাম হচ্ছে কে-টাউন। বর্তমানে সীমারেখা হল ডাউন টাউন থেকে ৩ মাইল পশ্চিমে, হলিউড থেকে ৪ মাইল উত্তর পূর্ব দিকে। লস এঞ্জেলেস এয়ারপোর্ট থেকে ১৬ মাইল দূরত্বে অবস্থিত। যখন বাংলাদেশ কমিউনিটি লস এঞ্জেলেস সিটিতে লিটল বাংলাদেশের জন্য আবেদন করেছিল। তখন প্রচারিত কোরিয়া টাউন। সিটি হল কতৃক অনুমদিত ছিল না। নিয়মানুযায়ী তারা কখনওই সিটিতে আবেদন করে অনুমোদন গ্রহণ করেনি। এ জন্য নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি আছে। যা বাংলাদেশের প্রবাসী কমিউনিটি করেছিল। ফলে কোরিয়া টাউনের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়ে ওঠে। বাংলাদেশী কমিউনিটির আবেদনের পর কোরিয়ান কমিউনিটি সিটি আবেদন করাতে বাংলাদেশী কমিউনিটির আবেদন প্রাধান্য পায়। সে ক্ষেত্রে কোরিয়ান কমিউনিটি বাধ্য হয় লিটল বাংলাদেশের প্রস্তাবকে মেনে নিতে। যদিও বাংলাদেশী কমিউনিটি আয়তনে আরও বৃহতাকারে দাবী করেছিল। কিন্তু অবশেষে সংক্ষিপ্ত আকারে মেনে নিতে বাধ্য হয়। কেন হয় তা লিটল বাংলাদেশ মুভমেন্ট বিষয়ক লেখায় বর্ণনা করা হবে। ২০০৮ সালে লস এঞ্জেলেস সিটি কতৃক অনুমোদন পাওয়ার পর কোরিয়া টাউনের সীমারেখা সৃষ্টি হয়, উত্তর দিকে পূর্ব হলিউড, ওয়েস্ট লেক পূর্ব দিকে এবং দক্ষিণ দিকে পিকো ইউনিয়ান, হাবর্ডাড হাইটস ও আরলিংটন হাইটস। পশ্চিমে মিড ইউলশ্যায়ার, উইন্ডজর স্কয়ার। লারচমন্ট পূর্ব পশ্চিমে। রাস্তার সীমারেখা অনুযায়ী বেভারলি বুলেবার্ড উত্তর দিকে ভারজিল, উইলশ্যায়ার প্লেস এবং ওয়েস্টমরল্যান্ড এভিনি্যু পূর্বদিকে। অলিম্পিক বুলেবার্ড দক্ষিণ দিকে এবং ক্রেনশা বুলেবার্ড এবং উইলটন প্লেস পশ্চিম সীমানা। জনসংখ্যার দিকদিয়ে ২০০০ সালের ইউএস সেন্সাস গণনায় ২.৭ বর্গ মাইলের মধ্যে ১,১৫,০৭০ আবাসিক মানুষের বসবাস। অর্থাৎ ৪২,৬১১ মানুষ বসবাস করে প্রতি বর্গ মাইলে। লস এঞ্জেলেস কাউন্টির সবচেয়ে ঘনত্বপূর্ণ কমিউনিটি। ২০০৮ সালে উক্ত জনসংখ্যা ১,২৪,২৮১ নম্বারে উত্তীর্ণ হয়েছে। জাতিগত ভাবে কোরিয়া টাউনে বিভিন্ন কৃষ্টির মানুষের বসবাস। ল্যাটিনো ৫৩.৫%, এশিয়ানস ৩২.২%, শ্বেতাঙ্গ ৭.৪%, কালোদের সংখ্যা ৪.২৭% এবং অন্যান্য ২%। কোরিয়া টাউনে ২৮.৬% কোরিয়া ও ২৩.৯% মেক্সিকানের বসবাসকারীদের মধ্যে ৬৮% মানুষের জন্ম আমেরিকার বাইরের দেশ থেকে। এই এলাকার মানুষ বার্ষিক আয় ৩০,৫৫৮ ডলার থেকে ২০,০০০ ডলার। ভেটারন্সের সংখ্যা ৩.৩% (তুলোনামূলক ভাবে অন্যান্য এলাকা থেকে সংখ্যায় সবচেয়ে কম)। কোরিয়ান টাউনে কোরিয়ান ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোরিয়ান ভাষায় সাইনবোর্ড লেখা। অর্থাৎ তারা কোরিয়ান ক্রেতাদের জন্যই ব্যবসা খুলে বসেছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা অত্যান্ত শক্তিশালি হয়ে উঠেছে। ১৯৬০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিলিয়নস ডলারের ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে কোরিয়া টাউনে। কোরিয়ান নাইট লাইভ গড়ে উঠেছে, রেস্টুরেন্ট, কেবোকি বার, বারবিকিউ ইত্যাদি। কোরিয়া টাউনে বিভিন্ন দেশের কন্সুলেট জেনারেল অফিস গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ কন্সুলেট, সাউথ কোরিয়া কন্সুলেট, চায়না কন্সুলেট, কন্সুলেট জেনারেল অব এলসালভাদর, কন্সুলেট জেনারেল অব গুয়েতেমালা, কন্সুলেট জেনারেল অব হন্ডুরাস, কন্সুলেট জেনারেল অব নিকারাগুয়া এবং কন্সুলেট জেনারেল অব বলিভিয়া। লিটল বাংলাদেশের উপর প্রতিবছর বাংলাদেশ ইউনিটি ফেডারেশন অব লস এঞ্জেলেস (বাফলা) যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ডে প্যারেড এণ্ড ফেস্টিবল উদযাপন করে, ঠিক তেমনিভাবে কোরিয়ান কমিউনিটি অলিম্পিক বুলেবার্ডের উপর প্রতি বছর কোরিয়ান ফেস্টিবল এণ্ড প্যারেড করে। দ্যা ইউলশ্যায়ার সেন্টার বিজিনেস ইম্প্রুভমেন্ট ডিস্ট্রিক প্রতিবছর ২২ এপ্রিল আর্থ ডে/কার ফ্রি ডে পালন করে। কোরিয়ান কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন রয়েচে যারা কোরিয়া টাউনের উন্নয়নে সক্রিয়ভূমিকা রাখে। তাদের মধ্যে কোরিয়ান আমেরিকান বিজিনেস এসোসিয়েশন, চেম্বার অব কমার্স, কোরিয়ান কমিউনিটি সেন্টার, কোরিয়ান নেবারহুড কাউন্সিল, কোরিয়ান আমেরিকান কোলিশন, কোরিয়ান রিসোর্স সেন্টার, কোরিয়ান কালচারাল সেন্টার, কোরিয়ান ইউথ আর্ট এক্সচেঞ্জ সার্ভিসেস, কোরিয়ান ন্যাশনাল এসোসিয়েশন মেমোরিয়াল, কোরিয়ান টাউন ইউথ এণ্ড কমিউনিটি সেন্টার, কোরিয়ান আমেরিকান সিনিয়র, কোরিয়ান আমেরিকান গ্রামেন্ট ইনডাস্ট্রি প্রমুখ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post প্রবাসীদের টাকা পাঠাতে চালু হলো ‘ইউপে ফেলমো’
Next post লিটল বাংলাদেশের মত ভিন্ন জাতির ইতিহাস (কোরিয়া টাউন)
Close