Read Time:6 Minute, 48 Second

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত ছিলেন বলে মনে করেন মার্কিন সিনেটের দুজন প্রধান রিপাবলিকান নেতা। খাশোগি বিষয়ে গত মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটে এক ব্রিফিংয়ে অংশ নেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক জিনা হাসপেল। তাঁর বক্তব্য শোনার পরই রিপাবলিকান সিনেটররা মন্তব্য করেন, যুবরাজের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই বলে আসছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজ জড়িত নন।

এদিকে তুরস্কের এক প্রসিকিউটর সৌদি যুবরাজের ঘনিষ্ঠ সে দেশের দুই নাগরিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা হলেন আহমেদ আল-আসিসি ও সৌদ আল-কাহতানি। এঁরা খাশোগি হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেন তুর্কি প্রসিকিউটর।

মার্কিন সিনেটে পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সভাপতি বব করকার বলেন, ‘যুবরাজ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জাড়িত ছিলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) যদি কোনো আদালতে উপস্থিত হতেন তাহলে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করতে ৩০ মিনিট সময়ও লাগত না।’

আরেক রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও ঘণ্টাজুড়ে চলা ওই ব্রিফিংয়ে উপস্থিতি ছিলেন। তিনি রিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যুবরাজ ‘পাগল’ হয়ে গেছেন। খাশোগিকে হত্যার শেষ সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সাহায্য করে গেছেন তিনি। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বলেন, যুবরাজকে নিয়ে ধোঁয়াশার কোনো সুযোগ নেই। এর জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনার এই সিনেটর বলেছেন, ‘অখণ্ডনীয় প্রমাণ না থাকলেও ঘটনাটি কে ঘটিয়েছে সেটা স্পষ্ট।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকাগুলো জানিয়েছে, খাশোগি হত্যার আগে-পরে এমবিএসের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদ আল-কাহতানির সঙ্গে যুবরাজ অন্তত ১১টি খুদে বার্তা চালাচালি করেন। সিআইএর হাতে এর প্রমাণ রয়েছে। কাহতানি ওই হত্যাকাণ্ড দেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে তুরস্ক সরকার সিআইএকে হত্যার যে অডিও টেপটি দিয়েছে, সেটি এই ব্রিফিংয়ে শোনানো হয়নি।

সৌদি সরকার এখন ভাবমূর্তি উদ্ধারের চেষ্টায় ব্যস্ত। সৌদি দূতাবাসের মুখপাত্র ফাতিমাহ বিশেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক রক্ষায় রিয়াদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুবরাজের বিরুদ্ধে হত্যার যে অভিযোগ উঠেছে তা সৌদি আরব অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, খাশোগির ক্ষতি করার বিষয়ে যুবরাজ কখনোই সৌদি কোনো নাগরিক বা বিদেশি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

গ্রাহাম জোর দিয়ে বলেন, ‘যুবরাজ কয়েক দশকের পুরনো সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন। এই লোকের হাতে যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য সৌদি সরকার পড়ে, তাহলে তাদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আমি মনে করি, তিনি উন্মাদ ও ভয়ংকর।’

জানা গেছে, সিআইএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেন যুবরাজ। এর পরপরই ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলবে এবং তেলের বাজারেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে।

এরপর আইন প্রণেতারা রিয়াদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দিলে ম্যাটিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সিনেটরদের আশ্বস্ত করে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজ জড়িত—এমন প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ নেই। সিনেটর গ্রাহাম তাঁদের মন্তব্য নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘আপনারা ইচ্ছা করেই অন্ধ হতে চাইছেন।’

জিনা হাসপেলের ব্রিফিংয়ের বিষয়ে ডেমোক্র্যাটরা একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। সিনেটর বব ম্যানেনডেজ বলেন, ‘আমি আগের চেয়েও এখন অনেক বেশি নিশ্চিত যে খাশোগি হত্যায় যুবরাজ জড়িত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইয়েমেন ও খাশোগি হত্যার বিষয়ে জোরালো অবস্থান নেওয়া।’ ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এর জের ধরে দুর্ভিক্ষের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে ইয়েমেন।

এদিকে তুরস্কের এক প্রসিকিউটর সৌদি যুবরাজের ঘনিষ্ঠ সে দেশের দুই নাগরিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা হলেন আহমেদ আল-আসিসি ও সৌদ আল-কাহতানি। এঁরা খাশোগি হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেন তুর্কি প্রসিকিউটর।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে আত্মবিশ্বাসী চীন
Next post সৌদি যুবরাজের দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
Close