Read Time:5 Minute, 39 Second

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল ঘেঁষে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের দেশ চিলি। দেশটিতে হাতে গোনা মাত্র ৫০-৬০ জন বাংলাদেশির বসবাস। তাদেরই একজন শোয়েব গাজী, যিনি আপন প্রতিভা ও যোগ্যতায় আজ চিলির জাতীয় ক্রিকেটের এক অতি পরিচিত নাম। ২০১৬ সালে সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেটে ব্রাজিলের বিপক্ষে চিলির জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটে তুখোড় এই ফাস্ট মিডিয়াম পেস বোলারের। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সহযোগী সদস্য দেশ চিলির জাতীয় ক্রিকেট লীগও মাতিয়েছেন শোয়েব গাজী।

বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে জন্ম শোয়েব গাজীর। বাবা মরহুম মাহাবুব রাব্বানি ছিলেন রামগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। গ্রামে শৈশবের সোনালী দিনগুলোতে ক্রিকেটের প্রতি আসক্তি। স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ার সময় ২০০২ সালে বিকেএসপির অধীনে লক্ষীপুরে অনূর্ধ-১৬ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ছিলেন। দাখিল পাশের পর পড়াশোনার জন্য ঢাকায় চলে আসা। যাত্রাবাড়ির তামিরুল মিল্লাত থেকে আলিম পাশ করার পর ধানমন্ডির স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন শোয়েব গাজী। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্পেনিশ ভাষায় ডিপ্লোমা নিয়ে ২০১৫ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান সুদূর চিলিতে।

লক্ষ্মীপুর ও ঢাকায় পড়াশোনা ও ক্রিকেট একসাথে হয়ে ওঠেনি মেধাবী শোয়েব গাজীর। চিলিতে এসেও যথারীতি আগে পড়াশোনা, তারপর ক্রিকেট। রাজধানী সান্টিয়াগোর ইউনিভার্সিটি অব চিলি থেকে স্পেনিশ ভাষায় উচ্চতর ডিগ্রী নেবার পর ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ ভর্তি হন শোয়েব গাজী। চিলির প্রবাস জীবনের শুরুতে তিনি এযাত্রায় সুযোগ পেয়ে যান ক্রিকেট প্রতিভাকে মেলে ধরার। ফেব্রুয়ারি থেকে মে অবধি চিলিতে ক্রিকেট মৌসুম। ২০১৬ সালে স্থানীয় স্টেশান সেন্টার ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে লীগে তার প্রথম ম্যাচের প্রথম ওভারেই মাত্র ১ রানে ২ ব্যাটসম্যানকে বোল্ডআউট করে নজর কাড়েন চিলির জাতীয় নির্বাচকদের।

জাতীয় লীগে ধারাবাহিক সাফল্যের পর ২০১৬ সালেই শোয়েব গাজীর ডাক আসে চিলি জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য। ঐ বছর নভেম্বরে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশীপ ক্রিকেটে আইসিসি’র আরেক সহযোগী সদস্য দেশস্বাগতিক ব্রাজিলের বিপক্ষে চিলির হয়ে মাঠে নামেন তিনি। ব্রাজিলকে হারিয়ে শুভ সূচনা করে চিলি। পরে মেক্সিকো, পেরু ও কলম্বিয়াকে হারায় চিলি। আর্জেন্টিনার সাথে গ্রুপ ম্যাচে হেরে গেলেও ফাইনালে আর্জেন্টিনাকেই হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে শোয়েব গাজীর চিলি। ল্যাটিন আমেরিকার ক্রিকেট ইতিহাসে লেখা হয়ে যায় শোয়েব গাজীর নাম, সেই সাথে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকার মাঠ মাতালেও মূল প্রফেশনে দারুণ যত্নবান শোয়েব গাজী। রাজধানী সান্টিয়োগো থেকে ১৮শ’ কিলোমিটার দূরবর্তী পেরু-বলিভিয়া সীমান্তে বাণিজ্যিক নগরী ইকিকের একটি অটোমোবাইল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে ‘একাউন্টিং এন্ড এডমিনিস্ট্রেটিভ’ শাখায় ফুলটাইম কর্মরত আছেন তিনি। কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে ২০১৭ ও ২০১৮ মৌসুমে চিলি জাতীয় ক্রিকেট দলের মূল একাদশ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন শোয়েব গাজী। তবে অনুশীলন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ফর্ম ধরে রাখার সুবাদে আসছে ২০১৯ মৌসুমে মূল একাদশের হয়ে আবার আগুণ ঝরবে শোয়েব গাজীর বলে। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নেও অবদান রাখতে চান চিলির এই পারফর্মার।        

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মতামত : লস এঞ্জেলেসে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গের উৎস!
Next post খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজার প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপি
Close