Read Time:8 Minute, 4 Second

গত ১২ অক্টোবর মরহুমা জেসমিন খানের ক্যালিফোর্নিয়া পাকোয়মা শহরের বাস ভবনে একান্ত পারিবারিক উদ্যোগে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে জেসমিন খান ফাউন্ডেশনের শুভ উদ্বোধন হয়েছে।

ভিন্নরকম আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জেসমিন খানের সব চেয়ে প্রিয় মানুষ সহধর্মী মোসলেম খান অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটার মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, জেসমিন খানের স্বপ্ন ছিল এই ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত যে সকল সুবিধা বঞ্চিত নারীরা কষ্টের মধ্যে জীবিকা নির্বহ করেন, যারা জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তাদের নিয়ে বই লেখা। কিন্তু তার সেই স্বপ্নটি পূরণ হওয়ার আগেই সবাইকে ছেড়ে তিনি চলে গেলেন। তাই তার স্বপ্নকে ভিন্ন ধারায় বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য স্বজনদের উদ্যোগে আমরা আমেরিকার বুকে জেসমিন খান ফাউন্ডেশন গঠন করেছি।

প্রাথমিক ভাবে উক্ত ফাউন্ডেশন ক্যালিফোর্নিয়া তথা আমেরিকার বুকে যে সমস্ত সুবিধা বঞ্চিত (সিঙ্গেল) নারীরা তাদের জীবন কষ্টের মধ্যে সংগ্রাম করে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করছেন, তাদেরকে সসম্মানে ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমে, তাদেরকে উৎসাহিত ও প্রেরণা দেওয়ার মাধ্যমে জেসমিন খানের স্বপ্নের বাস্তবরূপ দানের চেষ্টা করবে।
এ ছাড়া অদূর ভবিষ্যতে কমিউনিটি সেন্টার করার পরিকল্পনার কথাও জানান তার সুযোগ্য সন্তান মিকাইল খান।

এখানে উল্লেখ্য যে, জেসমিন খান ফাউন্ডেশনের স্বত্তাধিকারী হলেন, মোসলেম খান (স্বামী), মিকাইল খান (পুত্র), মাহাজাবিন ফারিয়া খান (কন্যা), আদিল চৌধুরী (জামাতা), ইতেল আরব চৌধুরী (নাতি) ও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত তাহমিনা খান (জেসমিন খানের একমাত্র বোন) ও সাহের জিবরান খান

কলামিস্ট রোটারিয়ান জেসমিন খান সমাজ সেবার মাধ্যমে জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখে গেছেন অসংখ্য গ্রন্থাবলী। নারী ভ্রমণ সাহিত্য রচয়িতা হিসেবে বিশিষ্ট হয়েছেন তার রচনায়। অত্যান্ত মেধাবী জেসমিন খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ডিগ্রী লাভ করেছিলেন এবং পরে চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে আইন ডিগ্রী লাভ করেন। লেখালেখি ছাড়াও জড়িত ছিলেন বহু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে।

তিনি বাংলাদেশে থাকাকালীন জেসমিন খান ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগে একটি এতিম খানা চালু করেছিলেন। বস্তির ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল খুলেছিলেন। যা এখনও পারিবারিকভাবে চালু রয়েছে। জেসমিন খানে জীবন অনেক দু:খ কষ্টে আতিবাহিত হয়েছে।

১৯৭১ সালের যুদ্ধে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার পরিবার। দুই ভাই শহীদ হন। পাক আর্মি ও রাজাকারের কাছে বিলিন হয়ে ছিল তাদের বাড়ি ঘর। যুদ্ধের নয় মাস ছিল ভয়ানক এক দু:সহ জীবন। এই ট্রামা থেকেই তার পিতার মৃতু্য হয়।

তার ১৫ বছরের সন্তান হারানোর চূড়ান্ত ট্রাজেডির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সামগ্রীক ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি ধারণ করেছেন সংগ্রাম ও সাধনা। স্বামীর প্রেরণায় লেখালেখির জগতে বিচরণের মাধ্যমে তিনি ভুলেছিলেন তার সকল ব্যাথা-বেদন। তাই তিনি উপলব্ধি করতেন সুবিধা বঞ্চিত নারীদের মনের কথা, অনুভব করতেন তাদের কষ্ট, ব্যাথা ও বেদন। তার জেসমিন খানের স্বপ্ন সফলের উদ্দ্যেশে তার পরিবার পরিজন শুভ উদ্বোধন করলেন এই ফাউন্ডেশনের।

উক্ত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাছাইকৃত ৩জন সুবিধা বঞ্চিত নারীকে পুরস্কৃত করা হবে। তাদের নগদ অর্থ প্রদান করা হবে এক বিশেষ আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে।
জেসমিন খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মোসলেম খান জানান, যদি কারও উল্লেখযোগ্য সুবিধা বঞ্চিত নারীদের সন্ধান জানা থাকে তারা আমাদের কাছে তাদের সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারেন। যারা সিঙ্গেল নারী হিসেবে কষ্ট করে জীবন ধারণ করছেন এবং সন্তান মানুষ করার মাধ্যমে কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান সৃষ্টি করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ফাউন্ডেশনের হিতাকাংখী ও সহযোগী ফারাহ সাঈদ, সালমা পারভিন, কামরুন নেচ্ছা নাহার কাজ করছেন এবং কমিউনিটিতে আগামী ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এর এওয়ার্ড সেরিমনির জন্য কমিউনিটিতে এ ধরণের নারীদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। তাদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ৩ জনকে উক্ত অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হবে।
তথ্য সরবরাহের নম্বর (৯২৫)-৫৭৭-৬৩৫১। বার্ষিক এওয়ার্ড অনুষ্ঠানের নাম হবে ‌’এ পথের নেই কোন সীমান’।
নাম করণ করা হয়েছে লেখিকা মরহুমা জেসমিন খানের প্রকাশিত গ্রন্থের নাম অনূসারে।

উল্লেখ, মরহুমা জেসমিন খানের সর্বশেষ লেখা বই ছিল ‘এ জারনি ফোরাম মাই হারড এন্ড সোল’। তিনি উক্ত বইটি ১০ই ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ তে প্রকাশকের কাছ থেকে গ্রহন করার কথা ছিল এবং ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল তার লস এনজ্ঞেলেসের রিটারন
টিকেট। জেসমিন খান চেয়েছিলেন লস এনজ্ঞেলেসে ফিরে এসে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন। সেই ইচ্ছা আর পূর্ন হয়নি বিধায়, জেসমিন খান ফাউন্ডেশন আগামী ফেব্রুয়ারি ,২০১৯ এর প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য ‘ এ পথের নেই কোনো সীমানা’ অনুষ্ঠানে উক্ত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে বলে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ঘোষনা দিয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post রাজনৈতিক মতামত : চৌধুরী আলম (ভিডিও দেখুন)
Next post প্রবাস মতামত : কমিউনিটি সাংবাদিকতা
Close