Read Time:5 Minute, 11 Second

মিয়ানমারে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেছে সরকার।

গতকাল বুধবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

জানা যায়, এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে ও ২০১৭ সালের মে মাসে দুবার সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসা হলেও সেসব ফলপ্রসূ হয়নি। তাই তৃতীয়বারের মতো আলোচনায় বসতেই এ সম্মেলনের আয়োজন।  ‘একুশ শতকের পাংলং’ শীর্ষক এ সম্মেলন  চলবে পাঁচ দিনব্যাপী।

এর আগে ২০১৫ সালে স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই চালাতে থাকা বিদ্রোহী দলগুলোর উদ্দেশে সরকারের পক্ষ থেকে এক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়। সে সময় প্রস্তাবে সম্মত হয়ে বেশ কিছু সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী তাতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু অনেকেই, বিশেষ করে দেশটির উত্তর অঞ্চলে তৎপরতা চালানো প্রধানতম বিদ্রোহী দলগুলো সরকারের সে প্রস্তাবকে অস্পষ্ট উল্লেখ করে তাতে স্বাক্ষর না করার ব্যাপারে অবস্থান  নেয়।

এই সম্মেলনের সূত্র ধরে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা আদায়ের প্রস্তুতিকালে আজকের মিয়ানমার তৎকালীন বার্মার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান ছিলেন অং সান সু চির বাবা জেনারেল অং সান। সরকারপ্রধান থাকাকালীন জেনারেল অংয়ের উদ্যোগে সে সময় ‘পাংলং’ সম্মেলন নামে এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয় । প্রধান প্রধান সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর অনেকেই সে সম্মেলনে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যা ঐতিহাসিকভাবে ‘পাংলং চুক্তি’ নামে পরিচিত।

১৯৪৭ সালে স্বাক্ষরিত সেই চুক্তি অনুসারে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর স্বায়ত্তশাসন মেনে নেওয়া হয় এবং স্বাধীনতার পরে তারা একটি যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করে মিয়ানমারের সঙ্গে থাকবে নাকি থাকবে না, সে ব্যাপারেও তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তার কিছুকাল পরেই জেনারেল অং সান নিহত হলে পাংলং চুক্তি অকার্যকর হয়ে যায়।

তার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকারগুলোর বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের চুক্তিকে অসম্মান করার অভিযোগ উঠে আসছে। বিদ্রোহীদের দাবি মেনে না নেওয়ায় চলছে সশস্ত্র লড়াই।

এই সম্মেলনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের লড়াই আর সহিংসতা দূর করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রথমে সম্মেলনে শুধু ২০১৫ সালে ঘোষিত যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষরকারী বিদ্রোহী দলগুলোর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পরে মিয়ানমার সরকার দেশটির উত্তর অঞ্চলের স্বাক্ষর না করা ‘নর্দার্ন অ্যালায়েন্স’র  সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর প্রতিনিধিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

যদিও সরকারে মুখপাত্র জাও হতায় জানিয়েছেন, স্বাক্ষর না করা দলগুলো সম্মেলনে যৌথ আলোচনাগুলো শুনতে পারবে, কিন্তু তাদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে না।

২০১৬ সালে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনপিএল) নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর শান্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতিই ছিল সবার আগে।  কিন্তু বাস্তবে তা না হয়ে বরং এর পরে রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপরে ভয়াবহ সামরিক নৃশংসতা নেমে আসে। এ ছাড়া সহিংসতার মুখে পড়ে আরো কিছু সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা শুক্রবার
Next post ট্রাম্প-মেরকেলের বাকযুদ্ধ
Close