Read Time:6 Minute, 45 Second

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সেমিনার হলে ‘আন্তর্জাতিক সঙ্কট নিরসন এবং অপরাধমূলক জবাবদিহিতার অভাব বাংলাদেশে’ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের আয়োজনে গত বৃহস্পতিবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেলে বাংলাদেশের পক্ষে কেউ প্রতিনিধিনিত্ব করেনি। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গ্লোবাল ক্রাইম জাস্টিসের অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ স্টেফান র‌্যাপ, বাংলাদেশে বহুল আলোচিত টোবি ক্যাডম্যান এবং আল্মোডেনা বের্নভিউ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ডেভিড ম্যককিন।

অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ ও কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দর্শক সারিতে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত আসামিদের নিকট আত্মীয়দের উপস্থিত এবং তাদের সাথে টোবি ক্যাডম্যানের উঠাবসা ছিল লক্ষণীয় এবং সহজেই অনুমেয় যে, আলোচনা ছিল বাংলাদেশ বিরোধী একটি প্রচারণার অংশ, যা যুদ্ধাপরাধের দণ্ডিতদের অর্থায়নে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক গ্লোবাল ক্রাইম জাস্টিসের অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ স্টেফান র‌্যাপ তার আলোচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও তৎকালীন সময়কার যুক্তরাষ্ট্র নীতির কথাসহ যুদ্ধাপরাধীদের কথা তুলে ধরেন ও ট্রাইবুনালের পদ্ধতিগত বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, তখনকার যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন।স্টেফান র‌্যাপ তার আলোচনায় বাংলাদেশকে নিয়ে পরবর্তী যেকোনো ধরণের আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি প্যানেল আলোচকদের আলোচনার বিরোধিতা করে বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন চলছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলায় ২৩ জন র‌্যাব সদস্যের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ফাঁসির আদেশের কথা উল্লেখ করেন। এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত টোবি ক্যাডম্যানকে বিমর্ষ দেখা যায় এবং তিনি কোনো উত্তর দিতে সক্ষম হননি।

অনুষ্ঠানে মাত্র পাঁচ মিনিটের প্রশ্ন উত্তর সেশন পর্ব রাখা হয়। প্রশ্ন উত্তর পর্বের শুরুতেই প্যানেলে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিত্ব না রাখায় মাহবুব হাসান সালেহ তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আলোচকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন যেখানে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা সেখানে আলোচক হিসেবে তিনি প্যানেলে থাকলেই আলোচনা অনুষ্ঠানটি গুরুত্ব পেত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রাক্তন প্রসিকিউটর অমর ইসলাম। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এখানে এ ধরণের আলোচনার সরাসরি বা পিছন থেকে কারা অর্থের যোগানদাতা কারা? দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরা ওয়াশিংটনের মত একটি জায়গায় বাংলাদেশ বিষয়ক আলোচনায় কিভাবে উপস্থিত থাকে? তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতেই সকল বিচার কার্য পরিচালনা করছে এবং তা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবেই করছেন।

অনুষ্ঠানে দস্তগীর জাহাঙ্গীর তুঘ্রীল আলোচকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরেপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়েছিল, সেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ৩০ লক্ষ মানুষ ও ২ লক্ষ মায়েদের সম্ভ্রম লুট করেছে তাঁদের পক্ষ নিয়ে জর্জ টাউন ভার্সিটির মত পবিত্র ও পরিচিত প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের তথাকথিত আলোচনা মানায় না। তিনি আরও বলেন যে, সঞ্চালক বলেছেন বাংলাদেশের গত নির্বাচনে সকল বিরোধী দল নাকি বয়কট করেন, তা সম্পূর্ণ ঠিক নয়।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কোন একক দলের সরকার নয়, তা একটি জোটের সরকার ও সংসদে কার্যকরী বিরোধী দল ও বিদ্যমান। গত নির্বাচনে একটি দল নির্বাচন থেকে বিরত থাকে এবং তা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠান স্থলের বাইরে স্থানীয় দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের উপস্থিত নেতাকর্মীরা জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অমর ইসলাম, দস্তগীর জাহাঙ্গীর, আলতাফ হোসেন মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন প্রমুখ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post আমিরাত প্রসাসের আনন্দ উৎসব
Next post খালেদার রায় ঘিরে নিউইয়র্কে উত্তেজনা
Close