কাজী মশহুরুল হুদা :
একুশ নিয়ে আমাদের চিন্তা চেতনায় অনেকেই পিছিয়ে আছি। আমরা ভাবছি একুশ কি উদযাপন হবে নাকি পালিত হবে?
এনিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠেছে। এক সময় ছিল একুশ আমরা পালন করতাম। ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের স্মৃতির উপর শ্রোদ্ধা রেখে এটি পালন করা হতো। এখন সেই ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাতিতে পরিণত হয়েছি। আমাদের নিজস্ব দেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা স্বক্রিয়তা অর্জন করেছি, ভাষার অভিভাবকত্বের দাবিদার হয়েছি।
একুশের শোক এখন জাতির শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার জন্মদাতা হয়েছি। এখন আমাদেরকে ভাবতে হবে এই জাতিকে অন্যান্য উন্নত দেশের মত কিভাবে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে সেটা।
আমার ভাষা, আমার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সুপরিচিত করে তুলতে হবে বিশ্বের সকল জাতির কাছে। এখন শুধুমাত্র ২১ শে ফেব্রুয়ারি একটি দিবসের মধ্যে আমাদের ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে রাখলেই দায়িত্ব শেষ হবে না। কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যান্য সুপ্রতিষ্ঠিত জাতির পদাঙ্ক অনুস্মরণ করে কিভাবে আমরা ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারি সেটি ভাবনার সময় এসেছে। এখনকার কার্যক্রম হওয়া উচিত এটাই।
আমরা যদি কোরিয়ান, জার্মন, ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের দিকে তাকাই বা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাব তাদের নিজস্ব কালচারাল সেন্সার রয়েছে। যেমন-
কোরিয়ান কালচারাল সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিল, আমেরিকান সেন্টার, জার্মান কালচারাল সেন্টার ইত্যাদি। তারা তাদের ভাষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এই সকল সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে নিজ জাতিকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরছে। ঠিক একই ভাবে আমরাও আমাদের ভাষাকে, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারি। এখনই সময় এসেছে সেই পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উত্তর আমেরিকা কবিতা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। তার সাথে বাংলাদেশ সেন্টার নিয়ে আলোচনা করলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর পরমর্শ দিয়েছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সেন্টার খোলার নীল নকশা প্রণয়নের প্রস্তাবনা তৈরি করছি যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হবে। এখানে থাকবে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, পারফরমিং আর্ট বিভাগ, চারুকলা বিভাগ, চলচ্চিত্র ও নাট্য বিভাগ। শিশু প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনের মাধ্যমে বিন্যাস্ত হবে দেশের কৃষ্টি। প্রচার ও প্রসার ঘটবে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি। কার্যক্রমের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি ঘটবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সার্থক হবে একুশের চেতনা।
More Stories
আমেরিকায় বাঙ্গালী নারীদের অগ্রগতি
বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি আমরা প্রায়শই লক্ষ্য করি। কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে যেমন চিকিৎসক, স্হপতি, বৈমানিক, শিক্ষক ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের...
কমিউনিটির উন্নয়নে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকা বাঞ্চনীয়
কাজী মশহুরুল হুদা : আমার অভিজ্ঞতায় এবং বিশ্লেষণে দেখেছি দেশের জন্য, জাতির জন্য, দেশাত্মবোধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে যারা কাজ করেন...
‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’
কাজী মশহুরুল হুদা : ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই জ্বলছে’। একাত্তরের এই দিনে স্বাধীন বাংলা...
সম্পাদকীয় : ক্যালিফোর্নিয়া আ’লীগের ঐক্যের প্রক্রিয়া কোন পথে?
কাজী মশহুরুল হুদা : লস এঞ্জেলেস আওয়ামী পরিবারের দীর্ঘ প্রত্যাশিত রাজনৈতিক বিভবাজন সমাধানের সংলাপ অনুষ্ঠিত হল গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০...
লস এঞ্জেলেসের নেতা সমাচার
কাজী মশহুরুল হুদা : লস এঞ্জেলেসে কোন নেতা নেই। যা আছে তা হচ্ছে- তথাকথিত নেতা অর্থাৎ স্বঘোষিত। এই সব কথিত...