কাজী মশহুরুল হুদা :
(পূর্ব প্রকাশের পর)
কোরিয়ান কমিউনিটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাব ফেলতে শুরু করে, কারণ, এদেশের জনগনের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ব্যাবসায়িক মানুষের অনুদানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা কাউন্সেল ম্যান টম ল্যাবাঞ্চকে বলে দিল তুমি যদি ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামকরণ প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকো আমরা তোমার সাথে নেই। কাউন্সেলম্যান বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ কন্সুলেট জেনারেল আবু জাফরকে আরেকটি চিঠি পাঠান। দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে- লিটল বাংলাদেশ নামকরণে তার সমর্থন তিনি তুলে নিলেন।
তবে তিনি পলিটিশিয়ান, তিনি জানেন আমাদের দাবি আইন সঙ্গত। তাছাড়া নির্বাচনে অর্থের সাথে প্রয়োজন ভোট। কাউকেই অখুশি রাখতে চাইবেন না। মিষ্টি মুখে কাজ হাসিল করাই পলিটিশিয়ানদের কাজ।( গনতন্ত্রিক দেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ),
কন্সাল জেনারেল আবু জাফর আমাদেরকে বললেন, এভাবে আমরা কাজ আদায় করতে পারব না। তারজন্য একটা কমিটি গঠন করতে হবে এবং সেই কমিটি কোরিয়ান কমিউনিটি ও সিটির সাথে ডিপ্লোমেটিক উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে উদ্দেশ্য হাসিল করতে হবে। তিনি বলেন, কন্সুলেট অফিস কমিউনিটির কাজ করার এখতিয়ার নেই। কমিউনটির মধ্য থেকে প্রতিনিধি বানিয়ে তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। তিনি কন্সুলেট অফিসে কমিউনিটির মধ্যে থেকে কমিটি গঠনের জন্য মিটিং এর আহ্বান জানান। সকলেই উপস্হিত হয় কমিটি গঠনের মিটিংএ।
মিটিং এ ইশতিয়াক চিশতি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার জলিল খানের নাম উল্লেখ করেন। মুজিব সিদ্দিকী নিজেই নিজের নাম প্রস্তাব করেন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে তিনি থাকতে চান। কুদ্দুস খান আমার নাম প্রস্তাব করেন। এই তিনজনকে নিয়ে ‘লিটল বাংলাদেশ’ কো-অর্ডিনেটর কমিটি গঠিত হয়। সর্বপ্রথম ইঞ্জিনিয়ার জলিল খানকে চীফ কো-অর্ডিনেটর ও মুবিজ সিদ্দিকী এবং আমি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে এই তিনজনার কমিটি হয় উক্ত প্রথম মিটিংএ।
আমরা কোরিয়ান কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সাথে একটা বৈঠকে বসলাম। সেই বৈঠকে সাবান (সাউথ এশিয়ান বিজনেস এলায়েন্স নেটওয়ার্ক) এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইসলাম অবজারভার হিসেবে গেলেন। তাদের একটাই দাবী পিটিশন তুলে নিলে তারা আমাদের সাথে ‘লিটল বাংলাদেশ’ নিয়ে আলাপ আলোচনায় বসবেন। সিটি হল থেকে আমাদেরকে জানালেন কোরিয়ান কমিউনিটির সাথে সমঝোতা করতে হবে। এরমধ্যে নেবারহুড কাউন্সেলে আমরা লিটল বাংলাদেশ এজেন্ডা দিলাম। ঠিক হল বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষে নেবারহুড কাউন্সেল মিটিং এ ইঞ্জিনিয়ার জলিল খান, মুজিব সিদ্দিকী ও কন্সাল শামীম আহমেদ কথা বলবেন। আমাদের দাবির কথা তুলে ধরবেন। এর মাধ্যমে লিটল বাংলাদেশ নামকরণ মিডিয়ার দৃষ্টিতে আসল এবং ধীরে ধীরে এজেন্ডা শক্তিশালি হতে শুরু করলো।
কন্সাল জেনারেল অফিসে দ্বিতীয় দফা মিটিং হল। কো-অর্ডিনেটররা কমিউনিটির কাছে তুলে ধরলেন প্রগ্রেস এবং কোরিয়ান কমিউনিটির সাথে আলোচনার ফলাফল। এ মিটিং এ আপত্তি উঠল কমিটি নিয়ে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে লিটল বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করছেন তাদেরকে কমিটিতে অন্তভূক্ত করার জোরদাবী উঠল। এই মিটিং এ কন্সাল জেনারেল উপস্থিত ছিলেন না। মনরক্ষার্থে সর্বসাকুল্যে দশ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হলো। এ কমিটিতে থাকলো- ইঞ্জিনিয়ার জলিল খান, মুজিব সিদ্দিকী, আমি, মমিনুল হক বাচ্চু, শামীম হোসেন, ডা: আবুল হাসেম, সোহেল রহমান বাদল, হাবিব আহমেদ টিয়া, কুদ্দুস খান ও আকতার মিঞা।
কমিটি হওয়ার পর কমিটির অনুমোদন ছাডায় এবং
কমিটির কারুর সাথে যোগাযোগ না করেই মুজিব সিদ্দিকী নিজে নিজেই ই-মেইলে কাউন্সিলম্যানকে চিঠি লিখলেন কমিটির মূখপাত্র হিসাবে।এদিকে মুজিব সিদ্দিকীর এই যোগাযোগ কমিটির অন্যারা পছন্দ করলো না। তারা একটি মিটিং ডেকে নীতি নির্দ্ধারণ করল কমিটি কি ভাবে এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে মুজিব সিদ্দিকীকে লিটল বাংলাদেশ বিষয়ক কোন ই-মেইল কমিউনিটিতে অথবা সিটির সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করলে তিনি তখন ক্ষুব্ধ হন। মুজিব সিদ্দিকী আইন বিভাগের মানুষ, তিনি চেয়েছিলেন বিষয়টির মধ্যস্থতায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু অন্যরা তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এখানে কিছু বিষয় আলোচনার মাধ্যে আনবো, যদিও অপ্রাসঙ্গিক, তথাপি জানা জরুরী।
লস এঞ্জেলেসে বালা অর্থাৎ বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব লস এঞ্জেলেসকে কেন্দ্র করে মমিনুল হক বাচ্চু একাই একটি শক্তি এবং অন্যান্য সকলে মিলে অপর একটি শক্তিতে পরিণত হয়ে কমিউনিটিতে বিভক্তি হয়ে পড়ে। মমিনুল হক বাচ্চুর বিরুদ্ধে সকলে উঠে পড়ে লাগলেও তার জনপ্রিয়তার কাছে সমকক্ষ হতে পারেনি। তাই বাচচু’র বিরুদ্ধে স্লোগান চালু হয়েছিল, “ ব্যক্তি নয় পরদধতি চাই “ এরপর তৈরি হয় বাফলা তৃতীয় শক্তি হিসেবে। এই বাফলার অভ্যান্তরিণ গণ্ডগোলের মধ্যে মুজিব সিদ্দিকী একজন বিরোধী ব্যাক্তিত্বে পরিণত হন। লিটল বাংলাদেশ নামকরণ প্রক্রিয়া কোন সংগঠনের মাধ্যমে হয়নি। ব্যাক্তিসমূহের প্রচেষ্টায় কমিটির মাধ্যেমে নির্মাণের কাজ এগিয়েছে। যদিও নামকরণ কমিটিতে বেশিরভাগই ছিল বাফলার ব্যাক্তিবর্গসমূহ। মমিনুল হক বাচ্চু ও বাফলার কর্মকর্তাবৃন্দ এক হয়ে পড়ায় মুজিব সিদ্দিকী একা হয়ে যান। ফলে তিনি নেতৃত্ব হাতে নেওয়ার জন্য কমিউনিটিতে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেন। শতখানিক স্বাক্ষর সংগ্রহ করলেন এই হিসেবে যে, কমিউনিটির স্বাক্ষরদানকারীগণ মুজিব সিদ্দিকীকে লিটল বাংলাদেশ নামকরণ প্রক্রিয়ার কমিউনিটির পক্ষে ওকালতি করার পাওয়ার অব এটর্নি দিচ্ছে। তিনি স্বাক্ষর সমূহ সিটির কাছে এবং কোরিয়ান কমিউনিটির কাছে জমা দিয়ে বলেন যে, তিনিই একমাত্র প্রতিনিধি কমিউনিটির এর্টনি ইন ফেকট।
অপরদিকে মুজিব সিদ্দিকী মমিনুল হক বাচ্চুর এবং বাফলার বিপরীত গ্রুপকে সংঘবদ্ধ করে এক টাউন হল মিটিং করেন এবং লিটল বাংলাদেশ নামকরণ কমিটিকে দশ সদস্যের পরিবর্তে ২৬ সদস্যের করেন (অঘোষিত ও অমনোনিত)। এবার মুজিব সিদ্দিকী মূল কমিটির সাথে পরামর্শ না করেই নিজেই সিটি হল ও কোরিয়ান নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। বিষয়টা জটিল হয়ে ওঠে। মূল কমিটি অভ্যান্তরিন কোন্দল রোধ করতে ব্যাস্ত। অপরদিকে মুজিব সিদ্দিকী একাই বিষয়টি নিয়ে দ্রুত নিস্পত্তির চেষ্টা করছেন। এদিকে কোরিয়ান কমিউনিটি কোন মতেই কোরিয়া টাউনের সীমারেখার মধ্যে লিটল বাংলাদেশ স্থাপন করতে দেবেন না। তারা বিকল্প প্রস্তাব দিল যে, থার্ড স্ট্রীষ্টের উপর ভারমন্টের পূর্ব দিকে কয়েক ব্লক নিয়ে নামকরণ করতে পারবে, কিন্তু ভারমন্টের থার্ডস্ট্রীষ্ট সংলগ্ন স্টোরগুলোকে দাবী করতে পারবে না। তবে ইসলামিক সেন্টার অন্তভূক্ত হতে পারে। কমিটি জানলো এই এলাকায় বাংলাদেশী মানুষের ঘনবসতি নেই। ৫,০০০ স্বাক্ষর সংগ্রহ করা অসম্ভব হবে। তারা বলেছিল কোরিয়ানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেবে কিন্তু বিষয়টি ছিল অযৌক্তিক। এর মধ্যে মুজিব সিদ্দিকী গোপনে বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষে কোরিয়ান কমিউনিটির কাছে প্রস্তাব দিল যে, একটাই পথ খোলা আছে তা হলো থার্ড স্ট্রীস্টকে ভারমন্ট থেকে ওয়েস্টার্ন পর্যন্ত লিটল বাংলাদেশ নামকরণ করা। যেমনটি রয়েছে থাই টাউন, লিটল আরমেনিয়ার মধ্যে। কোরিয়ান কমিউনিটি কোরিয়া টাউনকে সিটির নিয়মানুসারে যেহেতু অনুমোদিত নয় এবং লিটল বাংলাদেশ নামকরণের জন্য বাংলাদেশ কমিউনিটি আবেদন করেছে, সেহেতু কোরিয়ান কমিউনিটি বিপাকের মধ্যে পড়ে আছে। তাদের হাতে সমঝোতা ছাড়া আইনগত কোন বিকল্প পথ নেই।
( চলবে )।
More Stories
উত্তাল কিরগিজস্তানের বিশকেক, আতঙ্কে বাংলাদেশিসহ বিদেশি শিক্ষার্থীরা
কিরগিজস্তানের বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা চলছে। এতে চরম আতঙ্কে সময় পার করছেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দেশটিতে থাকা...
ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি
বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের করা ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’ এশিয়া তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের ৯ তরুণ। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে...
ইউনেসকোর ‘বিশ্বস্মৃতি’র তালিকায় রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা উপন্যাসিকা ‘সুলতানা’স ড্রিম’ ইউনেসকোর ‘বিশ্বস্মৃতি’ বা ‘ওয়ার্ল্ড মেমোরি’র তালিকায় স্থান পেয়েছে। মঙ্গোলিয়ার...
জমকালো আয়োজনে ‘আবিয়া’ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া চ্যাপ্টারের ফ্যামিলি নাইট অনুষ্ঠিত
আমেরিকান এসোসিয়েশান অব বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারস এন্ড আর্কিটেক্টস (AABEA) সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া চ্যাপ্টারের এবারের বার্ষিক ফ্যামিলি নাইটের জমকালো আসর বসে ৪ঠা মে...
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহত ৮ যুবকের ৫ জনই মাদারীপুরের
সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরেনৌকাডুবিতে ৮ যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ৮ জনের মধ্যে ৫ জনই মাদারীপুরের রাজৈর...
নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে বাফেলোর পূর্বাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো...