Read Time:6 Minute, 52 Second

আর্থিক ও তহবিল পরিচালনা নীতিমালা প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যেখানে নির্ভরযোগ্য, স্বচ্ছ এবং জনভিত্তিক রাজনীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ণকালীন রাজনৈতিক কর্মীদের ভাতা ও বোনাস দেবে দলটি। সেই কাঠামোর বিষয়টিও নীতিমালায় জানানো হয়েছে।

বুধবার (৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর রূপায়ন টাওয়ারে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নীতিমালা প্রকাশ করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আর্থিক ও তহবিল পরিচালনা নীতিমালাটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো দলের প্রতিটি টাকার উৎস ও ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ, নৈতিক ও আইনি কাঠামোর মধ্যে রাখা। দলের অর্থনীতি হবে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অডিটযোগ্য এবং কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অর্থের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা হবে। দেশের প্রচলিত আইন, যেমন- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন নীতিমালা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলা হবে।

মাসিক সদস্য ফি: সদস্যরা নির্দিষ্ট রসিদ, মোবাইল পেমেন্ট বা ব্যাংকের মাধ্যমে চাঁদা দিতে পারবেন।

গণ-অনুদান: ১০০ টাকা ক্যাম্পেইন এবং ছোট দান, বড় স্বপ্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ জনগণের ক্ষুদ্র অনুদান সংগ্রহে জোর দেওয়া হবে, যাতে দলের কাজে গণমানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়। ব্যক্তিগত অনুদান থেকেও আয় আসবে।

দলীয় আয়: টি-শার্ট, মগ, বই বিক্রি, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং অনলাইন কোর্স থেকে আয় করা হবে।

অনলাইন গণচাঁদা: ওয়েবসাইটে ডিজিটাল রসিদের মাধ্যমে দেশের ও বিদেশের প্রবাসীরা অর্থ দান করতে পারবেন।

করপোরেট অনুদান: নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে শুধু বৈধ ও নৈতিক উৎস থেকে করপোরেট অনুদান গ্রহণ করা হবে।

নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনো কালো টাকা, অজানা উৎস, বিদেশি সরকার বা অপরাধ সংশ্লিষ্ট অর্থ গ্রহণ একেবারেই নিষিদ্ধ। এনসিপি আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেবে। যেমন-

# প্রতিটি অনুদানে স্বয়ংক্রিয় রসিদ, অনলাইন এন্ট্রি এবং ইউনিক আইডি থাকবে।
# ৫ হাজার টাকার বেশি দানের ক্ষেত্রে দাতার পরিচয় গোপন রাখা হলেও দলীয়ভাবে তা সংরক্ষিত থাকবে।
# সব লেনদেন গুগল শিট বা সফটওয়্যারে রেকর্ড হবে, যা কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য।
# তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে অনুদানের একটি অংশ কেন্দ্রীয়ভাবে পুনর্বণ্টন করা হবে।
# বাজেট অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যয় করা যাবে না এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৬টি অগ্রাধিকার ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

এছাড়া জোর করে বা হুমকি দিয়ে অর্থ সংগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। অনিয়ম প্রমাণিত হলে সতর্কীকরণ, বরখাস্ত এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনসিপি কেন্দ্রীয় অর্থ ও বাজেট কমিটি
দলের বাজেট, অনুদান ও ব্যয়ের স্বচ্ছ ও নৈতিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই কমিটি গঠিত হবে। কোষাধ্যক্ষ সভাপতি হিসেবে থাকবেন এবং ৫ জন সদস্য থাকবেন যারা তথ্যপ্রযুক্তি, অডিট, ব্যাংকিং, আইন ও ডায়াসপোরা প্রতিনিধি হবেন। কমিটির মেয়াদ ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩ মেয়াদ পর্যন্ত কাজ করতে পারবে।

কমিটির প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাজেট তৈরি ও অনুমোদন, তহবিল সংগ্রহ কৌশল প্রণয়ন (যেমন- QR কোড, ইভেন্ট ফান্ডরেইজিং), বণ্টন ও অনুমোদন, অডিট তদারকি (অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরীক্ষা), নীতিমালা হালনাগাদ, গোপনীয়তা রক্ষা, কোষাধ্যক্ষের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরুরি ব্যয় অনুমোদন এবং আর্থিক তদন্ত শুরু করার ক্ষমতা থাকবে। প্রতি ছয় মাস অন্তর আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং দলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে পূর্ণ নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক। আর্থিক কমিটির বিষয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটি তদন্ত করবে।

পূর্ণকালীন রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য ভাতা ও বোনাস কাঠামো
এনসিপি বিশ্বাস করে টেকসই ও মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পূর্ণকালীন সংগঠকদের জন্য কাঠামোবদ্ধ ভাতা এবং ফেলোশিপ প্রোগ্রাম প্রয়োজন। তরুণ নেতারা নৈতিক আয় বজায় রেখে জনসেবায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন, সে লক্ষ্যে এনসিপি কাজ করে যাচ্ছে। ফেলোদের অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে চারটি স্তরে শ্রেণিবদ্ধ করা হবে এবং ভাতার পরিমাণ অঞ্চলভেদে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নির্ধারণ করা হবে।

এনসিপি এই নীতিমালার মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও নৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। বিস্তারিত নীতিমালা এনসিপির ওয়েবসাইটে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post শেখ মুজিবসহ অন্যদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি সঠিক নয়
Next post রাজনৈতিক দল নয়, জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায় জাতিসংঘ
Close