Read Time:4 Minute, 36 Second

ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে, বিশেষত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের পর।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সোমবার (৪ নভেম্বর) ঝাড়খণ্ডের পলামু অঞ্চলের গঢ়ওয়া শহরে একটি নির্বাচনী সভায় বলেন, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, কংগ্রেস এবং আরজেডি—এই তিনটি দল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করে। তারা ভোটের জন্য বাংলাদেশিদের আশ্রয় দেয়, তাদের জন্য গোটা রাজ্যে বসবাসের জায়গা তৈরি করছে। তিনি আরো বলেন, এই দলগুলো তোষণের রাজনীতি করছে এবং তাদের এই চক্রান্তের ফলে রাজ্যের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

মোদি জানান, পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, সরস্বতী বন্দনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে, উৎসবের সময় পাথর ছোড়া হচ্ছে, দুর্গামাকে আটকে দেওয়া হচ্ছে, এবং মেয়েদের সঙ্গে বিয়ের নাম করে প্রতারণা করা হচ্ছে। এটি আর কেবল রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও বিপজ্জনক, মন্তব্য করেন মোদি।

এর আগে, ৩ নভেম্বর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে এক নির্বাচনী সভায় বলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিষয়টি অবহেলা করা হচ্ছে, এবং এই পরিস্থিতি শুধু ঝাড়খণ্ডের নয়, পশ্চিমবঙ্গেরও একটি বড় সমস্যা। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন এবং অভিযোগ করেন যে তারা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় সৃষ্টি করছেন।

এদিকে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, কংগ্রেস ও আরজেডি জোট সরকারের পক্ষ থেকে বিজেপির এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা দাবি করেছেন যে, বিজেপি দেশের সমাজবদ্ধতা এবং সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিপরীতে বিভাজন সৃষ্টি করছে। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এই ইস্যুতে মোদি এবং শাহের বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন।

ঝাড়খণ্ডের এই বিধানসভা নির্বাচন বিজেপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তির ক্রমবর্ধমান সমালোচনার প্রেক্ষাপটে। বিজেপি রাজ্যটির বিধানসভায় ক্ষমতা দখল করতে চায়, যেখানে কংগ্রেস-আরজেডি-ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার জোট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।

এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ইস্যুটি এখন রাজ্যজুড়ে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী কয়েকদিনে এই ইস্যু আরও জোরালো হয়ে উঠতে পারে, যখন বিরোধীরা একে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন, এবং বিজেপি এই ইস্যুকে তার নির্বাচনী প্রচারের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

আগামী নভেম্বর মাসেই ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে এই বিতর্কের ফলাফল রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post হাছান মাহমুদের বক্তব্যকে ‘ভূতের মুখে রামনাম’ বললেন মির্জা ফখরুল
Next post রাশিয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দাদের
Close