বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শৃঙ্খলা ফেরাতে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার মানে প্রশাসন ফেল করছে (ব্যর্থ হয়েছে)।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীকে পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার সেসব এলাকাতে দেওয়া দরকার যে সব এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু যে সব এলাকা শান্তিপূর্ণ আছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সব বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন সেখানে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে আবার নতুন সমস্যা তৈরি করা সমচীন হবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি এ সব কথা বলেন।
এ সময় দলের পক্ষ থেকে আহত ও নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেন মির্জা ফখরুল।
আহতদের সঙ্গে দেখা করা শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমি আহ্বান এবং অনুরোধ করব, কখনো এমন কোনো ব্যবস্থা নেবেন না যাতে সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য বুমেরাং হবে এবং দেশের মানুষের জন্য এটি বুমেরাং হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আশা করি সঠিকভাবে বিষয়গুলো উপলব্ধি করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই এ কথাটি স্পষ্ট করে বলছি কারণ এটি আমার দায়িত্ব বলার।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ১৬-১৭ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করছি, মার খাচ্ছি, জেলে যাচ্ছি, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি, শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা সবাই অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে আছি নতুন এই অন্তর্বর্তী সরকার তারা এই জঞ্জাল দূর করে দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যে পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের একটা সংসদ তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই সব দিক চিন্তা ভাবনা করে সামনে যেন সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা দেখতে পাই। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখতে পাই, পার্লামেন্ট দেখতে পাই। মানুষের ওপর যেন অন্যায় অত্যাচার না হয়, আমাদের শিশুদের ওপর যেন আর গুলি করে হত্যা না করা হয়। আমি জানি আমার কথাগুলো অনেকের মনঃপুত নাও হতে পারে। কিন্তু সত্য উচ্চারণ করা আমার দায়িত্ব।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আপনারা সেই কাজগুলো করেন যে কাজগুলো একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ একটা সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ সন্ত্রাসমুক্ত ভবিষ্যৎ এবং মানুষের অধিকারযুক্ত ভবিষ্যৎ আমরা ফিরে পেতে পারি।
আওয়ামী লীগের আমলে নিজেদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা প্রায় ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করছি। এ সময়ে আমাদের প্রায় সাতশ মানুষকে আয়না ঘরে গুম করে রাখা হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার নিজের বিরুদ্ধে ১১১ টি মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ যিনি কৃষক, যিনি কখনো আদালত কী দেখেননি তাদেরকে নিয়মিত আদালতে যেতে হয়, জেলে যেতে হয়। কত ব্যবসায়ী তার ব্যবসা হারিয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, এমন কি এ জেলায় ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদসহ দলটির ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর মির্জা ফখরুল ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলায় আয়োজিত দুটি সমাবেশে যোগ দেন।
More Stories
দায়িত্ব নেওয়ার সময় নির্বাচন দেওয়ার কোনো শর্ত ছিল না : সাখাওয়াত হোসেন
দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি না, তা নির্বাচন কমিশনই বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার...
জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে বিভাজন ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে : এনসিপি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক...
আপাতত লন্ডন যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া, আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনের হাসপাতালে নিতে কাতারের ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হযরত...
‘আমি ভালো আর সব খারাপ’— আওয়ামী আমলের এই প্রচার এখনো চলছে: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমি ভালো আর সব খারাপ। এ রকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি ১৬ বছর ধরে।...
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
