Read Time:8 Minute, 56 Second

অলিম্পিক গেমসে পদক জয়টা আসলে একটা স্বপ্ন দেখা ও তা বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়া বলেই মনে করেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রীড়াবিদ ডালিয়া আক্তার। তার মতে, কোনো দেশ যখন অলিম্পিকসে পদক না পায়, তখন কোনো একজনকে পথ দেখাতে হয়, ভারতের ক্রীড়াপ্রেমীদের একটা অংশ একটা সময় পর্যন্ত টেনিস অনুসরণ করলেও এটায় ভারত ভালো করতে পারবে বলে মনে করতো না কিন্তু লিয়েন্ডার পেজ অলিম্পিক গেমসে পদক পাওয়ার পর অনেকেই টেনিস খেলার প্রতি ঝুঁকেছিলেন ১৯৯৬ সালের পর।

ডালিয়া আক্তার বলেন, ‘অলিম্পিকসে মেডেল পাওয়া যে সম্ভব এটা প্রথমে মননে মগজে চিন্তা করাটা জরুরি। সেটা অ্যাথলেটের জন্য যেমন জরুরি, কোনো দেশের অ্যাথলেটিক্সের ব্যবস্থাপকদের জন্যও একইভাবে প্রযোজ্য।’

উদাহরণ হিসেবে ভারতের বিখ্যাত ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলেট পিটি উষার কথা চলে আসে।

ডালিয়া আক্তার একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকান, ‘ভারতের কেউ যে অলিম্পিকসের মতো বৈশ্বিক একটা আসরে দৌঁড়ে মেডেল জিততে পারে এটা অনেকেই ভাবতে পারতো না। পিটি উষা এটা তাদের বিশ্বাস করান যে ভারত ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে মেডেল জয়ের একদম কাছাকাছি আছে।’

পিটি উষার আগে ভারতের হকি দল অলিম্পিকসে সাফল্য পায়, ১৯৫২ সালে খাসাবা দাদাসাহেব যাদব স্বাধীন ভারতের হয়ে প্রথম পদক, ব্রোঞ্জ জেতেন। আর পিটি উষা ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে ৪০০ মিটার হার্ডলসে চতুর্থ হন।

তিনি না জিতেও এই বিশ্বাসটা তৈরি করতে পেরেছেন যে উপমহাদেশের কোনো মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা বা এশিয়ান অ্যাথলেটদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে ভালো করতে পারেন।

ডালিয়া আক্তারের মতে, বাংলাদেশে ঠিক যথাযথ অবকাঠামোটা না থাকলেও রোমান সানার মতো একক ইভেন্টে যারা সাফল্য পান তাদের জন্য বড় সম্ভাবনা আছে।

এটাকে ‘সত্যিকারের একটা আশা’ বলছেন তিনি।

‘কয়েক মুহূর্তের সঠিক অধ্যবসায়, নিশানা এবং একাগ্রতা- এতটুকু দূরত্ব বাংলাদেশের প্রথম অলিম্পিকস মেডেলের।’

আর্চারিতে বাংলাদেশ বড় স্বপ্ন দেখছে
টোকিও অলিম্পিক গেমসের আগে বাংলাদেশে অলিম্পিক বলতেই বলা হতো কেবলই অংশগ্রহণ, সেই দেশে একটা বড় বহর যাওয়া এবং কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত জমানো।

অনেক অ্যাথলেট আছেন যারা দেশে ফিরে বিদেশের অন্য অ্যাথলেটদের সাথে কাটানো মুহূর্তকেই বড় করে দেখেন, দেশ ছাড়ার আগেও সাক্ষাৎকারে অলিম্পিক গেমসে যাওয়া, অলিম্পিকস ভিলেজে থাকার আনন্দটাই মুখ্য থাকে।

বাংলাদেশের তীরন্দাজ রোমান সানা টোকিও অলিম্পিকসে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের গলফার সিদ্দিকুর রহমানের পর রোমান দ্বিতীয় অ্যাথলেট হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকসে খেলতে গেছেন।

রোমান সানা বলেন, ‘এখনই বলতে একটু ভয় হচ্ছে বটে। কিন্তু মনে মনে একটা পদকের আশা আমার আছে।’

রোমান সানার প্রথম অলিম্পিকস যাত্রা এটা, করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীতে ঘটতে থাকা নিয়মিত চক্রে যে বাধা পড়েছে তারই অংশ হিসেবে অলিম্পিক গেমসও পিছিয়েছে একটা বছর।

এতে অবশ্য রোমান সানার ক্ষতি হয়নি বলেন তিনি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে, যেখানে ব্যক্তিগত ও দলীয় ইভেন্টে সাফল্য পেয়েছেন।

আর্চারির রিকাভ ইভেন্টে রোমান সানা বিশ্বের সেরাদের একজন। মে মাসের তালিকা অনুযায়ীও এই ইভেন্টে রোমান বিশ্ব র‍্যাংকিয়ের ১০ নম্বরে ছিলেন।

আর বিশ্ব আর্চারির সামগ্রিক র‍্যাংকিংয়ে রোমান সানার অবস্থান ২৫তম।

এবারই প্রথম অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ, রোমান সানার ভেতর আশা এবং রোমাঞ্চ দুটিই লক্ষ্য করা গেছে, অলিম্পিকের আগে আয়োজক কমিটির পাঠানো নানা সামগ্রী হাতে পাওয়ার পর থেকেই তিনি অনুভব করছেন এসে গেছে সেই বহুল অপেক্ষার ক্ষণ।

বাংলাদেশের হয়ে প্রথম অলিম্পিকস পদক তিনিই আনার বিষয়ে কতোটা আত্মবিশ্বাসী তিনি, এই প্রশ্ন করতেই বিনয়ের সাথে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, ‘দেখেন এটা আমার প্রথম অলিম্পিক, এটায় যাওয়াটা আমার জন্য স্বপ্নের মতো। একদম পদক পাবোই এটা বলে যাওয়াটা ঠিক হবে না। তকে মনের ভেতর ভেতর তো ইচ্ছাটা থাকেই, যেহেতু যারা আমার প্রতিপক্ষ তাদের সাথে আমার আগে বড় প্রতিযোগিতায় মেডেল আছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা পদক গলায় ঝুলবে এটা সবাই আশা করেন।’

এখন পর্যন্ত ছয়টি আর্চারি বিশ্বকাপ খেলেছেন রোমান সানা, এটা তাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেয় বলে জানান তিনি।

তবে বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে ঠিক কিন্তু বিশ্বে যেসব দেশ আর্চারির শীর্ষে যেমন নেদারল্যান্ডস, আমেরিকা, চীন, ভারত, তুরস্ক এসব দেশের আর্চারির কাঠামো ও পরিকল্পনা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে, বলছেন রোমান সানা।

‘ওরা খেলে ১২ মাসে ১২টা টুর্নামেন্ট। আমরা যে ২টা খেললাম সম্প্রতি এর মধ্যে ওরা ৫টা খেলে ফেলেছে।’

২০১৯ বিশ্ব আর্চারির রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন রোমান সানা, ২০২১ সালে দ্বৈততে তিনি আর দিয়া সিদ্দিকী জেতেন রৌপ্য।

দিয়াও যাচ্ছেন টোকিও অলিম্পিক গেমসে। সরাসরি না হলেও তিনিও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন চলতি বছরের মে মাসে। সুইজারল্যান্ডের লসানে বিশ্ব আর্চারি ইভেন্ট সেখান থেকেই পেয়েছেন অলিম্পিক খেলার ছাড়পত্র।

দিয়া সিদ্দিকী জানান, তিনি বেশ নির্ভার অবস্থায় আছেন এখন। খেলাটা যেহেতু একাগ্রতার তাই কোনো দুশ্চিন্তা করার প্রশ্নই আসে না, বলছেন দিয়া।

‘সাধারণতই খেলাটা মানসিক চাপের, তাই টেনশন করার কোনো কারণ নেই। এখন আমি জানি আমাদের লেভেলটা কোথায় কোথায় কতটুকু ঘাটতি, নিজের লেভেল থেকে কতোটা ভালো করলে জয় পাওয়া সম্ভব।’

দিয়া আশাবাদ, নিজের সেরাটা দিতে পারলে মেডেল সম্ভব এখন।

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ মেডেল পাবে কি পাবে না সেটা এখন প্রশ্ন না, যেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এবারে অলিম্পিকসে খেলবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা সেটা অনেক অ্যাথলেটকে পথ দেখাবে দেশের প্রতিনিধি হয়ে বড় স্বপ্ন দেখার।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post অলিম্পিকের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে অলিম্পিক লরেল পেলেন ড. ইউনূস
Next post চলে গেলেন ফকির আলমগীর, প্রবাস বাংলার শোক প্রকাশ
Close