বর্তমানে দেশ একটি ভয়াবহ সংকটের দিকে যাচ্ছে। এই মুহুতে রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে দেশকে আরো ঝুঁকিতে ফেলছে। তাই দেশ ও দেশের জনগণের মঙ্গলের জন্য আগামী ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে রাজনৈতিক সকল দলগুলোর মধ্যে কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, যাতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতেআরে। এই ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে নতুন গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার।
কারন দেশের জনগন এখন আর পুরোনো রাজনীতি চায় না।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে “জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রেডিসন ব্ল হোটেলে আয়োজিত এ বৈঠকের আয়োজন করে ফাউন্ডেশন ফর স্ট্রেটেজিক এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর।
বৈঠকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি, গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সর্বস্তরের জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা।
বক্তারা বলেন, জাতীয় ঐক্য নষ্ট করার জন্য অতীতে নানা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল গঠন করেছিল।
পরবর্তীতে তারা তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। দেশের মানুষ আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে ঐক্য গড়ে তুলেছিল, তা একসময় সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে সেই গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য ধরে রাখা। ক্ষুদ্র স্বার্থে বিভক্ত হলে পরাজিত শক্তি আবারো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।”
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা জাতি হিসেবে বরাবর গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি, সংগ্রাম করেছি এবং প্রাণ দিয়েছি, কিন্তু গণতন্ত্র চর্চা করার কোনো সুযোগ পায়নি। পাকিস্তান আমল থেকে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র বার বার ব্যাহত ও হরণ হয়েছে।
জুলাই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন গণতন্ত্রকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান না থাকার জন্যই কিন্তু আজকে এই দুর্দশায় আমাদের পড়তে হচ্ছে। আমাদের প্রধান দায়িত্ব হবে, আমরা যে যেখানে আছি যে অবস্থায় আছি সেখানে আমরা আমাদের দায়িত্বটা পালন করব। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করব।
অন্য এক বক্তার বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি আরো বলেন, এখন যত দ্রুত আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব ততই আমাদের মঙ্গল হবে। এবং তার মধ্য দিয়ে আমরা সেই যাত্রাটা শুরু করতে পারবো। এখানে অনেকেই হতাশার কথা বলেছেন। কিন্তু আমি হতাশার কিছু দেখি না।
‘বিএনপি সংস্কারের পক্ষে নয়’ – এমন বক্তব্যের বিরোধীতা করে মির্জা ফখরুল বলে, সংস্কারের সমস্ত যে উদ্যোগ এবং যে কাজ, এর শুরুটা বিএনপি করেছে। এখন সবাই কি সব বিষয়ে একমত হবে? যেমন আজকে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন এটা নিঃসন্দেহে অনেকেই আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন যে এটা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এখানেও দুটি মত থাকতে পারে। কিন্তু মূল কথাটা হচ্ছে, অতি দ্রুত একটা নির্বাচন দিয়ে জনগণের একটা পার্লামেন্ট করতে হবে। সেই পার্লামেন্ট জনগণের সমস্ত অমীমাংসিত ইস্যুগুলো আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট একটা পথ বাতলে দিতে পারবে। কারণ রাষ্ট্রের মালিক জনজন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এখানে আমরা কি জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনতা শুধু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ এর প্রেক্ষিতে আলোচনা করছি? নাকি আমরা সার্বিকভাবে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করছি। দেখুন জাতীয় ঐক্য নিয়ে যদি আমরা আবার বেশি বাড়াবাড়ি করি, আমার মাঝে মাঝে ভয় হয় আবার না আমরা বাকশাল করি বসি। বাকশালে তো তাই বলা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই মৌলিক বিষয়ের (ঐত্যমত্য) কথা বলেন। আমার কাছে যেটা মৌলিক বিষয়, সেটা কমিউনিস্ট পার্টির মৌলিক বিষয় নাও হতে পারে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটা কমিউনিস্ট পার্টি স্বাধীনভাবে নিজেদের কার্যকম পরিচালনা করে। ঐক্যমত কারো উপরে চাপিয়ে দেওয়াটা যায় না। আবার যারা ঐক্যমত নয়, তারাও একেবারে বিদ্রোহী হয়ে যাবেন এটাও আমি মনে করি না।
More Stories
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
ভারতে হাসিনার অবস্থান নিয়ে জয়শঙ্কর বললেন— সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লিতে অবস্থান করা নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী...
কেউ যেন আমাদের ওপর কোনো দাদাগিরি করতে না আসে: ডা. শফিকুর
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা ভয় করি শুধু আল্লাহ তায়ালাকে। বাকি যাদের কথা বলেন, তাদেরকে আমরা...
পারস্পরিক বোঝাপড়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে যাবে: প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয়...
ছাত্রশক্তির নেত্রী জেদনীকে বিয়ে করলেন এনসিপির হান্নান মাসউদ
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বিয়ে করেছেন জাতীয় ছাত্রশক্তির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামলী...
