Read Time:5 Minute, 45 Second

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার নির্মম আঘাতে নিহতদের স্মরণে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রোববার (২৬ অক্টোবর) জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে মহানগরী, জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল এবং সকল পর্যায়ে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০০৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে, চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সারাদেশে লগি-বৈঠা দিয়ে তাণ্ডব চালায়। সেদিন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে জনসভার স্টেজ নির্মাণের কাজ চলছিল। হঠাৎ ১৪ দলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা গোটা পল্টন এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর লগি-বৈঠা, লোহার রড ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

তিনি আরও বলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুরু হলে চারদিক থেকে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে জনসমাবেশের দিকে অগ্রসর হয়। সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন আমীরে জামায়াত ও শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (রহি.)। জনসভায় উপস্থিত জনগণ ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর আক্রমণ করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। ঐ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্টন এলাকা লগি-বৈঠাধারীদের সন্ত্রাসী তাণ্ডবে এক রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত হয়।

তিনি বলেন, তাদের হামলায় ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হন এবং আহত হন সহস্রাধিক নেতাকর্মী। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে মৃতদেহের ওপর নৃত্য করে বর্বর আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে-যা সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এই ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত মানবতাবিরোধী গণহত্যা।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ঐ দিনের ধারাবাহিকতায় তারা দেশে সন্ত্রাসী রাজনীতির সূচনা করে, যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তখন থেকেই দেশকে রাজনীতিশূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকারসহ জনগণের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরের নারকীয় গণহত্যার সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের রক্ষা করে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ তীব্র গণআন্দোলনের মুখে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই পটপরিবর্তনের ফলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের জনগণের দাবি-অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পুনরায় সচল করে তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২৮ অক্টোবরে যারা নিহত হয়েছেন আমি তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করার জন্য মহান রবের নিকট দোআ করছি। সেই সাথে যারা আহত ও পঙ্গু হয়ে এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post দুর্নীতি করলে উপদেষ্টাদেরও বিচার হবে: অলি আহমদ
Next post ‘এনসিপির অনেক বক্তব্য আমরাও ধারণ করি’
Close