Read Time:6 Minute, 33 Second

শুধু একাত্তর না, সাতচল্লিশ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ‘ভুল’ করে থাকলে তার জন্য শর্তহীনভাবে ক্ষমা চাইছে জামায়াত। সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান দলের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতের বিষয়টা যখনই আসে তখনই একাত্তরের বিষয়টা চলে আসে। তাহলে কি একাত্তরে জামায়াতের কোনো ভূমিকা ছিল না? অবশ্যই ছিল। জামায়াত তখন ফিল করেছিল পাকিস্তান ইউনাইটেড থাকা দরকার। তখন আওয়ামী লীগের বহু লিডার পাকিস্তান সরকারের আন্ডারে চাকরি করেছিল। এমনকি আওয়ামী লীগের লিডার পরিবারের অনেকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রেশন নিয়েছে। বেনিফিট নিয়েছে। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। বিপদের সময় এটা সরকারের দায়িত্ব। নাগরিকদেরকে দেখা- দেখেছে। সে কোন দলের, এটা আমাদের দেখার ব্যাপার না। সেগুলো ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ৯০ ভাগ জায়গায় পাকিস্তানের পতাকা উড়েছে। অফিস আদালতে পাকিস্তানের নামে সবাই চাকরি করেছে। ১৫ তারিখ থেকে এই সিনারি পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে গেছে। পরবর্তী দুই দিনে ওই পতাকাও নেমে গেছে। চাকরিও বন্ধ হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে যারাই কাজ করেছেন, তারা পাকিস্তানকে মেনে নিয়ে কাজ করেছে। এখন এটা বলতে পারেন জনপ্রত্যাশার বিরুদ্ধে, জনপ্রত্যাশা ছিল যে পাকিস্তানের শাসকরা চলে যাক। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাক। জামায়াত এটাকে সম্মান করল না কেন? এটা একটা লেজিটিমেট প্রশ্ন। করলে ভালো হত, করা উচিত ছিল; এ ব্যাপারে আমার কোনো দ্বিমত নাই। বাট এই আনসারের উপযুক্ত ব্যক্তিটা আমি না। কারণ আমাদের যে সমস্ত নেতৃবৃন্দ তখন যারা ছিলেন, কোন প্রেক্ষাপটে তারা কোন ডিসিশন নিতে বাধ্য হয়েছেন—সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তাদের জীবদ্দশায় এই সমস্ত প্রশ্নের বহুবার উত্তর তারা দিয়েছেন।’

‘এখন জাতির কিছু কিছু লোক বলতো যে, ধরে নিলাম যে আপনারা স্পেসিফিক কোনো ক্রাইম করেন নাই, তার পরেও আপনাদের পলিটিক্যাল এই ডিসিশনটা জাতি মেনে নেয় নাই। আপনারা তো একটা অ্যাপোলজি দিলেই পারেন। এই অ্যাপোলজি আমরা মিনিমাম তিনবার দিয়েছি। প্রফেসর গোলাম আজম সাহেব দিয়েছেন, মাওলানা মতিউর রহমান সাহেব দিয়েছেন এবং আই মাইসেলফ, আমি দিয়েছি’- বলেন জামায়াত আমির।

তিনি বলেন, ‘এই কিছুদিন আগে এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেব যখন ফ্রি হলেন জেল থেকে, তখন আমি বলেছি, ‘শুধু একাত্তর না, সাতচল্লিশ সাল থেকে শুরু জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা কেউ যদি কোনো কষ্ট পান; কারও যদি কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে; আমি সব ব্যক্তি এবং সংগঠনের পক্ষে নিঃশর্তে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই, আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।’

আজকের দিন পর্যন্ত আমরা ভুল করি নাই-এ কথা বলব কীভাবে- উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘আমরা মানুষ, আমাদের সংগঠন একটা মানুষের সংগঠন; আমাদের একশটার মধ্যে ৯৯টা ডিসিশন সঠিক, একটা তো বেঠিক হইতে পারে। সেই বেঠিক একটা ডিসিশনের জন্য আমার জাতির তো কোনো ক্ষতিও হতে পারে। তাহলে সেই ক্ষেত্রে আমার কোনো ডিসিশনে জাতির ক্ষতি হলে আমার মাফ চাইতে অসুবিধা কোথায়? এখন মাফ চাওয়ার পরে বলে যে, এই ল্যাঙ্গুয়েজে চাইলে হবে না, ওই ল্যাঙ্গুয়েজে চাইতে হবে। … বিনা শর্তে মাফ চাইলাম, কোনো শর্তও দিলাম না; তারপর আর বাকি থাকল কোনটা, এটা তো বুঝি না।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আবার প্রকাশ্যে বলে গেলাম, সাতচিল্লশ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যে যেখানে কষ্ট পেয়েছেন, আমরা বিনা শর্তে যারা কষ্ট পেয়েছেন, তাদের কাছে মাফ চাই। এটা গোটা জাতি হলেও চাই, ব্যক্তি হলেও চাই। কোনো অসুবিধা নাই। আমি এ কথা জীবনে বলি নাই, আমার কোনো সহকর্মী বলেন নাই, আমার সিনিয়র যারা ছিলেন, তারা বলেন নাই যে—আমরা সকল ভুলের ঊর্ধ্বে। কোনো দল যদি দাবি করে যে তারা সকল ভুলের ঊর্ধ্বে—অবশ্যই জাতি এটা মানবে না।’

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জানা-অজানা, যত ভুল হয়েছে; এই ভুলগুলো যারা শুধরে দিয়েছেন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আর এই ভুলের দ্বারা যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোন, আমরা তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আর কিছু বলার আছে বলেন? দি ইজ ভেরি ক্লিয়ার অ্যান্ড লাউড।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না নির্বাচন কমিশন: সিইসি
Next post দুটি আইন চূড়ান্ত, তিনটি নীতিগতভাবে অনুমোদন
Close