Read Time:5 Minute, 13 Second

রাষ্ট্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) প্রতিষ্ঠা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিরোধী মতের ব্যক্তিদের ফোনে আড়ি পাতা হতো। সেই সংস্থাই পরবর্তীতে আড়ি পেতেছিল ক্ষমতচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের ফোনালাপে। এসব কল রেকর্ডে উঠে এসেছে জুলাই আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া শেখ হাসিনার নানা নির্দেশনা।

সাবেক মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস. এম. মাসুদ কামালের সঙ্গে তার ফোনালাপে এসব নির্দেশনার বিষয়টি উঠে এসেছে।

জুলাই আন্দোলনের সময় এই তিনজনের সঙ্গে করা শেখ হাসিনার ফোনালাপগুলো গোপনে রেকর্ড করেছিল এনটিএমসি।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এমন তথ্য প্রকাশ করেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চতুর্থ দিনের মতো যুক্তিতর্কে অংশ নিয়ে বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালকে এ তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপগুলো উদ্ধার করা হয়েছে এনটিএমসি থেকে। এনটিএমসিতে যারা সার্ভিল্যান্সের (নজরদারি) দায়িত্বে নিয়োজিত তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যাদের কথোপকথন হয়েছে তাদেরকে এই সার্ভিল্যান্সের আওতায় এনেছিলেন। রেকর্ড করা হয়েছিল গোপনে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এসব ফোনালাপ রেকর্ড এনটিএমসি থেকে উদ্ধার করেছেন। যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এসব ফোনালাপ রেকর্ড হয়েছে, সেহেতু এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালকে বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনটিএমসি থেকে যেহেতু এসব রেকর্ড উদ্ধার করা হয়েছে, সেহেতু এগুলো অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। এরপরও ফোনালাপের কণ্ঠস্বরগুলোর ফরেনসিক টেস্ট করা হয়েছে।

সিআইডি কর্তৃক করা টেস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এগুলো শেখ হাসিনা, ইনু, তাপস ও মাসুদ কামালের। এগুলো এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দিয়ে বানানো নয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও বিবিসি এসব ফোনালাপ নিয়েও ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে। তারা নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দিয়ে এ ফোনালাপগুলো পরীক্ষা করেছে।

তারাও বলেছে, এসব ফোনালাপ এআই-জেনারেটেড নয়।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করা ও দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। সেসব হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের ওপর।

তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া চিঠির প্রেক্ষিতে র‌্যাব ও পুলিশ জানিয়েছে, আন্দোলনের সময় ৩৬ বার ফ্লাই করেছে হেলিকপ্টারগুলো। এগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর রোডসহ বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে উড্ডয়ন করেছে।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে চিফ প্রসিকিউটরকে সহায়তা করেন, প্রসিকিউটর গাজী এম. এইচ. তামিম। বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করবেন চিফ প্রসিকিউটর।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post হাসিনার ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ’ প্রমাণিত হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর
Next post সবাইকে জুলাই সনদ সইয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হওয়ার আহ্বান
Close