Read Time:4 Minute, 37 Second

গত বছরের জুলাই গণআন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসকদের উদ্দেশে ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ (ছাড়পত্র না দিলে চিকিৎসা নয়) নির্দেশ দেন—এটি তিনি নিজ কানে শুনেছেন।

সোমবার (৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার দ্বিতীয় দিনে সাক্ষ্য দিতে এসে এসব বলেন আহত শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান।

সাক্ষ্যে ইমরান জানান, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে তাঁর বাঁ হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। এরপর তিনি আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তিনি বলেন, “২৬ অথবা ২৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে শেখ হাসিনা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন। তিনি আমার পাশে এসে দাঁড়ান, আমি তাঁকে ‘ম্যাডাম’ বললে তিনি বলেন, ‘আপা বলো’। এরপর তিনি জানতে চান আমি কোথায় পড়ি, হলে থাকি কি না, কেন থাকি না। যখন তিনি বুঝতে পারেন আমি আন্দোলনকারী, তখন জিজ্ঞেস করেন, পুলিশ আমাকে গুলি করেছে কি না। আমি বলি, হ্যাঁ, পুলিশের পোশাক পরা কেউ গুলি করেছে।”

ইমরান বলেন, শেখ হাসিনা আরও কয়েকজন আহতের সঙ্গেও কথা বলেন। পরে যখন তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করছিলেন, তখন হেল্পডেস্কে দাঁড়িয়ে চিকিৎসকদের উদ্দেশে ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ নির্দেশ দেন—যা তিনি নিজ কানে শুনেছেন।

তখন তিনি এই কথার অর্থ না বুঝলেও, পরে বুঝতে পারেন। অস্ত্রোপচার বিলম্বিত হওয়া, বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে না পারা এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র না দেওয়া এসব কিছুই সেই নির্দেশনার প্রতিফলন ছিল বলে দাবি করেন ইমরান। তিনি বলেন, “আমার পা কাটার পরও আমাকে কারাগারে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল।”

তিনি এই ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দায়ী করেন।

এর আগের দিন, রোববার (৩ আগস্ট), মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে বক্তব্য দেন আহত আন্দোলনকারী খোকন চন্দ্র বর্মণ (২৩)। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশ ‘পাখির মতো’ গুলি চালিয়েছিল। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও শামীম ওসমানকে দায়ী করেন।

সোমবার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি করেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এবং আইজিপি মামুনের পক্ষে আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন ছিল গতকাল। সে দিনই খোকন চন্দ্র বর্মণ তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং সেদিনই তার জেরা সম্পন্ন হয়। মামলার পরবর্তী শুনানিতে আরও সাক্ষীর বক্তব্য গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়ে ভারত ইতিবাচক উত্তর দেয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Next post আগামী রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা
Close