Read Time:5 Minute, 9 Second

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় মৌলিক সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাব আসলেই বিএনপি ও তাদের কয়েকটি মিত্র দল দ্বিমত পোষণ করে আলোচনায় বাধা দিচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার ১৪তম দিনের শেষে সাংবাদিকদের এ অভিযোগ করেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘মৌলিক সংস্কারের মোটাদাগের যে বিষয়গুলো আছে, সেই প্রশ্নটা উত্থাপিত হলেই বিএনপির তরফ থেকে এবং তাদের সঙ্গে আরও কতিপয় দল সেখানে বাধা তৈরি করছে। তারা ঐকমত্যের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। সেই এজেন্ডাগুলো যাতে ঐকমত্যের আলোচনার মধ্যেই না থাকে, সে ধরনের একটা পরিবেশ (তারা) এখানে তৈরি করার চেষ্টা করছে।’

আখতার হোসেন জানান, সংসদের উচ্চকক্ষে ‘প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর)’ পদ্ধতির প্রস্তাব বিএনপি ও কয়েকটি দল সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ এনসিপির মতে, ১ শতাংশ ভোট পেলেও দলগুলো উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব পেলে ভিন্নমতের চর্চা ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির সুযোগ বাড়বে।

এনসিপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা মৌলিক সংস্কারের রূপরেখায় ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ, উচ্চকক্ষের গঠন ও কার্যাবলি এবং সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আখতার হোসেন বলেন, ‘সংস্কার মানে শুধু নমনীয় বিষয়ে একমত হওয়া নয়; রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। বিএনপির মতো দলগুলো মৌলিক সংস্কারের বদলে সংখ্যার হিসাব কষে এড়িয়ে যেতে চায়।’

সংসদীয় কাঠামোতে উচ্চকক্ষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে শুধু নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নয়, উচ্চকক্ষেও একই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হবে। বিশেষ করে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং ৫৮ ক, যেগুলো রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ; সেগুলোর পরিবর্তনে গণভোটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে এনসিপি।

আখতার হোসেন বলেন, কিছু দল মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলোকে সংখ্যায় ফেলে বলছে, সব মানতে হবে কেন? কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকেই খর্ব করে। তিনি বলেন, ‘যেসব ছোটখাটো বিষয়ে সব দল একমত, তা নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু যখন ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, উচ্চকক্ষের ক্ষমতা—এসব মৌলিক বিষয়ে আলোচনা হয়, তখনই বিএনপি পিছিয়ে আসে।’

এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘সংস্কার বলতে আমরা বুঝি রাষ্ট্রের কাঠামোগত রূপান্তর—ক্ষমতার ভারসাম্য, ন্যায্য নিয়োগ, আইন প্রণয়নে সংসদের উভয় কক্ষের অংশগ্রহণ এবং জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতের প্রতিফলন। এসব বাদ দিয়ে কেবল কয়েকটি নমনীয় বিষয়ে একমত হওয়া প্রকৃত সংস্কারের বিকল্প হতে পারে না।’

আজকের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীরা মাল্টিপল ভিসা পাবেন
Next post তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হস্তক্ষেপ বন্ধে গণভোট চায় বিএনপি
Close