Read Time:5 Minute, 47 Second

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি একটি সুষ্ঠু উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং আগামী মাসে আমরা ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘‘জুলাই সনদ’’ ঘোষণা করব।’ আজ মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার নতুন হাইকমিশনার সুসান রাইল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানান।

সাক্ষাৎকালে অস্ট্রেলিয়ার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সুসান রাইল ভিসার আবেদন এখন অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ৬৫ হাজারর বেশি বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং এর পাশাপাশি আরও ১৪ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়ন করছেন।

সাক্ষাৎকালে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, নির্বাচন প্রস্তুতি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অস্থির সময়ের পর আমরা এখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রয়েছে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক সংস্কারে—এগুলোই একটি শক্তিশালী বাংলাদেশের ভিত্তি। আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি একটি সুষ্ঠু উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং আগামী মাসে আমরা ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘‘জুলাই সনদ’’ ঘোষণা করব।’

তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়েও কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বহু বছর পর প্রথমবারের মতো জনগণ, বিশেষ করে প্রথমবার ভোটার হওয়া তরুণেরা স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। আমি বিশ্বাস করি এটি একটি উৎসবমুখর ও আশাব্যঞ্জক সময় হবে।’

নির্বাচনী সহায়তা নিয়ে সুসান রাইল জানান, অস্ট্রেলিয়া ইউএনডিপির মাধ্যমে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও পরিচালনাগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করবে।

বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে রাইল বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ বছরে বার্ষিক গড়ে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং প্রবাসীদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন।

তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রাম বাংলাদেশে তিন হাজারের বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যারা দেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।’

এর জবাবে অধ্যাপক ইউনূস অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে অধ্যাপক ইউনূস এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে রাইল বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি মূল অংশীদারদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে, যার ফলে ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্য বাংলাদেশে মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে পরিস্থিতি অনুকূল হলে, অস্ট্রেলিয়া নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের আশায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’

সাক্ষাৎকালে এসডিজি-বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম উপস্থিত ছিলেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post এস আলমের আরও ২০০ একর জমি জব্দের আদেশ
Next post সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড়, বেড়েছে ২৩ গুণ
Close