Read Time:8 Minute, 29 Second

মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে আরও ৬৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। পরে বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে দেখতে পেয়ে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তাদের বেশিরভাগের বাড়ি কুড়িগ্রামে। অনেকেই কাজের জন্য ভারতে গিয়েছিলেন।

মৌলভীবাজারের জুড়ি ও কমলগঞ্জ উপজেলার তিনটি সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার ২৯ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় বিএসএফ। জুড়ির রাজকি ও কমলগঞ্জের বিওপির সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজকি সীমান্ত দিয়ে নারী পুরুষ ও শিশুসহ ১০ জনকে পুশইন করা হয়। একই সময়ে কমলগঞ্জ উপজেলার বাগিছড়া ও চাম্পাপাড়া সীমান্ত দিয়ে নারী পুরুষ ও শিশুসহ আরও ১৪ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। তাদের আটক করে স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে যায় বিজিবি।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তারা সবাই বাংলাদেশের কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তাদের জিজ্ঞেসাবাদ শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে। কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল তারা। বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো জাকারিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিজিবি রাজকি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবুল হাশেম ১০ জন আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সীমান্তে আবারও বিএসএফ ২২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার রেমা বিওপির আওতাধীন ডেবরাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের টহল দল ঘটনাস্থল থেকে ৯ জন পুরুষ, ৮ জন নারী এবং ৫ জন শিশুকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার মৃত ওসমান মিয়ার ছেলে জোহর আলী (৮০), তার স্ত্রী আছিয়া বেগম (৬০), তাদের ছেলে মো. আরিফ (১৯), মো. আসাদুল (৩০), একই উপজেলার মন্ডলগড়া এলাকার মৃত আকবর আলীর ছেলে মো. আশরাফুল (৩৫), তার স্ত্রী মোছা. জাহানারা (৩০), মেয়ে মোছা. কাকলী (১০) ও মোছা. আশরাফী (৬), কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার স্বাধীর গ্রামের মৃত নবাব উদ্দিনের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম (৩৫) ও তার স্ত্রী মোছা. আফরোজা (২৪), ফুলবাড়িয়া উপজেলার মৃত শাহনবী এলাকার মো. আ. হামিদ (৪২), মোছা. রেহানা বেগম (৪০), তাদের ছেলে মো. সুজন (২২), মেয়ে মোছা. হাসি খাতুন (১৮), একই এলাকার মো. সুজন মিয়ার স্ত্রী মোছা. পারভীন বেগম (২১), আব্দুল হামিদের ছেলে মো. শাহিনুর (৩), মো. হাসানুর (৭), ফুলবাড়িয়া উপজেলার মৃত স্বরেশ আলীর ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৫০), তার স্ত্রী মোছা. ফাতেমা বেগম (৪৭), ছেলে মো. ইমরান হোসেন, মো. ইমরান হোসেনের স্ত্রী মোছা. সাবিনা (২০), একই উপজেলার কাশিপুর এলাকার ইমরান হোসেনের ছেলে (২২) মো. ইসমাইল হোসেন (২)।

বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিলুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনার তিন দিন আগে ২৬ মে একই উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ১৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছিল।

ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্তে ১৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে বিএসএফ। শুক্রবার ভোরে ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করা হয়। শুক্রবার দুপুরে ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বিজিবি জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টায় ছাগলনাইয়া বিওপির টহল দল মথুয়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ঘরের মধ্যে শিশুসহ ১৩ জনকে দেখে সন্দেহ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলা এবং ৬ জন শিশু রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা বিভিন্ন সময় ইট ভাটার কাজ করার জন্য ভারতে যান। ৩০ মে রাত দেড়টার দিকে সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তাদের প্রথমে হাত ও চোখ বেঁধে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যায়। পরে হাত ও চোখের বাঁধন খুলে বাংলাদেশে পুশইন করে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও অন্ধকারের কারণে তারা মথুয়া এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে অবস্থান করে। তাদের সকলেই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা। তারা হলেন, কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী থানার নাগদেহ গ্রামের মো. হোসেন আলীর ছেলে মো. আলতাফ (৩৯), আলতাফ হোসেনের স্ত্রী মোমিনা বেগম (৩২)। একই পরিবারের অন্য পাঁচজন হলেন, ফুলবাড়ী থানার পানি মাছ কুটি গ্রামের জকিরল হকের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম (৩৮), মো. আমিনুলের স্ত্রী উর্মি বেগম (২৯), মো. আমিনুলের ছেলে ওহিদুল ইসলাম (১১), মো. রেজাউল হক (৯), আরিফা আক্তার (৩)। একই পরিবার আরও ৫ জন হলেন, ফুলবাড়ী থানার পানি মাছ কুটি গ্রামের জকিরুল হকের ছেলে মোমিনুল হক (৩৫), মোমিনুল হকের স্ত্রী শেফালী বেগম (৩০), মোমিনুল হকের মেয়ে মনিজা আক্তার (১৩), মনজু আক্তার (১০), মোমিনুল হকের ছেলে রমজান আলী (৩ মাস)। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার ছোট ধনিসরকাটা গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে মো. ইশরাক হোসেন (৪০)।

ফেনী ৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডারের কাছে মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করল ভারত
Next post পৃথিবীকে রক্ষায় তরুণদের ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান ড. ইউনূসের
Close