নারায়ণগঞ্জ আদালতের এজলাসে প্রবেশমুখে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মারধরের শিকার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত হাফেজ মো. সোলাইমান (১৯) হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানির জন্য এদিন তাকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুদ্দিন কাদিরের আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান জানান, এই হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুনানি শেষে আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুরে আদালতে তোলার সময় বাইরে বিএনপন্থি আইনজীবীরা আনিসুল হকের ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দেন। শুনানি শেষে এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় প্রবেশমুখে তাকে কিল-ঘুষি দেন তারা। এ সময় আনিসুল হকের মাথায় হেলমেট ছিল। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা সাবেক এ আইনমন্ত্রীকে নিয়ে দৌঁড়ে আদালতের বারান্দা ত্যাগ করেন এবং একইভাবে তাকে দ্রুততার সঙ্গে প্রিজন ভ্যানে তোলেন। সংবাদকর্মীদের ধারণ করা ভিডিওতে এজলাসের প্রবেশমুখে আনিসুল হককে কিল-ঘুষি মারতে দেখা যায়। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আদালত পুলিশ হামলাকারীদের বাধা না দিয়ে বরং আনিসুল হককে নিয়ে দৌড়াতে থাকেন। দ্রুত দৌড়ে তাকে প্রিজন ভ্যানে তুলে দেন।
প্রিজনভ্যানে থাকা অবস্থায়ও বাইরে আদালত প্রাঙ্গণে ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, আনিসুল হকের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন একদল আইনজীবী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুনানির আগে ও পরে বিএনপির মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবির এবং আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান।
আনিসুল হকের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, ‘এজলাস থেকে বের হওয়ার পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে আসামিকে প্রিজন ভ্যানে তোলে। কিন্তু সেখানে কেউ চর-থাপ্পর দিয়েছে- এমনটা আমার নজরে পড়েনি।’
তবে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবির বলেন, ‘আনিসুল হককে উৎসুক জনগণ মারধর করেছে। এতে বিএনপন্থি আইনজীবীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুরের মিরাজ উদ্দিনের ছেলে সোলাইমান গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত ২২ আগস্ট সোলাইমানের ভগ্নিপতি শামীম কবির বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৫১ জনকে মামলায় আসামি করা হয়। এছাড়া, মামলায় রয়েছে অজ্ঞাত আসামি।
More Stories
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
ভারতে হাসিনার অবস্থান নিয়ে জয়শঙ্কর বললেন— সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লিতে অবস্থান করা নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী...
কেউ যেন আমাদের ওপর কোনো দাদাগিরি করতে না আসে: ডা. শফিকুর
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা ভয় করি শুধু আল্লাহ তায়ালাকে। বাকি যাদের কথা বলেন, তাদেরকে আমরা...
পারস্পরিক বোঝাপড়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে যাবে: প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয়...
ছাত্রশক্তির নেত্রী জেদনীকে বিয়ে করলেন এনসিপির হান্নান মাসউদ
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বিয়ে করেছেন জাতীয় ছাত্রশক্তির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামলী...
