Read Time:7 Minute, 13 Second

নতুন কৌশল। আওয়ামী লীগ থাকবে, নেতৃত্বে শেখ হাসিনা থাকবেন না। তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতারাও বাদ যাবেন। আওয়ামী লীগের পরিচিত কিছু নেতা-নেত্রীকে সামনে রেখে নব্য আওয়ামী লীগ বা তথাকথিত পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগকে বাজারে আনার একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশে বেশ এগিয়েছে।

আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব এই প্রয়াসকে ‘প্রতারণা’ ও তাদের ‘দলকে ধ্বংস করার চক্রান্ত’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। ভারতের কূটনীতিকদের একাংশও মনে করেন, হাসিনাকে বাদ দিয়ে নব্য আওয়ামী লীগ গঠিত হলে দিল্লির পক্ষে তা সুখকর হবে না। কারণ এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশের যে সব আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীর নাম উঠে আসছে, তাদের ভাবমূর্তি আদৌ পরিচ্ছন্ন নয়, তার ওপরে পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে কয়কে জনের।

ভারতের এক সাবেক কূটনীতিকের কথায়, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দিল্লির কিছু করণীয় নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক ভাবে ভারতের বন্ধু ও আস্থাভাজন রাজনৈতিক শক্তি। তার নেতৃত্বও পাকিস্তান-বান্ধবদের হাতে চলে গেলে ভারতের পক্ষে তা বিপর্যয়ের চেয়ে কম কিছু হবে না।”

জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের সদ্য গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির (জাতীয় নাগরিক দল) নেতা হাসনাত আবদুল্লার একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে হইচই হয়েছিল বাংলাদেশে। সেই পোস্টে হাসনাত অভিযোগ করেছিলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জমান একান্ত বৈঠকে তাদের বলেছিলেন— প্রাক্তন স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী, ঢাকার প্রাক্তন মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস, প্রাক্তন সংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির’ নেতাদের নেতৃত্বে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের মেনে নিতে হবে। হাসনাত লেখেন, ‘আমাদের বলা হয়— রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবেন, হাসিনাকে অস্বীকার করবেন এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবেন এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবেন।’

আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলছেন, “হাসনাতের পোস্টের আগেই আমরা এই চক্রান্তের বিষয়টি জানতে পারি। নামগুলিও নতুন নয়। এই ভাবে তারা দেখাতে চায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেও অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে। তবে সেটা হবে প্রতারণা। মানুষকে এ ভাবে ভুল বোঝানো যায় না।”

এই নেতা বলেন, “২০০৬-এও সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের পরে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু নেতাকে নিয়ে একটা আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা করেছিল পশ্চিমি শক্তি। তা ব্যর্থ হয়। এ বারেও তাই হবে।”

ওই নেতার মতে, ভারতের কংগ্রেসের যেমন গান্ধী পরিবার, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকের কাছেও শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের উপরে অগাধ আস্থা ও ভরসা। রাজনীতিতে দুই পরিবারের ত্যাগ ও সাফল্য কম নয়। রাহুল গান্ধী যেমন ঠাকুমা ও বাবাকে হারিয়েছেন, শেখ হাসিনার বাবা-মা, ভাই-সহ গোটা পরিবার খুন হয়েছে।

ওই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “চক্রান্তকারীরাও জানে, হাসিনাহীন আওয়ামী লীগ টিকবে না।আদতে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য।”

কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা জানাচ্ছেন, আপাতত এই ‘রিফাইন্ড’ চক্রান্তই তাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, হাসিনার বিরুদ্ধে তোপ দাগলে তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হবে। এলাকায় ফিরে নির্বাচনে অংশ নিতেও দেওয়া হবে। অন্যথায় তাদের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার। কয়েক জন বিএনপি নেতা এবং সেনাদের বশংবদ ব্যবসায়ী ফোন করে এই প্রস্তাব দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

হাসিনা-ঘনিষ্ঠ এই নেতা জানাচ্ছেন, কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া কিছু নেতাও এই দিকে ঝুঁকছেন বলে তারা খবর পেয়েছেন। এরা অন্যদেরও টানতে চেষ্টা করছেন।

ওই নেতা বলেন, “যাঁদের ‘ক্লিন’ বলা হচ্ছে, তাদের কেউই পরিচ্ছন্ন নন। এদের অনেকে চিন বা পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা করেন। সে সব বাঁচাতেই দলের বিরুদ্ধে চক্রান্তে রাজি হয়েছেন।”

কী ভাবে এই চক্রান্তের মোকাবিলা করছে আওয়ামী লীগ? দলের ওই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানাচ্ছেন, জেলায় জেলায় ভার্চুয়াল মিটিং করছেন নেতৃত্ব। সেই মিটিংয়ে শেখ হাসিনা নিজে যুক্ত হচ্ছেন। ঘণ্টা কয়েক ধরে তিনি কর্মীদের কথা শুনছেন।

তাদের বলছেন, “এদের দিন ফুরিয়ে আসছে। আমি যখন বেঁচে রয়েছি, শীঘ্রই ফিরব। কর্মীদের ওপরে হওয়া প্রতিটি নির্যাতনের বিচার করব।” ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৩টি জেলার কর্মীদের সঙ্গে এই বৈঠক শেষ হয়েছে। হাসিনা বলছেন, “আমি দেশ ছাড়তে চাইনি। ইস্তফাও দিইনি। আমাকে জোর করে বিমানে তুলে দেশছাড়া করা হয়েছে। চক্রান্ত করে আমার সরকার ফেলা হয়েছে। এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যে যাই বলুক নির্বাচন জুন অতিক্রম করবে না: আইন উপদেষ্টা
Next post সরকারের সংস্কার কাজে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
Close