Read Time:11 Minute, 12 Second

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান বা কবে দেওয়া হয়েছে বা কত বছর ধরে দেওয়া হয়েছে বাকি কোনো তথ্যই খোলাসা করেননি মার্কিন প্রসিডেন্ট। ফলে দেশে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোয়াসা। বাংলাদেশে যে এনজিওগুলো মার্কিন অর্থায়নে প্রকল্প নিয়ে থাকে, তাদের বৈদেশিক অনুদানের হিসাব–নিকাশ করা শুরু হয়েছে। তবে মার্কিন সরকারের ফরেন অ্যাসিসটেন্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগী এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) বাংলাদেশে গর্ভনেন্স বা সুশাসনখাতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদান করেছে।

ইউএসএআইডি দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, দুর্যোগ ব্যস্থাপনা, শরণার্থীসহ অন্যান্য বিষয়ে সুশাসন, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তায় অর্থায়ন করে থাকে। আর তাদের অর্থায়নের আরেকটি খাত হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন। ফরেন অ্যাসিসটেন্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা হিসেবে ২৩০ মিলিয়ন, স্বাস্থ্য এবং জনসংখ্যায় ৬০ মিলিয়ন, কৃষিতে ৪১ মিলিয়ন, শিক্ষায় ৩৩ মিলিয়ন, প্রশাসনিক খরচে ২১ মিলিয়ন এবং অন্যান্য খাতে ২৮ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদান হিসেবে এসেছে। এখানে সুশাসনখাতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদানের কথা বলা রয়েছে।

ওয়েবসাইটটিতে সুশাসনখাতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদানের খাত ভিত্তিক খরচ ভাগ করে দেওয়া রয়েছে। এতে গর্ভমেন্ট অ্যান্ড সিভিল সোসাইটিতে ২১ মিলিয়ন এবং অন্যান্য সামাজিক অবকাঠামোতে ৭ দশমকি ৬ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদান বরাদ্দের তথ্য আছে। সামাজিক অবকাঠামোতে ৭ দশমকি ৬ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে কর্মসংস্থান তৈরিতে ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন এবং সামাজিক সুরক্ষায় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে।

গর্ভমেন্ট অ্যান্ড সিভিল সোসাইটিতে ২১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে মানবাধিকারে ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন, গণমাধ্যম ও অবাধ তথ্য প্রবাহে ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন, আইনি ও বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন, নির্বাচনে ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও সুশীল সমাজে ৯ লাখ ডলার এবং বিকেন্দ্রীকরণ এবং উপজাতির প্রতি সমর্থণে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদান হিসেবে দেখানো হয়েছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিওজিই এক্স হ্যান্ডলে বলেছে, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’ এ ২৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।

এরপর গত শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন এক সংস্থার কাছে গেছে, যে সংস্থার নাম আগে কেউ শোনেনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উল্লেখ করা ২৯ মিলিয়নই কি ফরেন অ্যাসিসটেন্টের ২৯ মিলিয়ন তা সমকাল নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে মার্কিন তহবিল পেয়ে থাকেন এমন কয়েকটি এনজিও সংশ্লিষ্টরা জানান, যে পরিমান অর্থের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তা কোনো একক প্রতিষ্ঠানে বা একভাগে বৈদেশিক অনুদান হিসেবে দেওয়াটা অস্বাভাবিক। মার্কিন অনুদানে চলা প্রকল্পগুলো কয়েক বছর ধরে হয় এবং এসব অনুদান ভাগে ভাগে প্রকল্পের অগ্রগতি হিসেবে এসে থাকে।

ইউএসএআইডি ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) ইন বাংলাদেশ’ অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান। আর এর বাস্তবায়নকারি প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২ মার্চে গ্রহণ করা হয়, যা শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে ১৭ জেলায় এটি বাস্তবায়ন হচ্ছিলো।

এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ৮৭টি ডোনার এজেন্সি ইউএসএআইডির ফান্ড নিত। তারা অন্যান্য লোকাল এনজিওর মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। আপাতত তাদের তিন মাসের ফান্ড স্থগিত করা হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে একটি এনজিওকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার খবরের বিষয়টি আমরা এর মধ্যেই যাচাই করেছি। এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও সক্রিয় কোন এনজিওর মাধ্যমে এসেছে- এমন কোন প্রমাণ আমরা পাইনি । যুক্তরাষ্ট্র সরকার কিছু টাকা আরও কিছু প্রক্রিয়ায় পাঠায়। সেভাবে কোন অর্থ এসেছে কি না তা আমাদের জানা নেই।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ইউএসএআইডির ফান্ড বন্ধের ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে। একই সঙ্গে বিশ্বে কিন্তু বিকল্প অর্থায়নের উৎসও কমে যাচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো অন্তর্মুখী হচ্ছে। বৈশ্বিক অবস্থাও ইতিবাচক নয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে একটি এনজিওকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি নতুন করে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি (ট্রাম্পের দাবি) একটি অস্বাভাবিক দাবি। আমার মনে হয় ইউএসএআইডির অর্থায়ন বাতিলকে বৈধতা দিতে এখানে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এভাবে কোনো সংস্থার অর্থ নেওয়ারই সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ২৯ মিলিয়ন ডলার যদি এমন কোনো সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে তাহলে সেটি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা। কারণ ১ ডলারই হোক আর ২৯ মিলিয়ন ডলারই হোক- সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোন অর্থ ছাড় হওয়া অসম্ভব। আর এককভাবে কোনো সংস্থার ২৯ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার খবরটিই অস্বাভাবিক।

নাম প্রকাশে অনচ্ছুক একটি এনজিওয়ের প্রধান নির্বাহী বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য ভবিষ্যতে সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করবে এবং এসব কর্মসূচি নিয়ে আস্থা হারানোর জায়গা তৈরি হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নিবন্ধন না থাকলে ইউএসএআইডি বা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের সরাসরি অর্থায়ন পাওয়া যায় না। আবার বাংলাদেশে কোনো এনজিও বিদেশি অর্থায়ন পেলে সেটি ছাড় করাতে এনজিওব্যুরোতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য জানানোর নিয়ম আছে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউএসএআইডির উচিত পরিষ্কার করে বলা যে কারা তাদের ফান্ড নিয়েছে। ফান্ড তো কেউ জোর করে আনেনি। যে পেয়েছে নিয়ম মেনেছে বলেই পেয়েছে। সেখান কোন ত্রুটি থাকলে সেই দায় তো যুক্তরাষ্ট্রের। সবাইকে বিব্রত না করে এটি তাদেরই পরিষ্কার করা উচিত।

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের টাকা বাংলাদেশে সরাসরি কেউ পায় না, বরং তাদের অর্থ আসে সেখানকারই কোন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে। তারা ঢাকায় অফিস নেয়। লোকাল পার্টনার ঠিক করে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। সে কারণে এখানকার কোন সংস্থার ২৯ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার দাবিটাই হাস্যকর। আবার বিভিন্ন কর্মসূচিতে যে টাকা তারা দেয় তার ৫০ শতাংশই আবার আমেরিকাতেই চলে যায়। তারপরেও কেউ এমন অর্থ পেয়েছে (ট্রাম্প যা দাবি করেছেন) কি-না সেটি কর্তৃপক্ষের তদন্ত করে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সারা পৃথিবীর বিপ্লবের প্রতীক এখন আবু সাঈদ: মাহমুদুর রহমান
Next post তথ্য উপদেষ্টা নাহিদের পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে যা জানা গেল
Close